দিন যতই পার হচ্ছে ততই ঘনিয়ে আসছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। আর এ দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে প্রতিমা তৈরির কাজে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পীরা। এছাড়াও বিভিন্ন জেলায় এ উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আঞ্চলিক অফিস ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত খবর-
সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার বাজালিয়া ইউনিয়নের গোবিন্দ পাড়ার সরস্বতী শিল্পালয়ে চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, একটি বাড়ির বারান্দাজুড়ে শোভা পাচ্ছে ডজনখানেক ছোট-বড় প্রতিমা। বাঁশ, কাঠ ও কাদা মাটি দিয়ে তৈরি এসব প্রতিমা দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন বিভিন্ন বয়সের লোকজন। এরই মধ্যে মন্ডপের কাঠামো তৈরি, খড়ের কাজ ও মাটির মাধ্যমে প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। এখন চলছে রং-তুলির কাজ।
ওই বাড়িটির বারান্দায় প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন সরস্বতী শিল্পালয়ের স্বত্বাধিকারী মৃৎশিল্পী রতন পাল ও তার সহযোগী ছেলে শয়ন পাল, জয় পাল, মনোরঞ্জন পাল ও রাজকুমার দাশ।
মৃৎশিল্পী রতন পাল দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে এ এলাকায় প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন। প্রতিমা বিক্রি করে তিনি ও তার পরিবারের অনন্য সদস্যরা জীবিকা নির্বাহ করেন। এ বছর তিনি ১৬টি প্রতিমা তৈরির অর্ডার পেয়েছেন। প্রতিটি প্রতিমা তৈরি করতে ৩০-৪০ হাজার টাকার চুক্তিতে অর্ডার নিয়েছেন তিনি। দুর্গাপূজা ছাড়াও তিনি কালীপূজা, মনসা পূজা, কার্তিক পূজা, লক্ষ্ণীপূজা, সরস্বতী পূজা ও জগদ্ধাত্রী পূজাসহ প্রায় সব পূজার প্রতিমা তৈরি করেন।
উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সদস্যসচিব রাজীব নন্দী বলেন, এ বছর পুরো উপজেলায় ১৮৪টি মন্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপিত হবে। তার মধ্যে ১১৯টি মন্ডপে প্রতিমা পূজা ও ৬৫টি মন্ডপে ঘটপূজা অনুষ্ঠিত হবে।
সাতকানিয়া থানার ওসি মোস্তফা কামাল খান বলেন, অন্যান্য বছরের ন্যায় এ বছরও উপজেলার প্রত্যেকটি পূজা মন্ডপের নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন।
ইউএনও মিল্টন বিশ্বাস বলেন, 'ইতোমধ্যে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিদের নিয়ে দুর্গাপূজা উদযাপন উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক সভা করেছি।'
সিলেট অফিস জানিয়েছে, সিলেট সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ ও সিলেট মহানগরীর পূজা উদযাপন কমিটিসমূহের নেতৃবৃন্দের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার নগর ভবন সভাকক্ষে আয়োজিত সভায় সভাপতিত্ব করেন সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রশাসক আবু আহমদ ছিদ্দীকী এনডিসি।
এ বছর মহানগরীর ৪২টি ওয়ার্ডে ৭৭টি পূজা মন্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষে ৭৭টি পূজা মন্ডপকে ৩০ হাজার টাকা করে অনুদান প্রদান করা হয়েছে। মতবিনিময় সভায় ৭৭টি পূজা মন্ডপ কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের হাতে অনুদানের চেক তুলে দেন সিটি করপোরেশনের প্রশাসক আবু আহমদ ছিদ্দীকী এনডিসি।
সভায় বক্তব্য দেন সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী, পূজা উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট মৃতু্যঞ্জয় ধর ভোলা, পূজা উদযাপন পরিষদ সিলেট মহানগর শাখার সভাপতি প্রদীপ কুমার দেব, সাধারণ সম্পাদক চন্দন দাশ প্রমুখ। শুরুতে পবিত্র গীতা পাঠ করেন জ্যোতিষ চক্রবর্তী। সভায় সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান, সচিব মো. আশিক নূর প্রমুখ।
চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে দুর্গোৎসবকে সামনে রেখে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পীরা। প্রতিমা তৈরির কারিগররা নিপুণ হাতে তৈরি করেছেন দেবী দুর্গাকে। পাশাপাশি চলছে সরস্বতী, লক্ষ্ণী, গণেশ, কার্তিক, অসুর, সিংহ, মহাদেবসহ অন্যান্য প্রতিমা তৈরির কাজ। প্রতিমা তৈরির উপকরণের দাম বেশি, অন্যদিকে মৃৎশিল্পীরা তাদের মজুরি বাড়িয়ে দিলেও থেমে নেই সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ এই উৎসবের আয়োজন। মৃৎশিল্পীরা জানান, প্রতিমার মাটির কাজ শেষ হয়ে শুকানো হয়েছে। চলছে প্রতিমাতে রঙের ও সাজসজ্জার কাজ। আগামী ৯ অক্টোবর বুধবার দুর্গা দেবীর বোধন ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে এবং ১২ অক্টোবর শনিবার বিজয়া দশমী শেষে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে এই উৎসবের সমাপ্তি ঘটবে।
রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, কুড়িগ্রামের রাজারহাটে এবারে ১১৩টি মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ উপলক্ষে পূজা মন্ডপে নিছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিতে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে উপজেলা পরিষদের সভাকক্ষে প্রস্তুতিমূলক সভায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার খাদিজা বেগমের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মিজানুর রহমান, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান, সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তা ছাড়াও ইউপি চেয়ারম্যানরা।
