ঈশ্বরদীতে অস্থির চালের বাজার কেজিতে বেড়েছে ৮ টাকা
প্রকাশ | ০১ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি
পাবনার ঈশ্বরদীতে পাইকারি এবং খুচরা চালের বাজার হঠাৎ অস্থির হয়ে উঠেছে। এতে মোটা এবং চিকন চালের আকার ভেদে প্রতি কেজি চালে ৬-৮ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। মাসের ব্যবধানে চালের দামের এই তারতম্যের কারণে বিপাকে পড়েছে নিম্নআয়ের মানুষ। তবে চাল ব্যবসায়ীরা এর জন্য ধানের মূল্যবৃদ্ধিকে দায়ী করছেন।
ঈশ্বরদী উপজেলার বড়ইচারা, জয়নগর, শিমুলতলা, দাশুড়িয়া, মুলাডুলি, আওতাপাড়া, সিলিমপুর, ঢুলটি এবং ঈশ্বরদী বাজারের খুচরা চাল বিক্রেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, আঠাশ, গুটিস্বর্ণা, স্বর্ণা ৫, উনপঞ্চাশ, ধানিগোল্ডসহ সব রকম মোটা চালে প্রতি কেজিতে দাম বেড়েছে ৬-৮ টাকা। আর মিনিকেট, বাসমতি কাটারিসহ সব চিকন চালে দাম বেড়েছে কেজি প্রতি প্রায় ১০ টাকা।
খুচরা বাজারেই চালের এমন ঊর্ধ্বমুখী দাম কিনা জানতে চাইলে ঢুলটি বাজারের এনামুল স্টোরের স্বত্বাধিকারী এনামুল ইসলাম বলেন, 'উপজেলার সবচেয়ে বড় চিকন চালের বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান ভাই ভাই কোম্পানি গত ১ মাস ধরে ৫০ কেজির প্রতি বস্তায় মূল্য বৃদ্ধি করেছে ৩০০ টাকা। আমরা যারা খুচরা দোকানদার তার থেকে চাল কিনে খুচরা বাজারে বিক্রি করি, তারা কীভাবে কমে বিক্রি করব বলেন।'
দাশুড়িয়া বাজারের রহিম ও সুজন বলেন, 'পাইকারদের থেকে চাল কিনতেই হচ্ছে বেশি দামে, কম দামে কীভাবে বিক্রি করব।'
রহিম বলেন, 'গত ১ মাস আগেও আঠাশ চাল বিক্রি করেছি ৫৪ টাকা এখন বিক্রি করতে হচ্ছে ৬০ টাকা। এর নিচে বিক্রি করতে পারছি না। কারণ এখন আমাদের কেনা পড়ছে বেশি, তাই বিক্রিও করছি একটু বেশি দামে।'
সুজন বলেন, 'মিনিকেট কাটারি আগে বিক্রি করতাম ৬০ টাকা এখন ৬৮ টাকার কমে বিক্রি করতে পারছি না। হঠাৎ দাম বাড়ায় কাস্টমারদের সঙ্গেও বেশি কথা বলতে হচ্ছে। আবার বিক্রিও কম হচ্ছে। চালের দাম বাড়লে আমরা কি করব। যেমন কিনি, তেমন বিক্রি করি।'
চালের বাজার হঠাৎ বাড়ার পেছনে কোনো সিন্ডিকেট জড়িত কিনা জানতে চাইলে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে যায়যায়দিনকে বলেন, ঈশ্বরদীতে কয়েকজন বড় চালের ব্যবসায়ী আছেন। তাদের গোডাউনে ঈশ্বরদীবাসীকে আগামী ছয় মাস খাওয়ানো সম্ভব এমন চাল মজুত আছে। শুধু তাই নয়, তারা ঈশ্বরদীর বিভিন্ন মিল থেকে চাল কিনে গুদামে মজুত রেখে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে।
জয়নগর সাকড়েগারী এলাকার চালের পাইকার শিপন এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শিপন বিশ্বাস বলেন, 'ধানের দাম বেশি হওয়ায় চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা ধান কিনে চাল করে সেই চাল বিক্রি করি। এতে প্রতি বস্তা চালে প্রায় ৭০-৮০ টাকা লস হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে কতদিন ব্যবসা চালাতে পারব, সেটা নিয়েই অনিশ্চয়তা আমাদের। বড়ইচারা মন্ডল রাইচের ম্যানেজার তাজ বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর চালের দাম তুলনামূলক বেশি। এ ছাড়া অটো এবং হাসকিং মিলের চালের দামের তারতম্যের কারণে খোলা বাজারে এর বড় প্রভাব পড়েছে।
চালের পাইকার ছাইদার হাজি বলেন, ধানের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ঈশ্বরদীর অধিকাংশ হাসকিংমিল (চলমান) বন্ধ রেখেছে ব্যবসায়ীরা। যে অটোগুলো আছে, সেগুলোও চলছে ধুঁকে ধুঁকে। তবে সিন্ডিকেট করে ব্যবসা করছে কুষ্টিয়া এবং নওগাঁর ব্যবসায়ীরা। মূলত তাদের সিন্ডিকেটের কারণেই চালের বাজারে এই অস্থিরতা। ঈশ্বরদী ইপিজেড মোড় এলাকার ব্যবসায়ী মোরসালীন হোসেন বলেন, বাজারে বর্তমানে চালের বাজার চড়া। আপাতত ২ মাসের মধ্যে কমার কোনো সম্ভাবনাও নেই। তবে কুষ্টিয়া অঞ্চলে কিছু আগাম জাতের মোটা ধান মাড়াই শুরু হয়েছে। আগামী ২ মাসের মধ্যে পুরোদমে নতুন ধান উঠলে হয়তো বা চালের দাম কমতে পারে।