সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫ আশ্বিন ১৪৩১

ুএবার জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার 'ছানামুখী মিষ্টি'

মো. বাহারুল ইসলাম মোলস্না, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
  ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার 'ছানামুখী মিষ্টি' -যাযাদি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রসিদ্ধ ছানামুখী ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনের আবেদনের প্রেক্ষিতে এই মিষ্টান্ন্ন জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেলো। শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

ডিপিডিটি কোনো পণ্যের জিআই স্বীকৃতি দেয়। কোনো একটি দেশের নির্দিষ্ট ভূখন্ডের মাটি, পানি, আবহাওয়ার প্রেক্ষাপটে সেখানকার জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি যদি কোনো একটি পণ্য উৎপাদনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তাহলে সেটিকে সেই দেশের জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। কোনো একটি পণ্য চেনার জন্য জিআই স্বীকৃতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রসিদ্ধ মিষ্টান্ন জাতীয় খাবার ছানামুখী। দিন দিন দেশজুড়ে বাড়ছে এর খ্যাতি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে আছে চারকোনা বিশিষ্ট এই ছানামুখীর নাম। ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার মন্ডা, বগুড়ার দই, নাটোরের কাঁচাগোলস্না, টাঙ্গাইলের চমচম ও নেত্রকোনার বালিশ মিষ্টির মতো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখীর কদরও পুরো দেশজুড়ে। চিনির আবরনে থাকা দুধের ছানা দিয়ে তৈরি এক ধরণের বিশেষ মিষ্টান্নের নাম ছানামুখী। বৃটিশ আমল থেকেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রসিদ্ধ এই ছানামুখীর সুনাম দেশজুড়ে। দিন দিন দাম বাড়ার সঙ্গে বাড়ছে এর কদরও। ভোজন রসিকদের কাছে রয়েছে ছানামুখীর বিশেষ কদর। অতিথি আপ্যায়নে এর জুড়ি নেই। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লোকজন অন্য জেলায় আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গেলে সঙ্গে নিয়ে যান ছানামুখী। আবার বাইরের জেলা থেকে কেউ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বেড়াতে আসলেও তাকে ছানামুখী দিয়ে আপ্যায়িত করা হয়। বিদায় বেলায় তাকেও দিয়ে দেওয়া হয় ছানামুখী।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখীর ইতিহাস শত বছরের। লোকমুখে শোনা যায়, ভারতের কাশিধাম থেকে আসা মহাদেব পাঁড়ে নামে এক মিষ্টি কারিগর প্রথমে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি দোকানে দুধের ছানা দিয়ে ছানামুখী নামে মিষ্টি বানানো শুরু করেন। তৎকালীন সময়ে বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার মেড্ডায় শিবরাম মোদকের একটি মিষ্টির দোকান ছিল। শিবরাম মোদক তার নিজের দোকানে মহাদেব পাঁড়েকে আশ্রয় দেন। মহাদেব পাঁড়ে শিবরামের দোকানে দুধের ছানা দিয়ে ছানামুখী নামে মিষ্টি বানানো শুরু করেন। এরপর থেকে ছানামুখীর সুনাম ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলে অন্য দোকানীরাও ছানামুখী তৈরি ও বিক্রি করতে থাকেন।

ছানামুখী দেখতে চারকোণা আকৃতির। উপরে দিকটায় হালকা চিনির আবরণ থাকে। আর পুরোটাই তৈরি করা হয় দুধের ছানা দিয়ে। একেকটা ছানামুখীর ওজন হয় ১০ থেকে ১৫ গ্রাম। সেই হিসেবে কেজিতে গড়ে ৮০-৯০পিস ছানামুখী পাওয়া যায়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের ডা. ফরিদুল হুদা রোড, মহাদেব পট্টি ও টি.এ. রোডের কয়েকটি দোকানে তৈরি করা হয় এই ছানামুখী। এর মধ্যে ভোলাগিরি মিষ্টান্ন ভান্ডার, আদর্শ মাতৃ মিষ্টান্ন ভান্ডার, মাতৃ মিষ্টান্ন ভান্ডার, মধুরাজ মিষ্টান্ন ভান্ডার, ভোলানাথ মিষ্টান্ন ভান্ডার, আনন্দময়ী মিষ্টান্ন ভান্ডারের ছানামুখীসহ বেশ কয়েকটি দোকানের ছানামুখী বেশ প্রসিদ্ধ।

সংশিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এক কেজি ছানামুখী তৈরি করতে গাভীর ৭-৮ লিটার দুধ লাগে। প্রথমে দুধ ভালো করে জ্বাল দিয়ে ঠান্ডা করে ছানায় পরিণত করা হয়। ওই ছানা পরিস্কার কাপড়ে বেধে ঝুলিয়ে রেখে পানি ঝড়ানো হয়। পরে শক্ত হয়ে যাওয়া ছানা ছোট ছোট করে প্রায় সমান আকৃতির কাটা হয়। এরপর পানি, চিনি ও এলাচির মিশ্রণে তৈরি করা শিরায় ছানার টুকরো ছেড়ে দিয়ে নাড়া হয়। পরে শিরা থেকে ছানা তুলে ঠান্ডা করা অর্থাৎ শুকানো হয়।

জানা গেছে, জেলা তথ্য বাতায়নে পুরানো ও ঐতিহ্যবাহী খাবার হিসেবে উলেস্নখ আছে এই ছানামুখীর নাম। প্রতি কেজি ছানামুখীর দাম ৭০০ টাকা। এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সাইফুল ইসলাম বলেন, ছানামুখী জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। সরকারিভাবে ছানামুখীকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ব্র্যান্ডিংয়ের আওতায় আনা হয়েছে। জেলার ব্র্যান্ডবুকেও একে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। বিদেশী অতিথিসহ মন্ত্রী পর্যায়ের যারাই আসেন, ছানামুখী দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে