প্রশাসনের কঠোর নিরাপত্তার আশ্বাস
শিল্পীর রঙ তুলির আঁচড়ে সাজছে দেবী দুর্গা
প্রকাশ | ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
স্বদেশ ডেস্ক
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গা পূজা। এ উৎসবকে পূর্ণাঙ্গরূপে সাজিয়ে তুলতে পূজা মন্ডপগুলোতে প্রতিমা তৈরিতে শিল্পীর রঙ তুলির আঁচড়ে মূর্ত হয়ে উঠেছে দেবীর রূপ। মৃৎশিল্পীদের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় ইতোমধ্যে মাটির কাজ শেষ করে চলছে রঙ তুলির কাজ। শিল্পীর রঙ তুলির আঁচড়ে গড়ে তোলা হচ্ছে দশভূজা দেবীদুর্গাসহ বিভিন্ন দেবদেবীর প্রতিমূর্তি। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে দেবীদুর্গা শক্তি ও সুন্দরের প্রতীক। প্রতি বছর অসুরের বিনাশ কল্পে মা দেবী দুর্গা এই ধরাধামে আবির্ভূত হয়। তাই সনাতন ধর্মাবলম্বীরা মনে করেন, সমাজ থেকে অন্যায় অবিচার গানি দূর করার জন্যই এই পূজার আয়োজন। প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত খবর-
গাংনী (মেহেরপুর) প্রতিনিধি জানান, মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানা যায়, এ বছর উপজেলায় ১৭টি মন্ডপে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে শারদীয় দুর্গা পূজা।
সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন পূজা মন্ডপ ঘুরে দেখা যায়, পূজা উৎসবকে পরিপূর্ণ রূপ দিতে মন্দিরগুলোতে চলছে সাজসজ্জার প্রস্তুতি। ইতিমধ্যে বেশির ভাগ মন্ডপে প্রতিমায় মাটি লাগানোর কাজ প্রায় শেষ। কিছু কিছু মন্দিরে শুরু হয়েছে রঙ তুলির কাজ। স্থানীয় শিল্পী ছাড়াও বিভিন্ন স্থান থেকে আগত শিল্পীরা এখানে এসে প্রতিমা তৈরি ও রঙ তুলির কাজ করছেন। অন্যদিকে প্রতিমার পাশাপাশি বাদ্যযন্ত্র ঠিক ও তৈরি করতে ব্যস্ত সময় পার করছে ঢাকঢোল, কাঁশি ও বাঁশির কারিগররা।
মালাকার রঞ্জিত জানান, তিনি প্রতিমা তৈরি করে থাকেন। প্রতি বছর তিনি ৭-৮টি প্রতিমা তৈরির অর্ডার নেন। প্রতিটি প্রতিমা তৈরিতে মজুরি নেন ২৫ হাজার টাকা। কয়েক বছর কোনো বাড়তি খরচ নেনি তিনি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে পূজা উৎযাপন কমিটি বাড়তি খরচ দিতে পারেন না।
এ বিষয়ে পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি অশোক কুমার জানান, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবকে সার্থক করতে শিশু-কিশোর, নারী-পুরুষসহ সব বয়সি মানুষ এখন শুধু প্রহর গুনছে। বর্তমান সরকার তাদের সার্বিকভাবে সহযোগিতার পাশাপাশি আর্থিকভাবেও সহযোগিতা করে আসছে। এবং এবারের পূজায় তাদের আনন্দও বেশি হবে।
থানা অফিসার ইনচার্জ তাজুল ইসলাম জানান, শান্তিপূর্ণভাবে হিন্দু ধর্মালম্বীদের প্রধান উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সজাগ দৃষ্টি রাখছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। নিয়মিত টহল দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রীতম সাহা জানান, দুর্গাপূজা উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের জন্য সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সবার সহযোগিতায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মধ্যদিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপিত হবে দুর্গাপূজা এমনটাই আশা করছেন উপজেলাবাসী।
দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি জানান, নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার প্রতিটি পূজা মন্ডপে চলছে প্রতিমায় রং তুলির আঁচড়। এ বছর দুর্গাপুর উপজেলার ৭ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ৬৩টি মন্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হবে।
শুক্রবার পৌর শহরের দশভূজা মন্দিরে গিয়ে দেখা যায়, শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে দিন-রাত ব্যস্ত সময় পার করছে প্রতিমা শিল্পীরা। যেন দম ফেলার ফুসরত নেই। শিল্পীর রং তুলির ছোঁয়ায় প্রতিটি প্রতিমা জেগে উঠছে স্বমহিমায়। তুলির শৈল্পিক আঁচড়ে ফুটে উঠছে মা দুর্গা, গণেশ, কার্তিক, সরস্বতী, লক্ষ্ণী ও মহিষাসুরের প্রতিমা।
