নদীখেকো ভাটা মালিকদের দৌরাত্ম্যে হুমকিতে রূপসার ওয়াপদা বেড়িবাঁধ

প্রকাশ | ০২ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

খুলনা অফিস
খুলনার আঠারোবেঁকী নদী -যাযাদি
খুলনার আঠারোবেঁকী নদীর কোণঘেঁষে রূপসা উপজেলার বিল শ্রীরামপুর গ্রামে ওয়াপদা বেড়িবাঁধের প্রায় আটশ' মিটার অংশ হুমকির মুখে রয়েছে। চার শতাধিক কৃষক আবাদি জমিতে চাষাবাদ করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। কিন্তু কতিপয় ইটভাটা মালিক ব্যক্তি স্বার্থে চর দখল করায় বিশাল এলাকাজুড়ে বাঁক সৃষ্টি হয়েছে। ফলে প্রবাহমান নদীর গতিধারা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতে জোয়ারের সময় পানির তোড় এসে বিপরীত পাড়ে লেগে প্রায়ই ভাঙনের সৃষ্টি হচ্ছে। জানা গেছে, খুলনার রূপসা উপজেলার শ্রীরামপুর, নেহালপুর, কিসমত খুলনা, নৈহাটী, চর শ্রীরামপুর এলাকায় প্রায় চার শতাধিক কৃষক আঠারোবেঁকী নদীর তীরে চাষাবাদ করে আসছেন। শ্রীরামপুর পালপাড়া ও মালোপাড়া হতে মেসার্স এনবিআই ইটভাটা পর্যন্ত প্রায় ৮০০ মিটার ওয়াপদা বেড়িবাঁধ ভাঙনের কবলে। সরকারি, বেসরকারি দুই কোটি টাকা ব্যয় করেও ভাঙন রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে ২০২২ সালে ভাঙন রোধে কৃষক ও কয়েক গ্রামের সচেতন মহলের চাপের মুখে আঠারোবেঁকী নদীর তীরে গড়ে ওঠা কাজী বেলায়েত হোসেন বিকুর এফবিএম, সালাম জমাদ্দারের মেসার্স টাটা ব্রিকস, ইসহাক সরদারের ইটের ভাটার সামনে নদীর তীরের বাঁকটি কেটে ফেলার জন্য সরকারিভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ঊর্ধ্বতন মহলের হস্তক্ষেপে শ্রীরামপুর বিল পানি ব্যবস্থাপনায় সমবায় সমিতি লি. কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় উপজেলা প্রশাসনের উপস্থিতিতে বাঁকটি কেটে উন্মুক্ত করে দেওয়ার জন্য খনন কাজ শুরু হয়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্রায় একযুগ ধরে ওয়াপদা বেড়িবাঁধে ভাঙন লেগেই আছে। ভুক্তভোগী কৃষক ও এলাকার একাধিক সচেতন মহলের মন্তব্য রূপসা উপজেলার শ্রীফলতলা ইউনিয়নের ভদ্রাগাতি গ্রামের কোলঘেঁষে আঠারোবেঁকী নদীর তীরে গড়ে উঠেছে এফবিএম ব্রিকসসহ একাধিক ইটভাটা। প্রতিবছর একটু একটু করে চর দখল করায় বিশাল এলাকাজুড়ে বাঁক সৃষ্টি হয়েছে। আর বাঁক সৃষ্টি হওয়ায় নদীর প্রবাহমান গতিধারা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। জোয়ারের সময় প্রবল স্রোতে বাঁকে বাধা পেয়ে নদীর বিপরীত পাড়ে এসে আঘাত হানছে। এতে শ্রীরামপুর বিলের ওয়াপদা বেড়িবাঁধ চরম হুমকির মুখে। বেড়িবাঁধ ভেঙে গেলে ৩৮২ হেক্টর তিন ফসলি জমি নষ্ট হয়ে যাবে। ওয়াপদা বেড়িবাঁধ সংস্করের জন্য সমিতির মাধ্যমে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় এ পর্যন্ত প্রায় ১১ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। শ্রীরামপুর বিল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক মোমরেজ আলী বলেন, বেড়িবাঁধ রক্ষা করতে হলে ইটভাটার সামনে নদীর চরে গড়ে তোলা বাঁক কেটে উন্মুক্ত করে দিতে হবে। শ্রীরামপুর গ্রামের বাসিন্দা কৃষক সাব্বির শেখ বলেন, কয়েকজন ইটভাটা মালিক আঠারোবেঁকী নদীর তীরে প্রতিবছর ইটপাটকেল ফেলে চর দখল করছে। বিশাল এলাকাজুড়ে চর দখল করায় বড় ধরনের বাঁক সৃষ্টি হওয়ায় নদীর প্রবাহমান গতিধারা রোধ করা হয়েছে। ফলে জোয়ারের সময় পানির স্রোত বাঁকে বাধা পেয়ে ওয়াপদা বেড়িবাঁধে আঘাত হানছে। দখল করা নদীর বাঁক ড্রেজার মেশিন দিয়ে কেটে উন্মুক্ত করা হলে নদী যেমন তার স্বাভাবিক গতিপথ ফিরে পাবে, অন্যদিকে কৃষকরা বেড়িবাঁধ ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা পাবে। সমিতির সদস্য দাউদ আলী শেখ বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের বরাদ্দকৃত অর্থে ড্রেজার নিয়ে নদী খননের ব্যবস্থা করতে হবে। নদী খননের সময় দীর্ঘ বাঁক কেটে ফেললে বেড়িবাঁধ ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা পাবে।