শেরপুরে ব্যতিক্রমী বিয়ের উদ্যোগ

'মহা ধুমধামে আমার বিয়ে হবে, কখনো ভাবিনি'

প্রকাশ | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি
ওমর ফারুক-আঁখি আক্তার দম্পত্তি -যাযাদি
'অভাবের সংসার। তাই শিশু বয়স থেকে খুবই কষ্টে বড় হয়েছি। বাবা অন্যের একটি ট্রাক চালিয়ে যা আয় করেন, তা দিয়েই কোনো রকমে সংসার চলত। নিজস্ব কোনো জমি ও বাড়িঘর নেই। পৌরসভার জায়গার ওপর তোলা খুপরি ঘরেই বসবাস। অর্থের অভাবে পড়াশোনা শিখতে পারিনি। দুই বোন এক ভাইকে নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তা করতেন দরিদ্র বাবা-মা। এমন পরিস্থিতিতে কখনো ভাবিনি এত ধুমধামে আমার বিয়ে হবে। তবে এই আয়োজন দেখে বুঝলাম, যাদের কেউ নেই, তাদের জন্য আলস্নাহ আছেন।' গত শুক্রবার বগুড়ার শেরপুর পৌরশহরের ধুনটমোড় এলাকায় আয়োজিত বিয়ের আসরে কথাগুলো বলছিলেন কনে মোছা. আঁখি আক্তার। তার বাবার নাম আকরাম হোসেন এবং মার নাম মঞ্জুয়ারা বেগম। উপজেলার শাহবন্দেগী ইউনিয়নের রহমতপুর এলাকায় থাকেন তারা। আর বরের নাম ওমর ফারুক। একই ইউনিয়নের মামুরশাহী গ্রামের বাসিন্দা হযরত আলী ও পারুল বেগমের ছেলে তিনি। শেরপুর-ধুনট বন্দর মটর শ্রমিক কল্যাণ সংস্থার উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী জমকালো আয়োজনে ওই বিয়ে দেওয়া হয়। আলোকসজ্জা, তোরণ, কনে ও বরের মঞ্চ, কনে সাজানোর জন্য বিউটিশিয়ান, ভিডিও ধারণ কোনো কিছুরই কমতি ছিল না এই অনুষ্ঠানে। বরযাত্রীসহ আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন- প্রায় পাঁচ শতাধিক। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আকরাম হোসেনের পরিবারের সদস্য সংখ্যা পাঁচজন। তার স্ত্রী ছাড়াও দুই মেয়ে এক ছেলে রয়েছেন তাদের সংসারে। এর মধ্যে বেশকিছু দিন আগেই বড় মেয়ের বিয়ে হয়। অভাব-অনটনের কারণে আঁখির বিয়ে নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিল পরিবারটি। টাকার অভাবে বিয়ে দিতে পারছিলেন না। বিষয়টি জানতে পারেন শেরপুর-ধুনট বন্দর মটর শ্রমিক কল্যাণ সংস্থার উপদেষ্টা ও নেতারা। এরপর আকরাম হোসেনকে মেয়ের বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক করতে বলেন তারা। বিয়ের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে থাকা আবু হানিফ নামের এক ব্যক্তি বলেন, সংস্থাটির পক্ষ থেকে বিয়ের যাবতীয় খরচসহ সব আয়োজন করা হয়েছে। এমনকি স্বর্ণালঙ্কার দিয়ে বর-কনে সাজানো ও সংসারে প্রয়োজনীয় যাবতীয় সামগ্রী, আসবাবপত্র উপহার দেওয়া হয়। এটি সম্ভব হয়েছে সংস্থাটির উপদেষ্টা শেরপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র জানে আলম খোকা ও শ্রমিক নেতা আরিফুর রহমান মিলনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার কারণে। আবেগে আপস্নুত কনে আঁখির বাবা আকরাম হোসেন বলেন, কখনো ভাবেননি তার মেয়ের এত বড় আয়োজনে বিয়ে হবে। এ জন্য শ্রমিক সংস্থাটির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। শেরপুর-ধুনট বন্দর মটর শ্রমিক কল্যাণ সংস্থার উপদেষ্টা জানে আলম খোকা ও আরিফুর রহমান মিলন বলেন, সংস্থাটির পক্ষ থেকে কন্যাদায়গ্রস্ত হতদরিদ্র্র শ্রমিক পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর কেবল উদ্যোগ নেওয়া হয়। তাদের পাশাপাশি স্থানীয় অনেকেই এই মহতি কাজে সহযোগিতা করেছেন। এ ধরনের কাজ অব্যাহত রাখার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তারা।