অভয়নগরে জলাবদ্ধতায় মৎস্য ও কৃষিতে ক্ষতি ১২৯ কোটি টাকা

আটঘরিয়ার শিম ক্ষেত বিনষ্ট

প্রকাশ | ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

স্বদেশ ডেস্ক
পাবনার আটঘরিয়ায় বৃষ্টির পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে যাওয়া শিম ক্ষেত -যাযাদি
যশোরের অভয়নগরে জলাবদ্ধতায় মৎস্য ও কৃষিতে ক্ষতি ১২৯ কোটি টাকা হয়েছে। এর মধ্যে ১৮২৬ হেক্টর জমির আমন ধান ও ১৪৭ হেক্টর জমির সবজি নষ্ট হয়ে যায়। ভেসে গেছে ৪ হাজার ৯০০টি ছোট-বড় মাছের ঘের। অন্যদিকে পাবনার আটঘরিয়ায় ঘন ঘন বৃষ্টিতে শিম ক্ষেত বিনষ্ট হওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন সবজি চাষিরা। প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত ডেস্ক রিপোর্ট- অভয়নগর (যশোর) প্রতিনিধি জানান, সম্প্রতি দুদফা টানা বৃষ্টিপাত ও নদ-নদীর পানি ঢুকে পড়ায় যশোরের অভয়নগরে ভবদহ এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। সৃষ্ট এ জলাবদ্ধতায় কৃষি ও মৎস্যে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১২৯ কোটি টাকার। ১ হাজার ৮২৬ হেক্টর জমির ধান ও ১৪৭ হেক্টর জমির সবজি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। ভেসে গেছে ছোট-বড় ৪ হাজার ৯শ' মাছের ঘের। পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও ঘের মালিকরা। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, দুদফা টানা বৃষ্টির কারণে অভয়নগরের ভবদহ অঞ্চলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। আর এই জলাবদ্ধতার কারণে উপজেলার প্রেমবাগ ইউনিয়নে ৫৩৩ হেক্টর জমির আমন ধান ও ৪৭ হেক্টর জমির সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। সুন্দলী ইউনিয়নে ৮৩৫ হেক্টর জমির আমন ধান ও ১৯ হেক্টর জমির সবজি পানির নিচে তলিয়ে থাকা অবস্থায় পচতে শুরু করেছে। চলিশিয়া ইউনিয়নে ৬০ হেক্টর জমির আমন ধান ও ২৮ হেক্টর সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। পায়রা ইউনিয়নে ৮৮ হেক্টর জমির আমন ধান ও ১৫ হেক্টর জমির সবজি ক্ষেত এখনো পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। এ ছাড়া উপজেলা পর্যায়ে ১৪ হেক্টর জমির গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ ও ৫ হেক্টর জমির কাঁচা মরিচ নষ্ট হয়ে যায়। নওয়াপাড়া পৌর এলাকার ৩১০ হেক্টর জমির আমন ধান ও ২০ হেক্টর জমির সবজি ক্ষেতে ক্ষতি হয়েছে। সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, জলাবদ্ধতার কারণে ভেসে যাওয়া ৪ ইউনিয়নের পুকুর, দীঘি ও খামারের সংখ্যা এক হাজার ২৫০টি। ক্ষতিগ্রস্ত মাছের ঘেরের সংখ্যা ৩ হাজার ৬৫০টি। যার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৯০ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। চলিশিয়া ইউনিয়নের কোটা গ্রামের মৎস্যঘের মালিক কামরুজ্জামান তরফদার বলেন, কোটা গ্রামের চাতরা বিলে ২টি ও সুন্দলী ইউনিয়নে ৩টি মাছের ঘের রয়েছে তার। এ ৫টি ঘেরের জমির পরিমাণ ১১০ বিঘা (৫২ শতক)। ঘেরগুলো থেকে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। এ ছাড়া ঘেরপাড়ের সবজি ক্ষেতও নষ্ট হয়েছে। এ ক্ষতি মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান না হলে প্রতি বছর অসংখ্য ঘের মালিক ও কৃষক চাষাবাদ ছেড়ে অন্য ব্যবসা করতে বাধ্য হবে। গুয়াখোলা গ্রামের কৃষক মহর আলী বলেন, বাড়ির পাশে ৬ বিঘা (৪২ শতক) জমিতে আমন ধান রোপণ করা হয়েছিল। দুদফা টানা বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় ধানগাছ মরতে শুরু করেছে। এনজিও থেকে নেওয়া ঋণের টাকা পরিশোধ করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লাভলী খাতুন বলেন, অভয়নগরের ভবদহ অঞ্চলের ৪টি ইউনিয়ন ও নওয়াপাড়া পৌরসভার কয়েকটি ওয়ার্ডে জলাবদ্ধতার কারণে কৃষিতে ব্যাপক ক্ষতি রয়েছে। গত মৌসুমে আমন ধানের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলেও এবার জলাবদ্ধতার কারণে তা সম্ভব হবে না। কারণ ৭ হাজার ৬৪০ হেক্টর জমিতে আবাদ করা আমন ধানের মধ্যে ১ হাজার ৮২৬ হেক্টর জমির ধান নষ্ট হতে শুরু করেছে। তিনি আরও বলেন, চরম এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারিভাবে ৪৭৫ কৃষককে বিনামূল্যে টমেটো, বেগুন, শিম, লাউ, মিষ্টিকুমড়া, লালশাক, গিমা কলমি শাকের বীজ ও নগদ এক হাজার করে টাকা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের কাছে মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে দেওয়া হবে। উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল হক বলেন, 'চলতি মাসের প্রথম দিকে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ভারী বৃষ্টিসহ নদ-নদীর পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে অভয়নগরে মাছের ঘের মালিকরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। পায়রা, চলিশিয়া, সুন্দলী ও প্রেমবাগ ইউনিয়নসহ নওয়াপাড়া পৌর এলাকার ১ হাজার ২৫০টি পুকুর, দিঘি ও খামারের মাছ ভেসে গেছে। এ ছাড়া ৩ হাজার ৬৫০টি ছোট-বড় মাছের ঘেরের একই অবস্থা হয়েছে। সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ ৯০ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। তাদের নির্দেশনা মোতাবেক পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আটঘরিয়া (পাবনা) প্রতিনিধি জানান, পাবনার আটঘরিয়ায় শিম চাষিদের এবার কপালে হাত। ঘন ঘন বৃষ্টিতে অর্ধেক শিম ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। একদিকে শিমের ফুল ও গুঁটি ঝরে পড়েছে, অন্যদিকে অনেক ক্ষেতে পানি জমে শিম গাছ মরতে শুরু করেছে। শিম আবাদে উপজেলার মাজপাড়া ইউনিয়ন, চাঁদভা ইউনিয়ন ও দেবোত্তর ইউনিয়ন বিখ্যাত। প্রতিবছর এসব এলাকায় শত শত বিঘা জমিতে শিম আবাদ হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু বিগত প্রায় একমাস ধরে প্রায় প্রতিদিন হালকা ও ভারী বৃষ্টিপাতে উঠতি শিম গাছের ফুল ও ফল নষ্ট হতে শুরু করে। কোনো কোনো শিম ক্ষেতে পানি জমে গাছ মারা যেতে শুরু করেছে। বর্তমান প্রতি কেজি শিম ২০০ থেকে ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হলেও এখন আর শিম পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে শিম চাষিদের কপালে হাত। বর্তমানে শিমের আড়ত বলে খ্যাত মুলাডুলি, সরাবাড়িয়া, চাঁদভা, ধলেশ্বর এখন বেচাকেনা নেই বললেই চলে। মাজপাড়া শিম চাষি উজ্জ্বল জানান, তার দুই বিঘা জমির শিম বৃষ্টির কারণে নষ্ট হয়ে গেছে। চাঁদভার শিম চাষি আক্তার জানান, তার শিম ক্ষেত পানিতে ডুবে পচন ধরেছে। আরেক চাষি হাফিজুল জানান, এখনকার বৃষ্টির কারণে শিম চাষ করে প্রচুর ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে।