পরিষ্কারের দায়িত্ব নিচ্ছে না পাউবো ও বনবিভাগ
ময়লা-কচুরিপানায় ভরাট হচ্ছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম লেক মহামায়া
মহামায়া সেচ প্রকল্পের আওতায় ৫শ' হেক্টর বোরো ও ২৫০ হেক্টর রবি-সবজির আবাদ
প্রকাশ | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
ইকবাল হোসেন জীবন, মিরসরাই (চট্টগ্রাম)
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে অবস্থিত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মহামায়া লেকটি ময়লা আবর্জনা ও কচুরিপানায় ভরাট হয়ে যাচ্ছে। চলতি বছর পর্যটন কেন্দ্রটি ভ্যাট ট্যাক্সসহ প্রায় ২ কোটি টাকায় ইজারা দেওয়া হলেও লেকটি পরিষ্কারের দায়িত্ব নিচ্ছে না বন বিভাগ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। ফলে দিন দিন লেকের পানি হয়ে উঠছে দুর্গন্ধময়। এতে বিপাকে পড়ছে পর্যটকরা।
জানা গেছে, জলাবদ্ধতা ও পাহাড়ি ঢল থেকে নিরসন এবং শুষ্ক মৌসুমে কৃষিখাতে সেচ সুবিধার লক্ষে পানি উন্নয়ন বোর্ড মহামায়া সেচ প্রকল্পের অংশ হিসেবে ১৯৯৯ সালে মহামায়া খালের উপর স্স্নুইস গেট নির্মাণ করে। পরবর্তীতে পুরো প্রকল্প বাস্তবায়নে ২৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়। প্রায় ১১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ প্রকল্পটি রূপ নেয় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম লেকে। ২০১০ সালের ২৯ ডিসেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহামায়া সেচ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পর পাউবো এবং মৎস্য বিভাগ পর্যায়ক্রমে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মহামায়া লেকে ৩০ টন মাছের পোনা অবমুক্ত করে। মহামায়া সেচ প্রকল্প নির্মাণের পর উপজেলা সদর ইউনিয়ন, দুর্গাপুর, কাটাছড়া, ইছাখালী ও ধুম ইউনিয়নের, আংশিক ও মিরসরাই পৌরসভার প্রায় ৫শ' হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হচ্ছে। আবাদ হচ্ছে ২৫০ হেক্টর জমিতে রবি- ফসল ও গ্রীষ্মকালীন সবজি।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর ভ্যাট ও ট্যাক্স ছাড়া ১ কোটি ৪১ লাখ টাকায় মহামায়া ইকো পার্ক ইজারা নেয় 'হক এন্ড এসোসিয়েট'। ইতোমধ্যে বন বিভাগ তথ্য কেন্দ্র নির্মাণসহ বেশ কিছু উন্নয়ন কাজ করেছে। সড়ক সংস্কারের কাজ করেছে পাউবো।
সরেজমিন মহামায়া ইকো পার্কে গিয়ে দেখা যায়, লেকের পানি থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। পর্যটকদের ফেলা খাবারের প্যাকেট ও পানির বোতল লেকের পানিতে ভাসছে। কচুরিপানায় ভরাট হয়ে গেছে লেকের কিছু অংশ।
এ সময় চট্টগ্রাম থেকে ঘুরতে আসা আশিক হোসেন নামে এক পর্যটকের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, আগে লেকের পানি অনেক সুন্দর ছিল। কিন্তু সম্প্রতি লেকটি ময়লা আর্বজনা ও কচুরিপানায় ভরাট হয়ে যাচ্ছে। লেকের পানিতে এখন কাইকিং করতে অসুবিধা হয়। অথচ শীত মৌসুমে মহামায়া হয়ে উঠবে পর্যটকে ভরপুর। তাই দ্রম্নত লেকটি পরিষ্কার করা প্রয়োজন।
জানতে চাইলে বন বিভাগ উত্তরের মিরসরাই রেঞ্জ কর্মকর্তা শাহান শাহ নওশাদ বলেন, লেকের পানি পরিষ্কারের দায়িত্ব পাউবো'র। লেকের পানি পরিষ্কার ও সড়ক সংস্কারে জন্য আমরা গত বছর মন্ত্রণালয় বরাবর একটি চিঠি লিখেছি। সড়কটি সংস্কার হলেও পানি পরিষ্কার হয়নি। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ডিএফও বরাবর আরও একটি চিঠি লিখেছি। কিছু দিন আগে পাউবো'র এক কর্মকর্তাকে জানালে তিনি লেক পরিষ্কারের বরাদ্দ নেই বলে জানান।
লেকের পানি পরিষ্কারের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম পাউবো'র উপ-সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল কাদের বলেন, লেকের পানি পরিষ্কারের দায়িত্ব পানি উন্নয়ন বোর্ডের নয়। এটি করবে বন বিভাগ। কারণ মহামায়া ইজারা দিয়ে যে রাজস্ব আদায় হয় তা বন মন্ত্রণালয়ে জমা হয়ে থাকে। আমরা শুধুমাত্র পানি নিষ্কাশনের মাধ্যমে কৃষকদের চাষাবাদ নিশ্চিত করি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মহামায়ার পানি দিয়ে উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার কৃষকরা চাষাবাদ করে থাকে।
পর্যটক ও সচেতন মহলের প্রশ্ন তাহলে মহামায়া লেকের পানি পরিষ্কারের দায়িত্ব কার নাকি দূষণ ও ময়লা আবর্জনা ভরাট হবে দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই লেকটি। যদি মহামায়া লেক তার সৌন্দর্য হারায় সরকার হারাবে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব।