ভোলার সাত উপজেলায় ১৭২ জন খাদ্য বান্ধবের ডিলারের মাধ্যমে ১৫ টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি করে চাল পেত ৮২ হাজার ৫৪৭ জন দরিদ্র পরিবার। বর্তমানে খাদ্য বান্ধবের চাল পায়নি প্রায় ৫০ হাজার পরিবার। গত সেপ্টেম্বর মাসে এ চাল না পেয়ে কষ্টে জীবন কাটছে ওইসব দরিদ্র পরিবার। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর লাপাত্তা ভোলার খাদ্য বান্ধবের ১০৭ জন ডিলার। এতে করে সেপ্টেম্বর মাসের নতুন ডিলার নিয়োগ কাজ শেষ না হওয়ায় ১৫ টাকা কেজি দরে চাল কিনতে পারেনি খাদ্য বান্ধবের কার্ডধারী দরিদ্র পরিবারগুলো। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ভোলার সরকারি খাদ্য গুদামগুলোতে কয়েক হাজার মে. টন খাদ্য বান্ধবের চাল পরে আছে। ডিলার না থাকায় বিতরণ হচ্ছে না ওইসব চাল। ১৫ টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি করে এসব চাল সেপ্টেম্বর মাসে বিতরণের কথা ছিল খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির কার্ডধারী দরিদ পরিবারের মধ্যে। কিন্তু গত ৫ আগস্টের পর লাপাত্তা হয়েছেন ভোলার সদর উপজেলার ৩৪ জন ডিলারের মধ্যে ২৩ জন, চরফ্যাশনের ৫০ জনের মধ্যে সবাই, লালমোহনের ২৬ জনের মধ্যে সবাই ও মনপুরা উপজেলার আটজনের মধ্যে আটজনই খাদ্য বান্ধবের ডিলার। আর ডিলার না থাকায় বন্ধ রয়েছে এসব চাল বিতরণ কার্যক্রম।
সদর উপজেলার ভেদুরিয়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের চর ভেদুরিয়া গ্রামের খাদ্য বান্ধবের কার্ডধারী হতদরিদ্র মো. নাহিদ (৩৫) জানান, স্ত্রী ও চার সন্তান নিয়ে তার সংসার। দিন মজুরের কাজ করে অনেক কষ্টে সংসার চালাতে হয়। খাদ্য বান্ধবের ১৫ টাকা দামে ৩০ কেজি চাল কিনে বছরের পাঁচ মাস মোটামুটি কেটে যেত তার। কিন্তু এ মাসে তাদের খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির ডিলার লাপাত্তা হওয়ায় চাল কিনতে পারেননি। এ ছাড়াও কয়েক দিন আগে তিনি দুর্ঘটনায় পরে হাঁটা-চলা করতে পারছেন না। তাই কোন কাজ করতে না পারায় আয়-রোজগারও বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে বাজার থেকে বেশি দামে চাল কেনার সামর্থ্যও নেই তার। যদি গত মাসে ১৫ টাকা কেজিতে চাল কিনতে পারতেন তাহলে তার কষ্ট হতো না। বর্তমানে অনেক কষ্টে দিন কাটছে তার।
সদর উপজেলার ভেদুরিয়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের চর ভেদুরিয়া গ্রামের খাদ্য বান্ধবের কার্ডধারী হতদরিদ্র আব্দুল কাদের (৮০) জানান, তিনি সরকারি ঘরে স্ত্রী ও দুই নাতী নিয়ে বসবাস করছেন। তার আয় রোজগার নেই। ছেলেরা জেলে। মাঝে মধ্যে কিছু টাকা দেন, তা দিয়ে কোন রকমের সংসার চলে। তার একটি খাদ্য বান্ধবের কার্ড রয়েছে। সে কার্ডে ১৫ টাকা কেজি দরে চাল কিনে থাকেন। কিন্তু গত সেপ্টেম্বর মাসে তিনি ডিলারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন। ডিলারের বাড়িতে গিয়ে তাকে পাননি। পরে লোকমুখে জানতে পেরেছেন এখন আগের ডিলার নেই। নতুন করেও কাউকে নেওয়া হয়নি। তাই সেপ্টেম্বর মাসে চাল পাবেন না তারা।
জেলা খাদ্য অধিদপ্তরের খাদ্য নিয়ন্ত্রক এহসানুল হক জানান, খালি থাকা ১০৭ জন নতুন করে ডিলার নিয়োগের কাজ চলছে। যত দ্রম্নত সম্ভব ডিলার নিয়োগের কাজ শেষ করা হবে। নতুন ডিলাররা সেপ্টেম্বর মাসের চাল অক্টোবর মাসে তুলে বিক্রি করবে।