সম্প্রতি অতিবৃষ্টি ও অস্বাভাবিক জোয়ারে লক্ষ্ণীপুরের রামগতি উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় প্রথমত জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। পরবর্তী সময়ে উজান থেকে নেমে আসা পানির চাপে তিনটি ইউনিয়নে স্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে ভয়াবহ বন্যায় রূপ নেয়। এই ভয়াবহ বন্যায় উপজেলার চর পোড়াগাছা, চর বাদাম ও চর আলগী ইউনিয়নের ১৪টি ওয়ার্ডের ১০টি গ্রাম প্রায় দুই মাস পানিতে তলিয়ে থাকে। এসব এলাকাসহ উপজেলার অন্যান্য এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে বীজতলা ও শস্যক্ষেত মাছের খামার পুকুর জলাশয় ডুবে যায়। এছাড়াও এসব এলাকার বসতবাড়ি, অবকাঠামো, রাস্তা-ঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, বিদু্যৎ মসজিদ মন্দিরসহ অন্যান্য খাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সরকারি হিসাব নিরূপণে এই ক্ষতির পরিমাণ টাকার অঙ্কে একশ' কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যায় উপজেলার চর আলগী, চর বাদাম ও পোড়াগাছা ইউনিয়নের ১৪টি ওয়ার্ড পানির নিচে তলিয়ে থাকে। এছাড়া উপজেলার অন্যান্য এলাকায়ও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এতে করে এসব এলাকার বসতবাড়ি, অবকাঠামো, রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, বিদু্যৎসহ অন্যান্য খাতে একশ' তিন কোটি ২১ লাখ ১৯ হাজার ৯৮৪ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
এর মধ্যে সোয়া চার কোটি টাকার সাড়ে ৮শ' কাঁচা বসতঘর, ৩৪ লাখ ১০ হাজার টাকার ৬ হাজার ৯৯টি ছাগল, গরু, মহিষ ও মুরগি, ৫২ কোটি ২ লাখ ১৯ হাজার টাকার ৪৫০ হেক্টর বীজতলা ও ২ হাজার ২১০ হেক্টর শস্যক্ষেত, ৯ কোটি ৮০ লাখ টাকার ৭৬০ হেক্টরের সাড়ে ৭ হাজার পুকুর, জলাশয় ও খামারের মাছ, ৫ লাখ টাকার ১০ কি.মি. বিদু্যৎ লাইন, ৩০ লাখ টাকার ৬০টি মসজিদ, ৪ কোটি ২ লাখ টাকার ১৫টি ব্রিজ, ৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকার ২৭টি কালভার্ড, ২০ কোটি ২৫ লাখ টাকার ১২০ কি. মি. কাঁচা, পাকা ও আধাপাকা সড়ক, ৬১ লাখ ১১ হাজার টাকার, ৫৮ কি.মি. বাঁধ, ৬৩ লাখ ২৯ হাজার টাকার ৪৮টি প্রাথমিক, কমিউনিটি, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা, সোয়া কোটি টাকার সাড়ে ৭শ গভীর-অগভীর নলকূপ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বিনামূল্যে বীজ, সার ও নগদ অর্থ বিতরণ করা হয়েছে। বন্যায় ফসলের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবং আমন আবাদে উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ প্রণোদনা দেওয়া হয়।
ইউএনও সৈয়দ আমজাদ হোসেন বলেন, এবারের বন্যায় উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের ১৪টি ওয়ার্ডে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া উপজেলার অন্যান্য এলাকায়ও বীজতল ও শস্যক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এসব ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করে ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা প্রদান করা হবে।