সাত জেলায় আওয়ামী লীগের ২৩ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার
প্রকাশ | ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
স্বদেশ ডেস্ক
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যা, বিস্ফোরক, নাশকতাসহ বিভিন্ন মামলায় সাত জেলায় চেয়ারম্যানসহ আওয়ামী লীগের ২৩ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খরা রক্ষাকারী বাহিনী। প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত খবর-
ধামরাই (ঢাকা) প্রতিনিধি জানান, ঢাকার ধামরাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিতে কলেজছাত্র আফিকুল ইসলাম সাদ হত্যা মামলার আসামি এক ইউপি চেয়ারম্যানসহ আওয়ামী লীগের দুই নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শুক্রবার ধামরাইয়ের শিয়ালকুল ও রাজধানীর আদাবর এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তাররা হলেন- ধামরাইয়ের সুয়াপুর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা কফিল উদ্দিন (৭৪) ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক মনোয়ার হোসেন (৫৫)।
ইউপি চেয়ারম্যান কফিল উদ্দিনকে তার নিজ গ্রাম ধামরাইয়ের শিয়ালকুল মসজিদের পাশ থেকে এবং মনোয়ার হোসেনকে রাজধানী ঢাকার আদাবর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
\হধামরাই থানার ওসি মনিরুল ইসলাম বলেন, গ্রেপ্তার কফিল উদ্দিন ও মনোয়ার হোসেন কলেজছাত্র আফিকুল ইসলাম সাদ হত্যা মামলার এজাহার নামীয় আসামি। তাদের সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে শুক্রবারই আদালতে পাঠানো হয়েছে।
চকরিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি জানান, কক্সবাজার-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জাফর আলমসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে একাদশ সংসদ নির্বাচনে টৈটং ইউনিয়নের একটি ভোটকেন্দ্রে বিএনপি কর্মীকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে থানায় মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার পেকুয়া থানায় টৈটং ইউনিয়ন বিএনপি কর্মী আবদুর রহিম বাদী হয়ে এই মামলাটি দায়ের করেন।
এই মামলায় টৈটং ইউপি সদস্য মনজুর আলম, মোহাম্মদ হোছাইন, রহিম উলস্নাহ ও জমির হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার বিকালে তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
মামলায় জাফর আলম, সালাহউদ্দিন আহমদ, টৈটং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী ও রাজাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম সিকদারকেও আসামি করা হয়েছে।
আদমদীঘি (বগুড়া) প্রতিনিধি জানান, বগুড়ার আদমদীঘি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বিএনপির অফিসে হামলা, ককটেল বিস্ফোরণ, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, হুমকিসহ ভয়ভীতি দেওয়া সংক্রান্ত মামলায় পুলিশ মাসুদুর রহমান মাসুদ সাহা নামের যুবলীগের এক নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে। বৃহস্পতিবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি উপজেলা সদরের তালসন গ্রামের মৃত মোজাম্মেল হক সাহার ছেলে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ৪ আগস্ট বেলা ১১টায় আদমদীঘিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঠেকানোর জন্য আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের প্রায় ২৫০ জন নেতাকর্মী ককটেল, শাবল ও লাঠিসহ ধারালো অস্ত্রে নিয়ে দলবদ্ধ হয়ে উসকানিমূলক সেস্নাগান দেয়। পরে আদমদীঘি সদরে বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থিত বিএনপির অফিসের সামনে এসে ককটেল নিক্ষেপ ও বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এ সময় বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা নিরাপদ দূরত্বে চলে গেলে হামলাকারীরা বিএনপি অফিসে প্রবেশ করে দরজা জানালা ভাঙচুর, চেয়ার, কাঠের আলমারি, ফ্যানসহ অন্যান্য আসবাবপত্র ও শহীদ জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিলা ও তারেক রহমানের ছবি ঘর থেকে বের করে তাতে পেট্রোল ঢেলে অগ্নিসংযোগ করে পুড়ে ফেলে।
এ ঘটনায় ২৫ আগস্ট আদমদীঘি উপজেলা জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের সভাপতি কুসুম্বী গ্রামের মিজানুর রহমান বাদি হয়ে বগুড়া-৩ আসনের সাবেক এমপি, তার বাবা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম খান রাজু, তার মা জেলা পরিষদ সদস্য ও মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মনজু আরা বেগম, ইউপি চেয়ারম্যান জিলস্নুর রহমানসহ ১২৫ জনের নাম উলেস্নখসহ অজ্ঞাত আরও ২৫০ জনের নামে বিশেষ ক্ষমতা আইনসহ বিস্ফোরক উপাদানবলি আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় যুবলীগ নেতা মাসুদুর রহমান মাসুদকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে পুলিশ জানায়।
ইন্দুরকানী (পিরোজপুর) প্রতিনিধি জানান, পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি এম এম ওবায়ে দুলস্নাহসহ ৬ জনকে আটক করেছে থানা পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার অপর আসামিরা হলেন- কালাইয়া ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সুলতান আহম্মেদ, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছরি হোসেনের বড় ভাই আব্দুল কুদ্দুস, উপজেলা যুবলীগ নেতা সাইফুল ইসলাম মিন্টু, আওয়ামী লীগ কর্মী মোতালেব ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নুরুজ্জামান খান।
এ বিষয়ে ইন্দুরকানী থানা ওসি কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, আটক আসামিদের আদালতে পাঠান হয়েছে। অন্য আসামিদের আটকের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
জয়পুরহাট প্রতিনিধি জানান, জয়পুরহাটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যা চেষ্টা মামলায় জয়পুরহাট পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলরসহ ৪ আওয়ামী লীগ নেতাকের্ যাবের সহায়তায় গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শুক্রবার ভোর রাতে সদর উপজেলার উত্তরজয়পুর এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজাতে পাঠানো হয়েছে।
গ্রেপ্তাররা হলেন- জয়পুরহাট পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক পৌর কাউন্সিলর জাকির হোসেন মোলস্না (৩৮), সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মাসুদ রানা (৪২), চকশ্যাম গ্রামের আলম হোসেন (৪৬) এবং চকগোপাল গ্রামের জাফর জনি (৪২)।
জয়পুরহাট সদর থানার ওসি শাহেদ আল মামুন জানান, গত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে তারা ছাত্র-জনতাকে হত্যা চেষ্টা মামলার আসামি ছিলেন। মামলার পর থেকে তারা পলাতক ছিলেন। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতের্ যাব সদস্যদের সহায়তায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
নলছিটি (ঝালকাঠি) প্রতিনিধি জানান, ঝালকাঠির নলছিটিতে উপজেলা শ্রমিকলীগ সাধারণ সম্পাদকসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার নলছিটি থানা পুলিশ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তাররা হলেন- উপজেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক হৃদয় হোসেন রিপন, কুশঙ্গল ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ইমরান সরদার ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য সাইদুল ইসলাম মিন্টু।
নলছিটি থানার এসআই মো. শহিদুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, ঝালকাঠি সদর থানায় দায়ের হওয়া একটি বিস্ফোরক আইনের মামলায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শিবগঞ্জ (বগুড়া) প্রতিনিধি জানান, বগুড়ার শিবগঞ্জে অগ্নিসংযোগ, বিস্ফোরক মামলায় জাতীয় পার্টি ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তাররা হলেন- মোকামতলা ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম মাছুদ, পিরব ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ছানোয়ার হোসেন ও ময়দানহাট্টা ইউনিয়নের হাটগাড়ী গ্রামের শাহজাদা।