খাস জমি দখল করে মার্কেট নির্মাণ

কুয়াকাটায় ঝুঁকিপূর্ণ টিনশেড মার্কেট আতঙ্কে ব্যবসায়ী-পর্যটকরা

প্রকাশ | ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

কুয়াকাটা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে নামার ঠিক আগ মুহূর্তে বেড়িবাঁধ অতিক্রম করতেই রাস্তার দুই পাশে নজরে আসে জরাজীর্ণ এলোমেলো এবং ঝুঁকিপূর্ণ শতাধিক টিনশেড ছোট-বড় মার্কেট ও দোকানপাট। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে সরদার মার্কেট নামের একটি দোতলা টিনশেড মার্কেট। এ মার্কেটের নিচতলায় রয়েছে প্রায় অর্ধ শতাধিক দোকানপাট এবং দোতলায় একপাশে নির্মাণ করা হচ্ছে আবাসিক হোটেল এবং অন্য পাশে রয়েছে দুটি রেস্টুরেন্ট। পরিবেশ কর্মী ও পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছে, জরাজীর্ণ এলোমেলো এই টিনশেড ঘরগুলো সৈকতের পরিবেশ নষ্ট করার পাশাপাশি, আগত পর্যটকরাও রয়েছে নানা ঝুঁকিতে। শুক্রবার পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের পাশে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সৈকত লাগোয়া প্রায় এক একর জমির ওপর গড়ে উঠেছে সরদার মার্কেট নামের একটি বিশাল দোতলা টিনশেড মার্কেট। মার্কেটটিতে ঢুকতেই চোখে পড়বে লোহার এঙ্গেল, বাঁশ-কাঠসহ নানা যন্ত্রাংশের ওপর দাঁড়িয়ে আছে টিনশেড এই মার্কেটটি। বিদু্যতের এলোমেলো লাইনগুলো দেখলে মনে হয়, এটি যেন বিদু্যৎ উৎপাদন কেন্দ্র। দোতলায় থাকা আবাসিক হোটেল ও রেস্টুরেন্টের ময়লা পানি সবসময়ই পড়ছে নিচে মার্কেটে আসা পর্যটকদের গায়ে। এমনকি টয়লেটের এলোমেলো পাইপগুলো ফেটে বিভিন্ন জায়গা থেকে বের হচ্ছে দুর্গন্ধ ও ময়লা। অবাক করার বিষয় হচ্ছে, ঝুঁকিপূর্ণ এই মার্কেটটিতে সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠতেই চোখে পড়বে সুন্দর একটি রেস্টুরেন্ট। হঠাৎ দেখলে যে কেউ মনে করবে এটি যেন বিলাসবহুল হোটেল বা রিসোর্টের কোনো রেস্টুরেন্ট। প্রায় দেড় শতাধিক মানুষ একসঙ্গে বসে খেতে পারে এখানে। এই রেস্টুরেন্টের মেঝেতে বসানো হয়েছে বিভিন্ন ডিজাইনের নান্দনিক টাইলস। এই টাইলসগুলো মূলত কাঠের সিলিং এর ওপর ইট, বালু, সিমেন্ট দিয়ে দুই ইঞ্চি পরিমাণ ঢালাই করে বসানো হয়েছে। এদিকে দোতলার আর একটু পেছনে গেলেই চোখে পড়বে আবাসিক হোটেল নির্মাণের মহাকর্মব্যস্ততা। যেখানে চলছে লোহার অ্যাঙ্গেলে ঝালাইয়ের মাধ্যমে জোড়াতালির কাজ। এদিকে মার্কেটের মূল স্তম্ভের খুঁটিগুলো অধিকাংশই ভেঙে দুর্বল হয়ে গেছে। মূলত সমুদ্রে জোয়ার আসলে সেই ঢেউয়ের পানি মার্কেটের নিচে সরাসরি আঘাত করে। এভাবে সমুদ্রের ঢেউয়ের আঘাতে মার্কেটের পশ্চিম ও দক্ষিণ পাশের খুঁটিগুলো দুর্বল হয়ে পড়েছে। প্রথমেই এ বিষয় কথা হয় আবাসিক হোটেল নির্মাণে কাজ করা ঝালাইমিস্ত্রি মনু মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, লোহার খুঁটি এবং কাঠের খুঁটি ব্যবহার করা হয়েছে পুরো মার্কেট তৈরির জন্য এবং মার্কেটটি দোতলা করতে প্রতি ছয় ফুট পর পর লোহার অ্যাঙ্গেল এবং লোহার বক্স ব্যবহার করা হয়েছে। এরপর সেই লোহার অ্যাঙ্গেলের ওপর কাঠ বিছিয়ে ঢালাই দিয়ে টাইলস বসানো হয়েছে। মূলত মার্কেটের দোতলায় পেছনের দিকে আবাসিক রুম তৈরি করা হচ্ছে। এ বিষয় মার্কেটের দোতলায় থাকা রেস্টুরেন্ট মালিক নুরুজ্জামান নুরের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, 'আমি নিজেই মার্কেটের এলোমেলো বিদু্যতের তারগুলো ঘুরে ঘুরে দেখেছি। এটা আসলেই খুবই ঝুঁকিপূর্ণ এবং আমি মার্কেটের অন্য দোকানদারদের সঙ্গেও কথা বলেছি।' মার্কেটের বার্মিজ আচার ব্যবসায়ী রাসেল বলেন, মাঝেমধ্যে এত পরিমাণ দুর্গন্ধ আসে যে, পর্যটক দোকানে আসলে দাঁড়াতে পারে না। আর যদি পর্যটক দোকানে না দাঁড়ায় তাহলে আমাদের বেচাকেনা হয় না। পাবনা থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক বেলায়েত হোসেন বলেন, 'আমি পরিবার নিয়ে এই মার্কেটে কেনাকাটা করতে এসেছি। কিন্তু এই মার্কেটটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। পর্যটকরা আতঙ্ক নিয়ে কেন একটি মার্কেটে অবস্থান করবে।' এ বিষয় সরদার মার্কেটের মালিক সাজেদুল ইসলাম হিরু বলেন, 'এই মার্কেটটি কোনোভাবেই ঝুঁকিপূর্ণ নয়। তবুও যদি উপজেলা প্রশাসন এবং কুয়াকাটা পৌর প্রশাসন বলে মার্কেটটি ঝুঁকিপূর্ণ, তাহলে আমি মার্কেট ভেঙে সরিয়ে নিব।' কুয়াকাটা পৌরসভার প্রশাসক কৌশিক আহমেদ বলেন, 'মার্কেটগুলো আমরা দেখেছি এবং মার্কেটগুলো জরাজীর্ণ অবস্থায় আছে। এই মার্কেটগুলো পৌরসভার পক্ষ থেকে অচিরেই আবারও পরিদর্শন করা হবে। পৌরসভার ইঞ্জিনিয়ার টিম রয়েছে তারা যদি ঝুঁকিপূর্ণ মনে করে তাহলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।' উপজেলা নির্বাহী অফিসার রবিউল ইসলাম বলেন, সৈকতের পাশে থাকা এসব মার্কেটগুলো একেতো ঝুঁকিপূর্ণ, অন্যদিকে সৈকত এলাকার পরিবেশও নষ্ট করছে। মার্কেটের সম্পূর্ণ জমিগুলো সরকারি সম্পত্তি। সব রেকর্ডে এগুলো সরকারের খাস জমি। এখন কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের মামলা সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞার কারণে ওই জায়গাগুলো অপসারণ এবং মার্কেটগুলো উচ্ছেদ করতে পারছি না। তবে আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে মামলাগুলো চালিয়ে যাচ্ছি, যাতে খুব দ্রম্নত এগুলো অপসারণ করে কুয়াকাটা সৈকতের পরিবেশ সুন্দর করতে পারি।'