স্টাফ নিপোর্টার, নেত্রকোনা জানান, নেত্রকোনা পৌরসভার উদ্যোগে মঙ্গলবার পৌর এলাকার ৫৪টি মন্ডপের সভাপতি ও সম্পাদকদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। নেত্রকোনা পৌরসভার প্রশাসক মামুন খন্দকারের সভাপতিত্বে ও সার্ভেয়ার রফিকুল ইসলাম মিলনের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নূরুজ্জামান, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জ্ঞানেশ চন্দ্র সরকার, প্রধান উপদেষ্টা নির্মল কুমার দাস, সাধারণ সম্পাদক লিটন চন্দ্র পন্ডিত, পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফারুক ওয়াহিদ, পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী হুমায়ুন কবীর, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক সুব্রত সাহা মানিক, লিটন দত্ত, ঝন্টু সরকার, নান্টু সরকার প্রমুখ।
দুপচাঁচিয়া (বগুড়া) প্রতিনিধি জানান, বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার ইউএনও জান্নাত আরা তিথির সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন সেনাবাহিনীর ক্যাম্পের কমান্ডার ক্যাপ্টেন সাকলাইন, থানার অফিসার ইনচার্জ ফরিদুল ইসলাম, উপজেলা আনসার ভিডিপি অফিসার লিটন মিয়া, উপজেলা বিএনপির সভাপতি মনিরুল ইসলাম খান স্বপন, উপজেলা জামায়াতের আমির মুনসুর আলী, ইউপি চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মাদ আবু তাহের, মোয়াজ্জেম হোসেন, শাহজাহান আলী, আনোয়ার হোসেন, মেহেরুল ইসলাম, উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অসীম কুমার দাস, মহাশ্মশান কালীবাড়ী কেন্দ্রীয় মন্দির কমিটির সভাপতি দ্বিজেন্দ্রনাথ বসাক মন্টু প্রমুখ।
ঘোড়াঘাট (দিনাজপুর) প্রতিনিধি জানান, দিনাজপুর ঘোড়াঘাটে ২৯টি মন্দিরের সভাপতি ও সম্পাদকদের নিয়ে আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বিয়ষক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। মঙ্গলবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন থানার অফিসার ইনচার্জ নাজমুল হক, সাবেক মেয়র আব্দুস সাত্তার মিলন, উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা ফারুক হোসেইন, জামায়াতে ইসলামী আমির মোফাখখায়ের ইসলাম, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সুজন মিয়া, ইউপি চেয়ারম্যান সাজ্জাত হোসেন, সদের আলী প্রমুখ।
মদন (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি জানান, নেত্রকোনার মদনে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ আলম মিয়ার সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন মদন সেনা ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার ক্যাপ্টেন মো. শাহাদাৎ হোসেন, ওসি নাহিদ হাসান, উপজেলা বিএনপির সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, জামায়াতের সাবেক উপজেলা আমির ইদ্রিছ আলী, হেফাজতে ইসলামের সভাপতি মুফতি আনোয়ার হোসেন, পলস্নী বিদু্যতের ডিজিএম ফিরোজ খান, পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি সুশীল পাল, সম্পাদক বিমান বৈশ্য, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি জীবন লাল সরকার, সম্পাদক সুরজিত রায় সংগ্রাম প্রমুখ।
সালথা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি জানান, ফরিদপুরের সালথায় প্রস্তুতিমূলক সভায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনিছুর রহমান বালীর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, সালথা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আতাউর রহমান, উপজেলা সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা আছাদ মাতুব্বর, উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অরুপ কুমার সাহা, সাধারণ সম্পাদক অনন্ত কুমার বিশ্বাস প্রমুখ।
শিবগঞ্জ (বগুড়া) প্রতিনিধি জানান, বগুড়ার শিবগঞ্জে উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পূজা উদ্যাপনের লক্ষ্যে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তারের সভাপতিত্বে ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জহিরুল ইসলামের সঞ্চলনায় বক্তব্য রাখেন সেনাবাহিনীর ওয়ারেন্ট অফিসার হাফিজ উদ্দিন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাসনিমুজ্জামান, ওসি আ. হান্নান, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম মাহবুব মোর্শেদ, পৌর বিএনপির সভাপতি বুলবুল ইসলাম প্রমুখ।
বারহাট্টা (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি জানান, নেত্রকোনার বারহাট্টায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারজানা আক্তার ববির সভাপতিত্ব বক্তব্য রাখেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোস্তাফিজুর রহমান, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মানিক আজাদ, বারহাট্টা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আহমদ বাবুল, বারহাট্টা সেনা ক্যাম্পের ওয়ারেন্ট অফিসার রেজাউল মৌলস্না, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ওবায়দুল ইসলাম প্রমুখ।
বেলকুচি (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে উপজেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে সভায় সভাপতিত্ব করেন ইউএনও আফিয়া সুলতানা কেয়া। বক্তব্য রাখেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রতিক মন্ডল, সিনিয়র এস এ রাফিউর রহমান রাফি, সেনাবাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেজর এস এম তবিবুর রহমান, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাকেরিয়া হোসেন, বেলকুচি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম, উপজেলা জামায়াতের আমির আরিফুল ইসলাম সোহেল, পৌর বিএনপির সভাপতি আলতাফ হোসেন প্রামাণিক, উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বৈদ্যনাথ রায়, সম্পাদক অমৃত নারায়ণ দে প্রমুখ।