প্রতিমা শিল্পী নারায়ণ পাল ও হৃদয় পাল জানান, মাটির কাজ শেষে এখন রং তুলির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এরপর প্রতিমার অলংকার ও সাজসজ্জার কাজ করবেন। নির্দিষ্ট সময়ের আগে প্রতিমাগুলোর কাজ শেষ করা হবে।
সনাতন ধর্মাবলম্বী দিবস সাহা জানান, 'গণেশ, কার্তিক, লক্ষ্ণী ও সরস্বতী এই চার ছেলেমেয়েকে নিয়ে এবার দোলায় করে বাবার বাড়ি মর্ত্যলোকে আসবেন দেবীদুর্গা, আর কৈলাসে ফিরে যাবেন গজে। দেবী দুর্গার আরাধনায় সকল অশুভ শক্তি বিনাশ হয়ে শুভ শক্তির অভু্যদয় ঘটবে- এটাই আমাদের প্রার্থনা।'
উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট মানেশ চন্দ্র সাহা জানান, এ বছর দুর্গাপুর উপজেলায় ৬৩টি মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে আমাদের মত বিনিময় হয়েছে। পূজার নিরাপত্তায় পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও বিজিবি টহলে থাকবে। আশা করি দুর্গাপুর উপজেলা সুন্দরভাবে পূজা উদযাপন হবে। দুর্গাপুর থানার ওসি মো. সাইফুল ইসলান জানান, পূজায় নিরাপত্তা জোরদার করতে সকল ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পুলিশ দিন-রাত সার্বক্ষণিক কাজ করবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, পূজায় নিরাপত্তা নিশ্চিতে মাঠে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার বাহিনী থাকবে। পাশাপাশি উপজেলা প্রশাসন থেকে একটি কন্ট্রোল রুম থাকবে।
\হভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, এবার কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ২১টি পূঁজামন্ডপে উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে প্রশাসনের উদ্যোগে প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
পূজার দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে ব্যস্ততাও। অধিকাংশ মন্ডপে প্রতিমা নির্মাণের কাজ শেষ। প্রতিমা শিল্পীদের রং তুলির কাজ চলছে। শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার সঙ্গে রাত-দিন সমান তালে কাজ করছেন তারা। নিখুঁতভাবে মনের মাধুরী মিশিয়ে ফুটিয়ে তুলছে দুর্গা দেবীর আকৃতি গড়নের পাশাপাশি লক্ষ্ণী, স্বরসতী, গণেশ ও কার্তিকের প্রতিমা।
কমলাপুর ঠাকুরবাড়ি মন্দির কমিটির সভাপতি বাবুল আচার্য জানান, '৫ আগস্টের পর দেশের যে অবস্থা হয়েছে তাতে পূজা করার ইচ্ছে ছিল না। আমরা কোনো দল করি না। বংশ পরমপরায় পূজা করে আসছি, তাই করছি। এখনো আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক হয় নাই। প্রশাসন থেকে বার বার আস্বস্ত করলেও আমরা সাহস পাচ্ছি না।'
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের ভৈরব শাখার সভাপতি চন্দন কুমার পাল বলেন, দেশের পরবর্তীত পরিস্থিতে পূজা আয়োজন একটু দেরিতে শুরু করতে হয়েছে। এখন শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপনের প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। সকলের সহযোগিতা নিয়ে এবারও ব্যাপক জাঁকজমক পরিবেশে শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি।
উপজেলা বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম জানান, হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা যাতে সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারে সেজন্যে বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা মাঠে থাকবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) রেদুয়ান আহমেদ রাফি জানান, আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসব যাতে সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হতে পারে এজন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।