বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১

'যার ঘরে পানি সে বোঝে জ্বালা'

কেশবপুর (যশোর) প্রতিনিধি
  ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
যশোরের কেশবপুরে বাড়ি-ঘরে বন্যার পানি প্রবেশ করায় সড়কের পাশে আশ্রয় নিয়েছে বেশ কিছু পরিবার -যাযাদি

'যার বাড়ি ঘরে পানি, সে বোঝে জ্বালা। অন্য কেউ বুঝবে না এ কষ্ট।' বন্যার পানি বাড়ি ঘরে ঢুকে পড়ায় যশোর-চুকনগর সড়কের পাশে আশ্রয় নেওয়া মধ্যকুল এলাকার রহিমা খাতুন এভাবেই তার মনের কষ্টের কথাগুলো জানান।

সম্প্রতি ভারী বৃষ্টি ও নদ-নদীর উপচেপড়া পানিতে কেশবপুর পৌরসভাসহ উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রাম পস্নাবিত হয়েছে। কেশবপুর পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যকুল ও হাবাসপোল এলাকা প্রায় এক মাস পস্নাবিত থাকায় মানুষ বাধ্য হয়েই যশোর চুকনগর সড়কের দুই পাশে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে টংঘর বেঁধে আশ্রয় নিয়েছেন।

কেশবপুরে সম্প্রতি টানা বৃষ্টি ও নদ-নদীর উপচেপড়া পানিতে পস্নাবিত হয়ে বন্যার সৃষ্টি হয়। এই পানি সরতে না পেরে এখন ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। জলাবদ্ধতায় উপজেলার ১০৪ গ্রাম পস্নাবিত হয়ে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দির শিকার হয়েছে। কেশবপুরের আপার ভদ্রা, হরিহর নদ ও বুড়িভদ্রা নদী পলিতে ভরাট হওয়ায় পানিপ্রবাহে বাধাগ্রস্ত হয়ে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পানি মানুষের বাড়ি ঘরে ঢুকে পড়ায় বাধ্য হয়েই উঁচু স্থানে আশ্রয় নিচ্ছেন।

সরেজমিন যশোর-চুকনগর সড়কের কেশবপুর মধ্যকুল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, প্রায় শতাধিক পরিবার রাস্তার দুই পাশে টংঘর বেঁধে রয়েছেন। রহিমা খাতুনের মতো ওই রাস্তার দুই পাশে আশ্রয় নিয়েছেন আব্দুল মজিদ, এনামূল হোসেন, শহীদ হোসেনসহ প্রায় শতাধিক পরিবার। অনেকেই বাড়ির গরু, ছাগল ও হাঁস-মুরগি নিয়ে রাস্তায় এসে উঠেছেন। মধ্যকুল এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান বলেন, গোয়াল ঘরে পানি ঢুকে পড়ায় তিনি গরু নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। গ্রামের শাহীনুর রহমান বলেন, তার সেঝ ভাই আলতাপ হোসেন মারা যাওয়ায় কবরস্থানে পানি থাকার কারণে উঁচু স্থানে নিয়ে কবর নিতে হয়েছে। গ্রামের অপর মৃত ব্যক্তি সিরাজুল ইসলামকে নৌকায় করে নিয়ে কবরস্থানের পাশে উঁচু স্থানে দাফন করতে হয়েছে।

সড়কের পাশে আশ্রয় নেওয়া এনামুল বলেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়েই সড়কের পাশে এসে থাকতে হচ্ছে। রাতে যখন গাড়ি চলাচল করে তখন টংঘরের অধিকাংশ মানুষের মধ্যে ভয়ের সৃষ্টি হয়। আশ্রয় নেওয়া টংঘর এলাকায় গাড়ি ধীরগতিতে চালানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এলাকার সচেতন মহল। আশ্রয় নেওয়া আব্দুল মজিদ জানান, রাতে টংঘর এলাকায় বৈদু্যতিক আলোর ব্যবস্থা থাকলে ভালো হতো। মধ্যকুল খানপাড়া এলাকার আব্দুস সেলিম বলেন, তার ঘরে প্রায় এক মাস ধরে পানি রয়েছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে সড়কের পাশে অন্যের একটি উঁচু ঘরে এসে আশ্রয় নিয়ে থাকতে হচ্ছে।

কেশবপুর পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন বলেন, মধ্যকুল সড়কের পাশে যারা আশ্রয় নিয়ে আছেন, তাদের জন্য দ্রম্নত আলোর ব্যবস্থা করা হবে।

এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সুমন সিকদার বলেন, আপার ভদ্রা, বুড়িভদ্রা নদী খননে এস্কেভেটর দিয়ে খনন কাজ চালানো হচ্ছে। দ্রম্নত এলাকা থেকে পানি নেমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে