নিখোঁজ মুক্তিযোদ্ধা চাচার ভাতা নিচ্ছেন সৎ ভাতিজা!

প্রকাশ | ০২ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

শরীয়তপুর সদর প্রতিনিধি
শরীয়তপুরের নড়িয়ায় নিখোঁজ চাচা আলী আজম বেপারীর মুক্তিযোদ্ধা ভাতা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে সৎ ভাতিজা তাওহীদ ইসলাম রাফিন বেপারীর (২১) বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে তথ্য গোপন করে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে এককালীন সোনালী ব্যাংক থেকে তুলেছেন কয়েক লাখ টাকা। এ ঘটনায় এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বইছে নানা সমালোচনার ঝড়। তার জন্মদাতা পিতা মোয়াজ্জেম হোসেন বেপারী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার বিঝারি ইউনিয়নের বাসিন্দা আলী আজম বেপারী ও তার সৎ ভাই মোয়াজ্জেম বেপারী। তার পিতা মৃত মিরজা আলী বেপারী তৎকালীন সময় দুই বিয়ে করেন। যার কারণে তারা দুই ভাই দুই মায়ের গর্ভে জন্ম নেওয়ায় তারা একে অপরের সৎভাই বিবেচিত। তৎকালীন সময় যুদ্ধ করতে গিয়ে আলী আজম বেপারী আহত হন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করার এক সপ্তাহ পর থেকেই তিনি নিখোঁজ হয়ে যান। মুক্তিযুদ্ধ করার আগে অথবা পরেও তিনি বিয়ে করেননি। নেই কোনো সন্তান, বাবা -মা ও আপন ভাই বোনও। এরপর ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার প্রবর্তিত ৩০০ টাকার দুস্থ মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বর্তমানে সব মুক্তিযোদ্ধার জন্য সম্মানী ভাতা হিসেবে প্রবর্তিত হয়েছিল। সেসময় থেকে রাফিনের বাবা মোয়াজ্জেম বেপারীও বীর মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী পেতে শুরু করেন। তবে তার সৎ ভাই মুক্তিযোদ্ধা আলী আজম বেপারী নিখোঁজ থাকায় ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে অবৈধভাবে তার সৎ ভাই মোয়াজ্জেম বেপারী নিজের ছোট সন্তান রাফিন বেপারীকে দিয়ে নিখোঁজ ভাইয়ের মুক্তিযোদ্ধা ভাতা তুলছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা মোয়াজ্জেম বেপারী বলেন, 'আমি নিজেই একজন মুক্তিযোদ্ধা, আমার ভাইও তাই। আমার ভাই নিখোঁজ রয়েছেন। তার কোনো সন্তান বা স্ত্রী নেই।, তাই আমি স্টাম্পের মাধ্যমে আমার ছোট ছেলেকে পাওয়ার দিয়েছি। তাই সে আমার ভাই মুক্তিযোদ্ধা আজম বেপারীর ভাতা পায়। এটা মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের থেকে অনুমোদন করিয়ে এনেছি।' ভাতাভোগী রাফিন বেপারী বলেন, 'আমি আমার চাচা আলী আজম বেপারীর একজন ওলিওয়ারিশ হিসেবে ভাতা পাচ্ছি। সরকার আমাকে দিয়েছে।' নড়িয়া সোনালী ব্যাংক অফিসার বলেন, 'আমরা কাগজপত্র দেখেই তার অ্যাকাউন্ট খুলেছি। তবে রাফিন বেপারী যদি সৎ ভাতিজা হয় তাহলে তাকে বাতিল করা হবে। কারণ সৎ ভাতিজা কখনো ভাতাভোগী হবে না।' নড়িয়া ইউএনও শংকর চন্দ্র বৈদ্য বলেন, 'আমরা সংবাদ পেয়েই সৎ ভাই মুক্তিযোদ্ধা মোয়াজ্জেম বেপারীকে ডেকে আনলে তিনি সৎ ভাই আলী আজম বেপারীর কথা স্বীকার করেন। তবে তিনি তার ভাইয়ের মুক্তিযোদ্ধা ভাতা নিতে কাগজপত্রে সৎ ভাই দেখাননি। তাই তার ভাইয়ের মুক্তিযোদ্ধা ভাতার কার্ড বাতিলের জন্য এবং এ পর্যন্ত যত ভাতা পেয়েছে তা ফেরত দেওয়ার জন্য মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।' মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের বাজেট শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব নুসরাত জাহান বলেন, 'কোনো মুক্তিযোদ্ধা যদি নিখোঁজ হয়ে যায়, তার কোনো ওয়ারিশ না থাকে, যেমন তার বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তান ও আপন ভাই ছাড়া কেউ তার ভাতাভোগী হতে পারবে না। এমন কোনো জায়গায় যদি হয়ে থাকে আমরা অভিযোগ পেলে দ্রম্নত ব্যবস্থা নেব।'