বাঁশ দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে ভূমিহীনদের জন্য ভেঙে যাওয়া ঘর

সোনাতলায় সাতবেকী আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর যেন ভূতের বাড়ি

প্রকাশ | ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

সোনাতলা (বগুড়া) প্রতিনিধি
বগুড়ার সোনাতলায় ভূমিহীনদের জন্য নির্মিত ঘরগুলো যেন ভুতের বাড়ি। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীনদের জন্য সারাদেশে বিভিন্ন এলাকায় খাস জমিতে থাকার ব্যবস্থা করেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। উপজেলার পাকুল্যা ইউনিয়নের সাতবেকী গ্রামে বাঙ্গালী নদীর তীরে অবস্থিত সাতবেকী গ্রামে ২০২১ সালে ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়। ঘরগুলো নির্মাণের সময় নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহারের অভিযোগ থাকলেও এতে গুরুত্বারোপ করেননি সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান জুলফিকার রহমান শান্ত এবং দায়িত্বরত কর্মকর্তা ও ব্যক্তিরা। ওখানে ৬১টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি ঘরের নির্মাণ ব্যয়মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল এক লাখ টাকা। কিন্তু ঘরগুলো নির্মাণের কিন বছরের মাথায় ভেঙে যাচ্ছে। ভেঙে যাওয়া ঘর বাঁশ নিয়ে আটকে রাখা হয়েছে, যেন পড়ে না যায়। এ ছাড়াও কয়েকটি ঘরে ফাটল দেখা যায়। ঘরগুলোতে সিমেন্টের প্রলেপ দিয়ে রাখা হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, নির্মাণের সঠিক নিয়ম মানা হয়নি। যে কারণে ঘরগুলো কাত হয়ে যাচ্ছে, ফেটে যাচ্ছে, ইটের দেয়াল ভেঙে যাচ্ছে। ঘরের কাজ কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে না দিয়ে তৎকালীন চেয়ারম্যান জুলফিকার রহমান শান্ত নিজের তত্ত্বাবধানে করেছেন। সরেজমিন দেখা যায়, ভূমিহীনদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে ৬১টি ঘর। কিন্তু হাতে গোনা ৮-১০ পরিবার থাকলেও অবশিষ্ট ঘরগুলোতে কেউ থাকে না। আঙ্গিনায় জংলী গাছ দিয়ে ভরে গেছে। ঘরের বারান্দায় শুকনো ভুট্টার গাছ রাখা হয়েছে। আর অন্য ঘরগুলো ফাঁকা থাকলেও কিছু ঘরে বস্তাভরা শুকনো পাতা রাখা আছে। দেখে বোঝার উপায় নেই যে, এই ঘরগুলো গরিব বা ভূমিহীন মানুষের থাকার জন্য তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু অব্যহৃত ঘরের দরজায় বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্যক্তির নামে নোটিশ দেখা গেল। সেখানে বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে ঘরে ফেরার জন্য নোটিশ দেওয়া হয়েছে। নোটিশ এক বছর আগে দিলেও এখনো কেউ ঘরে ফেরেনি। ঘরগুলোতে কেউ বসবাস না করার কারণে বিদু্যতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে সোনাতলা পলস্নীবিদু্যৎ সমিতি-২। অনুসন্ধানে জানা যায়, বেশিরভাগ ঘরগুলো যাদের নামে বরাদ্দ করা হয়েছে, তারা স্থানীয় অর্থ-বিত্তশালী। তাদের কৃষি জমি ও নিজেদের বাড়ি রয়েছে। তবুও এই ঘরগুলো কেন বরাদ্দ নিয়েছে, তা জানতে চাইলে স্থানীয় ব্যক্তি তরিকুল বলেন, 'এই ঘরগুলো ভূমিহীনদের জন্য তৈরি হলেও মূলত যারা জমির মালিক, যাদের পাকা বাড়ি আছে, তারাই বরাদ্দ পেয়েছে। আশপাশেই তাদের বাড়ি আছে। ধান মাড়াইয়ের সময় ধান, খড় ইত্যাদি রাখে।' ওখানে বসবাসকারী রং-মিস্ত্রি তাহের বলেন, 'এখানে বসবাস করার পরিবেশ নেই। চারদিকে শুধু জঙ্গল দিয়ে ভরে গেছে। সাপের ভয়, রাতে শেয়াল থাকে। অনেক সময় চোর এসে এসব জায়গায় থাকে।' অন্যরা বলেন, এখানে একসময় মাদকসেবনের আখড়া ছিল। তারা কঠোরভাবে নিষেধ করায় সেটা এখন নেই। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, 'ওই কাজের সময় আমি ছিলাম না। তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা চেয়ারম্যান এবং সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান যোগসাজস করে কাজ করেছে।' উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্বীকৃতি প্রামাণিক বলেন, 'এ ব্যাপারে রেভিনিউ স্যারের সঙ্গে কথা হয়েছে। ডিসি স্যারের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'