দেড় বছর মিয়ানমারে জেল খেটে নারায়ণগঞ্জ জেলাপ্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় আড়াইহাজারের ১১ জন যুবক তাদের পরিবারের কাছে ফিরে এসেছেন। রোববার বিকালে কক্সবাজার থানা থেকে পরিবারের কাছে ১১ যুবককে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এর আগে শনিবার রাতে মিয়ানমার জেলখানা থেকে মুক্তি পেয়ে কক্সবাজার থানায় আনা হয় তাদের।
অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রাম ওকাপ'র আড়াইহাজার অফিসের ফিল্ড অফিসার আমিনুল হক জানান, ২০২৩ সালের ২০ জুলাই বিশনন্দী ইউনিয়নের ১১ জন যুবক জাহাজ দিয়ে মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হাতে আটক হন।
ফিরে আসা ১১ যুবক হলেন- উপজেলার মানিকপুর গ্রামের হোসেন মিয়ার ছেলে নাদিম মিয়া, চৈতনকান্দা গ্রামের হেলালউদ্দিন মিয়ার ছেলে রতন মিয়া, একই গ্রামের হেকিম মিয়ার ছেলে আছান মিয়া, উলুকান্দি গ্রামের নুর আলামিনের ছেলে মনির হোসেন, বিশনন্দী গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে সজীব ইসলাম, একই গ্রামের আবেদ আলীর ছেলে কবির হোসেন, শরীফপুর গ্রামের মাজু মিয়ার ছেলে জুয়েল মিয়া, বিশনন্দী গ্রামের ডালিম মিয়ার ছেলে সজীব মিয়া, চৈতনকান্দা গ্রামের ইছাক হোসেনের ছেলে সাফায়েত হোসেন, একই গ্রামের বাচ্চু মিয়ার ছেলে সফিকুল ইসলাম ও একই গ্রামের আমির আলীর ছেলে রফিকুল ইসলাম।
ওকাপ'র ফিল্ড অফিসার আমিনুল হক জানান, ২০২৩ সালের ৫ এপ্রিল থেকে অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে ওকাপ কর্মীরা জেনেছেন বিশনন্দী ইউনিয়নের মানিকপুর ও কড়ইতলা গ্রামসহ বিভিন্ন এলাকার ৩৩ যুবক মালয়েশিয়ায় গেছেন। তাদের মধ্য থেকে কয়েকজন মালয়েশিয়ায় পৌঁছেছেন। কিছু রাস্তায় আছেন। কিছু লোক নিখোঁজ রয়েছেন। ২০২০ সালে ১১ মে থেকে নানাভাবে তথ্য সংগ্রহ করে মিয়ানমারে আটকা পড়া ১৩ জনের তালিকা তৈরি করে ওকাপ। ১৯ জুন আটকা পড়াদের ফিরিয়ে আনতে জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে পরামর্শ চাওয়া হয়। প্রবাসী কল্যাণ ডেক্স, নারায়ণগঞ্জের কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত আবেদন করার পরামর্শ দেন। ৫ জুলাই উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ভুক্তভোগী পরিবার প্রয়োজনীয় কাগজ ও ছবিসহ জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত আবেদন করেন।
জানা গেছে, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের স্বপ্ন দেখিয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠছেন পাচারকারীরা। এ চক্রের ফাঁদে পা দিয়ে অন্য এলাকার মতো আড়াইহাজারের স্বপ্নচারী যুবকরা সর্বস্ব হারাচ্ছেন। মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ভারত, শ্রীলংকা, লিবিয়া, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে আটকে রেখে অমানুষিক ভয়াবহ নির্যাতন করা হয়। এরই মধ্যে অনেককে বাড়ি ফিরতে হয়েছে নিঃস্ব হয়ে।
আড়াইহাজার থানার ওসি এনায়েত হোসেন জানান, 'আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ১১ যুবকের তালিকা তৈরি করে তাদের কক্সবাজার থানায় রিসিভ করার জন্য কাজ করছি। কেউ যাতে মানব পাচারের শিকার না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।'
আড়াইহাজার ইউএনও নাহিদুর রহমান জানান, যারা ফিরে এসেছে তাদের ধন্যবাদ জানাই। এসব ঘৃণিত কাজে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।