শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১

বৃষ্টিতে অচল প্র্রায় জনজীবন তলিয়ে গেছে সবজির ক্ষেত

স্বদেশ ডেস্ক
  ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
বৃষ্টিতে অচল প্র্রায় জনজীবন তলিয়ে গেছে সবজির ক্ষেত

টানা বৃষ্টিতে জনজীবন প্র্রায় অচল হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের দিনমজুর শ্রেণির মানুষকে সীমাহীন কষ্ট ভোগ করতে হচ্ছে। সাধারণ মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। যারা প্রয়োজনের তাগিদে বের হচ্ছেন তারা পড়ছেন নানা ভোগান্তিতে। এদিকে টানা বর্ষণে বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। তলিয়ে গেছে সবজিসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত-

গাংনী (মেহেরপুর) প্রতিনিধি জানান, মেহেরপুরের গাংনীতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। এতে স্বাভাবিক কাজকর্মে ভাটা পড়েছে। গেল তিন দিন হালকা বৃষ্টিপাতের পর সকাল থেকে ভারী বৃষ্টি শুরু হয়। আধা ঘণ্টা ভারী বর্ষণের পর কিছুটা কমলেও তা অব্যাহত রয়েছে। অঝোরে বৃষ্টির কারণে ফাঁকা হয়ে পড়েছে গ্রাম ও শহরের সড়কগুলো। সকালে কাজের উদ্দেশে ঘর থেকে বের হলেও বৃষ্টিতে আটকা পড়েছেন শ্রমজীবীদের অনেকে। চায়ের দোকানে বসে সময় পার করছেন তারা। ক্ষুদ্র ব্যবসার উপরেও বৃষ্টির বিরূপ প্রভাব পড়েছে। বাজারগুলোতে মাছ ও অন্য পণ্য সাজিয়ে বিক্রেতারা অপেক্ষা করলেও ক্রেতাশূন্য অবস্থা বিরাজ করছে।

জানা গেছে, উঞ্চতম জেলার মধ্যে মেহেরপুর অন্যতম। গেল কয়েক বছর আশঙ্কাজনকহারে বৃষ্টিপাত কমেছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে তেমন বৃষ্টিপাতের দেখা মেলেনি। তবে গেল মাসের ১৪ তারিখ থেকে টানা তিন দিন বৃষ্টিপাত হয়েছে। বিগত ১০-১২ বছরের মধ্যে এত বৃষ্টিপাত দেখেনি এ অঞ্চলের মানুষ। এ বৃষ্টির ধাক্কা সামলানোর আগেই গেল ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে তিন দিন ভারী বর্ষণ হয়। এর সঙ্গে ফের গত তিন দিনের বৃষ্টিতে জনজীবনে অচলাবস্থা বিরাজ করছে।

এদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রছাত্রীর উপস্থিতি অনেক কমেছে। কলেজগুলোর উপস্থিতির চেয়ে প্রাথমিক পর্যায়ের বিদ্যালয়ে উপস্থিতি অনেক কম। গাংনী সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মনিরুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টির কারণে গত দুইদিন ছাত্রছাত্রী উপস্থিতি কম।

কাজের গন্তব্যের জন্য গাংনী কাঁচা বাজারের একটি চায়ের দোকানে অপেক্ষা করছেন আব্দুল করিম নামের এক রাজমিস্ত্রী। তিনি জানান, তার দলে রয়েছেন ২৫-৩০ জন মিস্ত্রী ও জোগালে (শ্রমিক)। গত তিন দিন বৃষ্টির কারণে কাজকর্ম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতে নির্মাণ শ্রমিকদের আয় কমে গেছে। প্রতিদিনের ইনকাম দিয়ে এসব মানুষের সংসার চলে।

এদিকে ভারী বর্ষণের ফলে পরিবেশ ও কৃষিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে জানান উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সেলিম রেজা। কিন্তু প্রয়োজনীয় বৃষ্টির কারণে ভূগর্ভস্থ পানির প্রাপ্যতা সহজ হবে এবং পরিবেশে স্বস্তি ফিরে আসবে।

উলস্নাপাড়া (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে সিরাজগঞ্জের উলস্নাপাড়ায় খরিপ-২ আওতায় শীতকালীন সবজি চাষ করা কৃষকের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। অনেক ক্ষেতে পানি ওঠায় গাছ নষ্ট হয়েছে। এতে কৃষকের লক্ষাধিক টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। মাঠের পর মাঠ সবজির ক্ষেতে এখন পানি উঠে আছে।

সম্প্রতি টানা বৃষ্টিতে উপজেলার কয়ড়া ইউনিয়ের কৃষ্টপুর, রতন কয়ড়া, দুর্গানগর ইউনিয়নের মহেশপুর এলাকার কয়েকজন কৃষকের বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজির ক্ষেতে পানি জমে গেছে। কয়েক দিনের ভারী বর্ষণের কারণে এমন ক্ষতি হয়েছে বলে কৃষকরদের দাবি।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার খরিপ-২ এর আওতায় ২৭০ হেক্টর জমিতে কৃষকরা শাক-সবজির আবাদ করেছিলেন। এরমধ্যে ১২৪ শতাংশ সবজি ক্ষেত পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে, যার ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২ লাখ টাকা। অনেক মাঠ পুরোটাই তলিয়ে গেছে। আবাদ করা সবজি ক্ষেত পানির নিচে থাকায় উৎপাদনে ধস নামতে পারে বলে আশঙ্কা করছে কৃষক ও কৃষি বিভাগ।

এবারে ফুলকপি, টমেটো, বেগুন, শসা, লালশাক, গাজরসহ লাভের আশায় শীতকালীন সবজির আবাদ করা হয়েছিল। তবে অসময়ের বৃষ্টিতে খরচের টাকাও তুলতে পারবেন কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় সবজি চাষিরা।

কয়ড়া ইউনিয়নের কৃষ্টপুর গ্রামের কৃষক আলম হোসেন বলেন, 'এবার ১ বিঘা জমিতে টমেটোর চারা রোপণ করেছিলাম। কিন্তু টানা বৃষ্টিতে সব চারা নষ্ট হয়ে গেছে। আর ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। এছাড়াও ১২ শতক জায়গাতে মুলার আবাদ করা হয়েছিল, সেটাও নষ্ট হয়েছে। প্রচন্ড খরা শেষে সবজির খেতে কীটনাশক ব্যবহার করার পর টানা বৃষ্টিতে তা ধুয়ে যায় এবং জমিতে পানি জমায় সবজির বীজতলা ও চারা নষ্ট হয়ে গেছে।'

দুর্গানগর ইউনিয়নের মহেশপুর গ্রামের কৃষক হোসেন আলী জানান, 'সবজি চাষে এবারে ভালো লাভবান হওয়ার আশায় ৫০ শতক জমিতে শসা আবাদ করেছিলাম। এই জমিতে খচর হয়েছে ৬৫ হাজার টাকা। তবে লাভ তো দূরের কথা, খরচের টাকাও উঠবে না। এই অঞ্চলে টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে। জমিতে পানি জমে থাকায় শসা পচে যাচ্ছে।'

উলস্নাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুবর্ণা ইয়াসমিন সুমি বলেন, এবার খরিপ-২ এর আওতায় ২৭০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ করা হয়েছিল। এর মধ্যে ১২৪ শতাংশ জমির সবজি পুরো নষ্ট হয়ে গেছে। টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে কৃষকরা সব ধরনের সবজির আবাদেই ক্ষতির মুখে পড়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা করে কৃষি অফিস থেকে সহযোগিতা করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে