৩ জেলায় বিধ্বস্ত সড়কে ঝুঁকিপূর্ণ যাতায়াত

প্রকাশ | ০২ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

স্বদেশ ডেস্ক
নেত্রকোনায় বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় যোগাযোগ রক্ষায় বাঁশের সাঁকো যেন এলাকাবাসীর একমাত্র ভরসা হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে, টাঙ্গাইলের মধুপুরের দোখলা-মমিনপুর কাঁচা সড়ক পাকা না করায় দিন দিন তা যেন চাষের জমিতে পরিণত হচ্ছে। এদিকে চট্টগ্রামের রাউজানে স্কুলে যেতে দুটি বিধ্বস্ত ব্রিজ কালভার্ট ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এসব কারণে ওই সব স্থানে এলাকাবাসী যাতায়াতের ক্ষেত্রে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। আঞ্চলিক স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত ডেস্ক রিপোর্ট- স্টাফ রিপোর্টার, নেত্রকোনা জানান, নেত্রকোনার আটপাড়ায় একটি বাঁধের পাশের রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় হাজারও মানুষের পারাপারের একমাত্র ভরসা বাঁশের সাঁকো। উপজেলার শুনই ইউনিয়নের গোয়াতলা গ্রামের মানুষ ঝুঁকি নিয়ে ওই বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার হচ্ছেন। আটপাড়ার শুনই ইউনিয়নের গোয়াতলা পূর্বপাড়া এবং শাহবাজপুর সংযোগ সড়কে এ বাঁশের সাঁকোটি তৈরি করা হয়। সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায়, কৃষক ও জনগণের সুবিধায় নির্মিত একটি বাঁধের দক্ষিণ পাশের রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় সাধারণ জনগণ তাদের নিজস্ব অর্থায়নে এই সাঁকোটি নির্মাণ করেন। সংযোগকারী সড়কের বেড়িবাঁধটিতে দক্ষিণ দিকের সস্নুইস গেট দিয়ে পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় প্রতি বছর বর্ষায় পানির চাপে বেড়িবাঁধের দক্ষিণাংশ ভেঙে যায়। যার ফলে বর্ষা এলেই এ অঞ্চলের লোকজন পড়েন চরম ভোগান্তিতে। চলাচল করতে পারে না যানবাহন। বৃষ্টির পানিতে ভেজা সাঁকো পার হতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে স্কুল ও মাদ্রাসায় পড়ুয়া ছোট বাচ্চারা। এলাকাবাসীর দাবি, মানুষের উপকারে এই বাঁধটি নির্মিত হলেও এখন এটি তাদের অভিশাপের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাঁধটি আরও দুই ফুট উঁচু করে নির্মাণ এবং সস্নুইস গেটের পরিমাণ বৃদ্ধি করলে তারা প্রতি বছর এই ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাবেন তারা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাজ্জাদুল হাসান জানান, জনগণের ভোগান্তি এড়াতে বেড়িবাঁধটি পরিদর্শন করে শিগগিরই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মধুপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি জানান, টাঙ্গাইলের মধুপুরের কয়েকটি কৃষি এলাকার মধ্যে দোখলা সাইনামারি নয়নপুর জালিচিরাসহ আশপাশের এলাকা অন্যতম। এ গ্রামগুলো যাতায়াতের প্রধান সড়ক হলো দোখলা-মমিনপুর সড়ক। সড়কটি দোখলা থেকে নয়নপুর হয়ে ধরাটি কোনাবাড়ি পর্যন্ত কাঁচা। লাল মাটির এলাকা হওয়ায় বৃষ্টি হলেই মাটি গলে কর্দমাক্ত হয়ে পড়ে। হেঁটে কিংবা বাহনে যাতায়াত করা কষ্টকর হয়ে পড়ে। দোখলা অংশে কিছুটা হেরিজবন্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছে উপজেলা এলজিইডি অফিস। স্থানীয়দের দাবি সড়কটি পাকাকরণের। স্থানীয়রা জানান, সড়কটি নয়নপুর পর্যন্ত কুড়াগাছা ও ফুলবাগচালা এ দুই ইউনিয়নের মধ্যে পড়েছে। স্থানীয় বেশির ভাগ বসতি গারো কোচ। পুরোটাই কৃষি এলাকা। আনারস, কলা, আদা হলুদ, পেঁপেসহ অন্যান্য ফসল চাষের উর্বর এলাকা এটি। উৎপাদিত কৃষিপণ্য বিভিন্ন জেলায় সমাগম ঘটে থাকে। সারা বছরই কৃষকদের