লাবণ্যময়ী সৈকত আর সবুজময় পাহাড়ের অপূর্ব মিতালী সাদৃশ সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার। বালুর আঁচলে যেন ঢেলে দেওয়া হয়েছে বাংলার রুপ। সারি সারি সবুজ ঝাউবীথি, পাহাড়, ঝর্ণা, আর নরম বালিয়াড়ির মধ্যে ১২০ কি.মি. দীর্ঘ সমুদ্র সৈকতের দর্শনীয় স্থান অবলোকন করতে পর্যটকরা কক্সবাজারে ঘুরতে আসেন। সাগরের নীল জলরাশি আর ঢেউয়ের গর্জন সঙ্গে হিমেল হাওয়া মনোমুগ্ধকর পরিবেশ তৈরি করে। আর এই সৈকতে প্রবেশ করতেই কানে ভেসে আসে সাগরের উত্তাল গর্জন। বিশাল জলরাশির তরঙ্গ, এর মধ্যে চোখ ধাঁধানো সূর্যাস্ত চিত্র সবার মনকে প্রশান্তিতে ভরিয়ে তোলে।
বিশ্ব পর্যটন দিবস আজ। সারা বিশ্বের মত কক্সবাজারেও বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। প্রতি বছর পর্যটনের ভূমিকা সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধিসহ সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক মানকে ছড়িয়ে দেওয়া এ দিবসের মূল লক্ষ্য। পর্যটনের মাধ্যমে মানুষ নতুন স্থান, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও ইতিহাসের সঙ্গে পরিচিত হয়। জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থার (ইউএনডবিউটিও) উদ্যোগে ১৯৮০ সাল থেকে এই দিনটি উদযাপন করছে। কক্সবাজারেও বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন ও বাংলাদেশ টু্যরিজম বোর্ডসহ বিভিন্ন পর্যটন সংস্থা দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এবারের প্রতিপাদ্য 'পর্যটন শান্তির সোপান'।
বিশেষজ্ঞরা জানান, দেশে অর্থনীতির সম্ভাবনাময় খাত পর্যটনশিল্প, যা অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। প্রচুর সম্ভাবনাময় এ শিল্প দেশকে উন্নয়নশীল আর্থসামাজিক উন্নয়নে এগিয়ে যাচ্ছে। পর্যটন শিল্পের বিকাশে আমাদের রয়েছে মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, সুপ্রাচীন নিদর্শন। কক্সবাজার পর্যটনশিল্পের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক দিক থেকে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব। বিশ্বে পর্যটকদের কাছে এই অঞ্চলের ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরতে স্থানীয় প্রশাসন, নাগরিক সমাজ, স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন, টু্যর সংগঠনসহ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তা হলেই কক্সবাজারে পর্যটন শিল্প দ্রম্নত পরিচিতি পাবে। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অবদান রাখতে পারবে।
শুধু সমুদ্র সৈকতই নয়, কক্সবাজারে দর্শনীয় স্থানগুলো হল বার্মিজ মার্কেট, হিলটপ রেস্টহাউস, লাবণীপয়েন্ট, পাহাড়ি ঝর্ণা হিমছড়ী, পাথুরে সৈকত ইনানী, নাইক্ষ্যংছড়ি লেক ও ঝুলন্ত ব্রিজ, রামু বৌদ্ধ বিহার, রাবার বাগান, ডুলাহাজরা সাফারি পার্ক, কলাতলী বীচ, লং মেরিন ড্রাইভ, রেডিয়েন্ট ফিশ অ্যাকুরিয়াম, দরিযানগর, নয়নাভিরাম প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন, সোনাদিয়া দ্বীপ, পাহাড়ী দ্বীপ মহেশখালী, রামু লামার পাড়া বৌদ্ধ ক্যাঙ, কক্সবাজার বৌদ্ধ মন্দির, সোনাদিয়া দ্বীপ, কানারাজার গুহা, রাখাইন পলস্নী পর্যটককে আকৃষ্ট করে।
কেনাকাটার জন্য রয়েছে বেশকিছু ভিন্ন আঙ্গিকের মার্কেট। বিশেষ করে প্রসিদ্ধ বার্মিজ মার্কেটে রাখাইন রমণীদের দ্বারা পরিচালিত বিভিন্ন রকম হস্তশিল্প ও মনোহরি পণ্যের দোকান। এছাড়া পর্যটকদের জন্য গড়ে উঠেছে ঝিনুক মার্কেট, ঝিনুক শিল্পের রকমারি জিনিসপত্রের প্রধান বিক্রয় ও বিপণন কেন্দ্র।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল-গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন, পর্যটন মৌসুম শুরু হয়েছে। কক্সবাজারে প্রায় ৫শ' ছোটবড় হোটেল, রিসোর্ট, গেস্ট হাউজ আছে। কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক মানের হোটেল, মোটেল, কটেজ ও রিসোর্টের সংখ্যাবৃদ্ধির সঙ্গে পর্যটন ও আতিথেয়তা-ব্যবস্থাপনা দক্ষ ও প্রশিক্ষিত পেশাজীবীর চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। তার আশা এবার ব্যবসা ভালো হবে।
কক্সবাজার টু্যরস অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন (টুয়াক) সভাপতি আনোয়ার কামাল বলেন, গত কয়েক মাস ধরে দেশের পরিস্থিতির কারনে পর্যটন ব্যবসা মন্দা ছিল। তবে ধীরে ধীরে মন্দাভাব কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে।
কক্সবাজার পুলিশ সুপার রহমত উলস্নাহ বলেন, কক্সবাজারের পুলিশ প্রশাসন পর্যটকদের নিরাপত্তা নিয়ে বেশ সচেতন আছে। পর্যটকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।