টানা কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিপাত শেষে প্রকৃতিতে এখন শীতের আমেজ। এমন অনুকূল আবহাওয়ায় নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যগত ও রোলমডেল আগাম আলু চাষে ধুম পড়েছে।
উপজেলার একদম উঁচু সমতল ভূমির পানিনিকাশি বেলে দোআঁশ মাঠগুলোতে স্বল্পমেয়াদি ৫৫ থেকে ৬০ দিনে উত্তোলনযোগ্য সেভেন জাতের আগাম আলুর বীজ রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক।
মৌসুমের শুরুতে নতুন আলুর চাহিদা থেকে চড়া বাজারমূল্য পেয়ে দিগুণ লাভবান হওয়া যায়, এমন প্রত্যাশা তাদের। গেল কয়েক দিন আগে স্বল্পমেয়াদি আগাম আমন ধান ঘরে তুলে একই জমিতে আগাম আলুর বীজ বুননের জন্য হালচাষ, সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগ, হিমাগার থেকে নিজের সংরক্ষিত বীজ আলু সংগ্রহ ও রোপণে চলছে মহা কর্মযজ্ঞ।
সরেজমিন শুক্রবার বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, উৎসবমুখর পরিবেশে ভাগ্য পরিবর্তনের আশীর্বাদপুষ্ট আগাম আলু বুনন ও প্রস্তুতে মাঠের পর মাঠগুলো জমজমাট হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে সময়ের আগে এ অঞ্চলে আগাম আলু রোপণকে ঘিরে যেন প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে মাঠজুড়ে। এতে নজর কাড়ছে সবার।
এ সময় দেখা য়ায়, রণচন্ডি ইউপির কুটিপাড়া গ্রামের আলুচাষি, আব্দুল হাই ৪ বিঘা, হজরত আলী ৮বিঘা, সুজা মিয়া ৮ বিঘা, মোজাম্মেল ৫ বিঘা, ফরিদুল ৫ বিঘা জমিতে আগাম আলু বুননে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন।
তারা জানান, আগাম ধান কেটে আগাম আলু বুনছেন তারা। যার আলু যত আগে উঠবে সে কৃষক তত বেশি লাভবান হবেন। যা আগেভাগে আলু উত্তোলন করতে পারলে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি বাজার ধরতে পারবেন। স্বল্প সময়ে আলু ছাড়া অন্য কোনো ফসলে এত লাভবানও হওয়া যায় না। যা গত বছর ধান কাটার পর সেই জমির চাষাবাদকৃত আলু ক্ষেতে ৭৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে বিঘায় লাভ করেন ৪০-৫০ হাজার টাকার ওপরে।
তারা আরও জানান, 'এ অঞ্চলের ডাঙ্গা জমিগুলো একদম উঁচু এবং বালু মিশ্রিত। ভারী বৃষ্টিপাত হলেও তেমন কোনো ভয় থাকে না। আর পাশেই বিশাল বাফলার বিল থাকায় সব জমির পানি অনায়াসে সেখানে নেমে যায়। তাই আগেভাগে দিগুণ লাভের আশায় আগাম আলু বুনছি।'
বাহাগিলী ইউপির উত্তর দুরাকুটি হাড়িবেচাপাড়া গ্রামে আলুচাষি আব্দুল আজিজ ঢেমসা জানান, গত বছর তিনি ৮০ বিঘা জমিতে আলু বুনেন। প্রতি বিঘায় ফলন পান ৩০ থেকে ৩৫ বস্তা করে। যা উত্তোলন করে ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে খরচ বাদে অর্ধ কোটি টাকা আয় করেন। এবারও ধান কাটার পর ওই পরিমাণ জমিতে আলু বুননের প্রস্তুতি চলছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লোকমান আলম বলেন, চলতি বছর ৬ হাজার ৭শ' হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ বছর আগাম আমন ধানে ভালো ফলন পেয়ে কৃষক আগাম আলু চাষে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
বর্তমানে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উঁচু জমিতে আলুচাষে কৃষককে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। নিচু জমিতে আবহাওয়া দেখে লাগানোর কথা বলা হচ্ছে। এ ব্যাপারে মাঠপর্য়ায়ে কৃষককে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। যদি প্রাকৃতিক দুর্যোগে কোনো ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তাহলে ১ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন আলু উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে। গড় বাজার ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করলে ৪শ' কোটি টাকার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসবে। এ বছরে ভালো মূল্য পেয়ে কৃষক লাভবান হবেন।