সার, বীজ, চারাসহ উৎপাদিত পণ্য আনা-নেওয়া করা হয় এ সড়ক দিয়ে। সড়কটি কাঁচা হওয়ায় বর্ষাকালে কষ্টের মাত্রা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। ফলে ফসলের ন্যায্য দাম পান না বলে জানান কৃষকরা। সড়কটি পাকা হলে জনদুর্ভোগ কমবে, কৃষকরা পাবেন ফসলের ন্যায্য দাম, সময় অপচয় রোধসহ নানা সুবিধা ভোগ করতে পারবেন তারা। এ জন্য পাকাকরণের দাবি তাদের। অটোবাইক চালক ওসমান গনি জানান, সাইনামারি নয়নপুর জালিচিরা থেকে আনারস কলা ভর্তি করে আসতে বিকাল হয়ে যায়। বৃষ্টি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লাল মাটি গলে দইয়ের মতো হয়ে যায়। গাড়ির চাকায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়। কয়েক মাস চলতে চলতে গর্তগুলো বড় হয়ে খানাখন্দ হয়। তখন বাহন নিয়ে চলাচল করতে সীমাহীন কষ্ট পোহাতে হয়। স্থানীয় বাসিন্দা ফরমান আলী বলেন, বর্ষাকালে কাঁদা মাড়িয়ে এ সড়ক দিয়ে চলাচল একেবারেই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। শুকনো মৌসুমে ধুলাবালি থাকে। তখনও কষ্ট করে চলাচল করে এলাকার মানুষ। ট্রাক চালক ইউনিয়ন দোখলা শাখার সাধারণ সম্পাদক কালাম আজাদ মিঠু বলেন, দোখলা থেকে পশ্চিম দিকে নয়নপুর, সাইনামারি, জালিচিরা, থানারবাইদের দক্ষিণ এলাকা মূলত কৃষি এলাকা। সারা বছর কৃষি উৎপাদন উপকরণ আনা নেওয়া করা হয়। বর্ষাকালে আনারস বাজারে নিতে প্রতি পিস দুই টাকা খরচ পড়ে যায়। আর পাকা হলে সেখানে পঞ্চাশ পয়সা হবে। তাদের শাখা থেকে সারা বছর ৫-৭টি আর মৌসুমের সময় ৫০টির মতো ট্রাক লোড হয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় যায়। তিনি সড়কটি পাকাকরণের দাবি জানান। কুড়াগাছা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল হক সরকার বলেন, সড়কটির মমিনপুর থেকে কোনাবাড়ি বাজার পাড় হয়ে ফাদার বাড়ি গির্জা পর্যন্ত পাকা হয়ে গেছে। চাহিদা দেওয়া আছে। বরাদ্দ আসলে পাকার কাজ শুরু হতে পারে। রাউজান (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, রাউজানের পশ্চিম গুজরা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসা যাওয়া করছে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়। বিগত প্রায় এক দশক আগে ধসে যাওয়া একটি ব্রিজ ও অপর একটি কালভার্ট পার হয়ে তারা প্রতিদিন আসা যাওয়া করছেন। এতে অনেকেই পা পিছলে নিচে পড়ে আহত হন। পশ্চিম নোয়াপাড়া গ্রামের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক নয়ন চৌধুরী বলেন, তাদের গ্রামের বেশিরভাগ ছাত্রী পশ্চিম গুজরা উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে। তারা বজ্জ্যাখালী খাল পার হয়ে সরকারপাড়া-পটিয়াপাড়া রাস্তা দিয়ে ওই বিদ্যালয়ে যায়। জনস্বার্থে এই পথে ভেঙে পড়ে থাকা দুটি ব্রিজ-কালভার্ট দ্রম্নত মেরামত করার দাবি জানান তিনি। বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নাছির উদ্দিন বলেন, শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে পারাপারের জন্য বিভিন্ন সময় অস্থায়ীভাবে বঁাঁশের সাঁকো নির্মাণ করা হয়। কিন্তু সেগুলো পথচারীর অল্প সময়েই চাপে ভেঙে যায়। এ কারণে শিক্ষার্থীদের ভাঙা ব্রিজ কালভার্টে ঝুঁকি নিয়ে আসা যাওয়া করতে হচ্ছে। উপজেলা প্রকৌশলী আবুল কালাম বলেন, জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে এলাকার দুর্যোগ অবস্থায় থাকা যোগাযোগ অবকাঠামোর তালিকা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। ইতিপূর্বে আলোচিত রাস্তার বিষয়ে কোনো জনপ্রতিনিধি তাদের দপ্তরে যাননি। তিনি বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নিয়ে দেখবেন বলে আশ্বস্ত করেন।