দখল করা হয়েছে অন্তত ৭ কোটি টাকার জমি

দখলদারিত্বে দিন দিন ছোট হয়ে আসছে মৌলভীবাজারের 'বেরি লেক'

প্রকাশ | ০১ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

স্টাফ রিপোর্টার মৌলভীবাজার
মৌলভীবাজারের দৃষ্টিনন্দন 'বেরি লেক' -যাযাদি
মৌলভীবাজার শহরের একমাত্র দৃষ্টিনন্দন 'বেরি লেক' দিনের পর দিন বেদখলে গিয়ে সীমানা ছোট হয়ে আসছে। বছরের পর বছর প্রাকৃতিক কোলাহলমুক্ত পরিবেশে অবস্থিত এই লেকের কোনো তদারকি না করায় নিজের অস্তিত্ব হারিয়েছে জায়গাটি। লেকের মোট ১১২৬.৩ শতক জমির মধ্যে শুধু জলসীমা ছাড়া সবই বেদখলে চলে গেছে। এতে দখল করা হয়েছে অন্তত ৭ কোটি ২৫ লাখ টাকার জমি। মৌলভীবাজার পৌরসভা কার্যালয় জানায়, জেলা প্রশাসনের মালিকানাধীন ১নং খতিয়ানের পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডে অবস্থিত মৌলভীবাজার বেরি লেকটি মানুষের বিনোদনের জায়গা হিসেবে গড়ে তুলতে দায়িত্ব দেওয়া হয় মৌলভীবাজার পৌরসভাকে। ১১২৬.৩ শতক জায়গা নিয়ে বেরি লেক অবস্থিত। এর মধ্যে জলসীমা ৯৭৪ দশমিক ৪ শতক, লেকের উত্তর পাড়ে স্থলসীমা ৪৪ দশমিক ৯৮ শতক, লেকের দক্ষিণে স্থলসীমায় ৪৩ দশকি ২৮ শতক, লেকের পশ্চিম দক্ষিণে পতিত জমি ৫৭ শতক ও কবরস্থানের আরও ৭ শতক জমি মিলে সর্বমোট ১১২৬ দশমিক ৩ শতক। স্থানীয়দের হিসেবে লেকে দখলকৃত জমির পরিমাণ প্রায় ১৪৫ শতক। প্রতি শতক জমির দাম সর্বনিম্ন ৫ লাখ টাকা ধরা হলে ১৪৫ শতক জমির দাম পড়ে ৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা। সরেজমিন গেলে জলসীমা ছাড়া লেকের চার পাশে অবশিষ্ট তেমন কোনো জায়গা পাওয়া যায়নি। চারদিকে শুধু বাসা-বাড়ি, যত্রতত্র গাড়ি-পার্কিং, ছাগলের হাট ও ভ্রাম্যমাণ দোকান-পাট দৃশ্যমান হয়। স্থানীয়রা জানান, বিভিন্ন পৌর মেয়রের আমলে নামকাওয়াস্তে লেকের উন্নয়নে হাত দেওয়া হলেও সেটি এগিয়ে যায়নি। লেকের চারপাশে যত্রতত্র দোকানপাট, পাকা-আধাপাকা স্থাপনা গড়ে ওঠায় দূর থেকে লেকটি দৃশ্যমান হয় না। স্থানীয় ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী ও অবৈধভাবে বসবাসকারীরা যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলে রেখেছেন লেকের জলে। এতে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত। সরেজমিন গেলে অবৈধভাবে দখলদার ব্যবসায়ী দরগাহ মহলস্নার মাসুদ মিয়া জানান, 'লেকে প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার ছাগলের হাট বসে। এখানে মানুষ ময়লা ফেলত। আমি জায়গাটি পরিষ্কার করে ব্যবসা শুরু করেছি।' তিনি বলেন, 'শেখ কাজিম উদ্দিন লেকের ১২ হাল জমি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। ছাত্র আন্দোলনের আগে পৌরসভা থেকে আমার কাছে লোকজন এসে জায়গা ব্যবহার করায় আমার কাছে চাঁদা দাবি করে। আমি বলেছি, পৌরসভার রসিদ দিলে টাকা দেব। পরে তারা রসিদ না দেওয়ায় আমি আর টাকা দেইনি। আন্দোলনের পর ওদের দেখতে পাইনি।' পৌরসভা কাউন্সিলর আনিছুজ্জামান বায়েছ বলেন, লেকের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য একনেকে একটি প্রজেক্ট পাস হয়েছিল। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হওয়ায় এটি কোন পর্যায়ে আছে তা বলা যাচ্ছে না। ২০ বছর আগে লেকে একটি শিশু পার্ক ছিল। পরে অনেকে জবরদখল করে ঘরবাড়ি বানিয়েছেন। পৌরসভার সাবেক মেয়র ফয়জুল করীম ময়ুন বলেন, 'আমি দায়িত্ব ছাড়ার আগে লেকের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য একশ' কোটি টাকার একটা ফান্ড তৈরি হয়েছিল। ওই খাতে পরবর্তীতে কত টাকা আসছে আমার জানা নেই। ওই লেক নিয়ে একটা মামলাও রয়েছে।' মৌলভীবাজার পৌরসভা প্রশাসক মলিস্নকা দে বলেন, লেকের জবরদখলের বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে বিষয়টি দেখছি।