চাহিদার তুলনায় ত্রাণ সরবরাহ কম অনাহারে অর্ধাহারে পানিবন্দিরা

অভয়নগরে ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা

প্রকাশ | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

অভয়নগর (যশোর) প্রতিনিধি
যশোরের অভয়নগরে ভবদহ এলাকায় জলাবদ্ধ বসতঘর -যাযাদি
যশোরের ভবদহ অঞ্চলের অভয়নগর উপজেলায় টানা বৃষ্টিপাত ও নদীর পানি ঢুকে পড়ায় স্থায়ী জলাবদ্ধতার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টি বন্ধ হলেও জলাবদ্ধ গ্রামে নতুন করে পানি বাড়তে শুরু করেছে। উপজেলার চলিশিয়া, পায়রা, সুন্দলী ও প্রেমবাগ ইউনিয়নের ২৫ গ্রাম ছাড়াও নতুন করে আরও ৫ গ্রামে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ১৩ হাজার মানুষ। এদিকে, চাহিদার তুলনায় জলাবদ্ধ এলাকায় ত্রাণ সরবরাহ কম হচ্ছে। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ করলেও তা পর্যাপ্ত নয়। যে কারণে শত শত পরিবার অনাহারে অর্ধাহারে মানবেতর জীবনযাপন করছে। ইউএনও বলেছেন, বাড়ি বাড়ি গিয়ে ত্রাণ পৌঁছানো সম্ভব না। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মুশফিকুর রহমান জানান, চলিশিয়া, পায়রা, সুন্দলী ও প্রেমবাগ ইউনিয়নের ৩০ গ্রামের তিন হাজার ৩৫০ পরিবারের প্রায় ১৩ হাজার মানুষ জলাবদ্ধতার শিকার হয়ে পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। গ্রামীণ সড়কগুলোতে এখন হাঁটুপানি। ইতোমধ্যে ১৫টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। যার মধ্যে চলিশিয়া ইউনিয়নে ৬টি, পায়রা ইউনিয়নে ৩টি, সুন্দলী ইউনিয়নে ৪টি, প্রেমবাগ ইউনিয়নে ১টি ও নওয়াপাড়া পৌর এলাকার সরখোলা গ্রামে একটি। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ৩ ধাপে প্রায় ১৫০ পরিবারকে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। প্রথম ধাপে শুকনা খাবার ও ১০ টন চালসহ নগদ এক লাখ টাকা বিতরণ করা হয়। দ্বিতীয় ধাপে জলাবদ্ধ এলাকার ৪টি ইউনিয়ন পরিষদে জেলা প্রশাসক কর্তৃক জিআর (ত্রাণকার্য, চাল ও নগদ অর্থ) বরাদ্দের ১৫ টন চাল ও নগদ ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। তৃতীয় ধাপে পরিবার প্রতি ১০ কেজি চাল, ২ কেজি আলু, ১ কেজি ডাল, ১ লিটার তেল, আধাকেজি লবণ, এক প্যাকেট মশার কয়েল ও ২টি মোমবাতি বিতরণ চলমান রয়েছে। চাহিদার তুলনায় ত্রাণ সরবরাহ কম আসছে। সরেজমিন জলাবদ্ধ গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করা পরিবারগুলো সপ্তাহ অন্তর ত্রাণ সহায়তা পাচ্ছে। কিন্তু প্রত্যন্ত এলাকায় থাকা পরিবারগুলো গত ১৫ দিনেও কোনো ত্রাণ সহায়তা পায়নি। বেসরকারি উদ্যোগে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করলেও তা পর্যাপ্ত না। কিছু সংগঠন ফটোসেশনে সীমাবদ্ধ রেখেছে তাদের ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম। জলাবদ্ধ এলাকায় বাড়িঘরে যাতায়াত করতে নৌকা ও বাঁশের সাঁকো ব্যবহার করতে দেখা গেছে। এ সময় পায়রা ইউনিয়নের দীঘলিয়া গ্রামের হুমায়ন কবীর বলেন, তাদের ইউনিয়নের ভবদহ ও দীঘলিয়া গ্রাম অবহেলিত। কারণ, এই দুই গ্রামের পানিবন্দি ৩২২ পরিবারের মধ্যে মাত্র ১৩৫ পরিবার সরকারি ত্রাণ সহায়তা পেয়েছে। অন্য পরিবারগুলো একই ঘরের মধ্যে গৃহপালিত পশুর সঙ্গে মানবেতর জীবনযাপন করছে। দ্রম্নত পানিবন্দি সব পরিবারকে ত্রাণ সহায়তা বিতরণের আহ্বান জানান তিনি। সুন্দলী ইউনিয়নের আড়পাড়া গ্রামের মুড়ি বিক্রেতা প্রভাত রায় বলেন, 'পরিবারের ৭ জন সদস্য নিয়ে খেয়ে না খেয়ে রয়েছি। এখনো মেলেনি কোনো ত্রাণ সহায়তা।' গত সোমবার পানিবন্দি বিভিন্ন গ্রামের প্রায় ৫০ জন গৃহবধূ ইউএনও'র সঙ্গে দেখা করতে আসেন। এ সময় তারা বলেন, গত ১০ দিন পার হলেও তাদের কাছে কোনো ত্রাণ সহায়তা পৌঁছেনি। পরিবার নিয়ে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটছে তাদের। অভয়নগর ইউএনও জয়দেব চক্রবর্তী বলেন, 'আশ্রয়কেন্দ্রর বাইরে অবস্থান করা পরিবারগুলোকে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে না। আর বাড়ি বাড়ি গিয়ে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া সম্ভব না। তেমন লোকবলও নেই। তবে বরাদ্দ অনুযায়ী প্রতিটি আশ্রয়কেন্দ্রে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানো হচ্ছে। দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করে চাহিদা পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।