ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে বেড়েছে পদ্মা নদীর পানি। ফলে তলিয়ে গেছে ২২শ' হেক্টর জমির ফসল। এর মধ্যে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে ১৭শ' হেক্টর ও নাটোরের লালপুরের চর এলাকার ৫০০ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে যায়। প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত ডেস্ক রিপোর্ট-
দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি জানান, পদ্মার পানি বেড়ে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের চারটি ইউনিয়ন পস্নাবিত হয়ে নিম্নাঞ্চলের জমিতে চাষ করা মাষকলায়ের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সঙ্গে মরিচ, কলাসহ অন্য সবজিতেও এর প্রভাব পড়েছে। অন্তত ১৭শ' হেক্টর জমির আবাদি ফসল ডুবে গেছে। ফলে প্রায় ২৪ কোটি টাকার বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার নুরুল ইসলাম বলেন, উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের পাওয়া তথ্যে জানা গেছে মরিচা, ফিলিপনগর, চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ১ হাজার ৬২০ হেক্টর জমির মাষকলাই পানিতে ডুবে গেছে। এতে অন্তত ২৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকার ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। তা ছাড়া মরিচ ৭০ হেক্টর, কলা ৭৩ হেক্টর ও সবজি ১৩ হেক্টরের মতো পানিতে ডুবেছে, যার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাপ করা এখনই করা সম্ভব না বলেও জানিয়েছেন তিনি। তিনি আরও জানিয়েছেন, এবার চরের ২ হাজার ৩২৩ হেক্টর জমিতে মাষকলাই চাষ করেছিলেন কৃষক।
এদিকে গত বুধবার থেকে ২ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ইতিমধ্যে নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে পড়ায় চার ইউনিয়নের পদ্মার চরের প্রায় ৩৬টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ভাঙন ও বন্যার আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন তারা।
চিলমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান জানান, চরের মাষকলাইয়ের জমি সব ডুবে গেছে। এতে কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তা ছাড়া মরিচ ও সবজির জমিতেও পানি উঠেছে।
রামকৃষ্ণপুর ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজ মন্ডল জানান, পদ্মার চরের প্রায় সব আবাদি জমি তলিয়ে গেছে। এতে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
নদীর পানি বৃদ্ধি নিয়ে আশার কথা জানিয়েছেন পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ওয়াটার হাইড্রোলজি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল করিম। তিনি বলেন, আর পানি বাড়ার আশঙ্কা নেই। দু'এক দিন স্থিতিশীল থেকে পানি কমতে শুরু করবে।
লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি জানান, পদ্মা নদীতে আকস্মিক ব্যাপক পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নাটোরের লালপুর উপজেলার চরাঞ্চলের প্রায় ৫০০ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন কয়েক হাজর কৃষক। এছাড়া ওই এলাকার গোচারণ ভূমি ডুবে যাওয়ায় চরম খাদ্য সংকটে পড়েছেন গরু ও মহিষের খামারিরা। এদিকে আগামী পাঁচ থেকে সাত দিন পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন নাটোর পাউবো'র নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল আলম চৌধুরী।
সরজমিনে পদ্মার চর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গত তিন দিনে পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বিলমাড়ীয়া ইউনিয়নের নওশারা সুলতানপুর, চাকলা বিনোদপুর, দিয়াড়শংকরপুর, আরাজি বাকনাই, রসুলপুর ও মোহরকয়া, লালপুর ইউনিয়নের চরসহ প্রায় ২০টি চর এলাকার জমির ফসল পানিতে ডুবে গেছে। যেসব জমিতে আখ আছে সেগুলোর কিছু জমিতে শুধু ওপরের অংশ দেখা যাচ্ছে। বাকি অংশ পানির নিচে রয়েছে। পানি বৃদ্ধির ফলে চরের গোচারণ ভূমিগুলো ডুবে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন ওই এলাকার শত শত গরু ও মহিষের খামারি।
নওশারা সুলতানপুর গ্রামের কৃষক আকতার আলী জানান, তার প্রায় সাড়ে ছয় বিঘা জমির ফসল একেবারে পানিতে তলিয়ে গেছে, এর মধ্যে আড়াই বিঘা মুলা ও চার বিঘা বেগুনের রয়েছে। এছাড়া আরও প্রায় চার বিঘা জমির আখ ডুবে গেছে। দিয়াড় শংকরপুর গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর আলম জানান, তার প্রায় সাড়ে পাঁচ বিঘা জমির গাজর, মুলা ও বেগুন সম্পূর্ণ ডুবে গেছে।
লালপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার পদ্মার চর এলাকায় প্রায় ৪১০ হেক্টর আখ, ৪৫ হেক্টর শাকসবজি, ১০ হেক্টর কলা ও ১০ হেক্টর মাষকালাই পানিতে তলিয়ে গেছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার প্রীতম কুমার হোড় জানান, নদীর পানি হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়ায় ওই এলাকার ফসল ডুবে গেছে, পানি কমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণ জানা যাবে।
ইউএনও মেহেদী হাসান জানান, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের নির্দেশনা দিয়েছেন সার্বিক খোঁজখবর রাখার জন্য। কৃষি বিভাগ চর এলাকায় গেছে, ফসলের ক্ষতির তালিকা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।