মনপুরায় চরাঞ্চলে ৫০ হাজার মানুষের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস
বিচ্ছিন্ন চরগুলোতে নেই কোনো বেড়িবাঁধ সাইক্লোন সেন্টার না থাকায় মৃতু্যঝুঁকি জোয়ারে পস্নাবিত হয়ে জলাবদ্ধতায় জনদুর্ভোগ কাগজে কলমে ৭৭.৫৩ কি.মি. বেড়িবাঁধ থাকলেও অর্ধেকের বেশি বিলীন
প্রকাশ | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
ভোলা জেলার দ্বীপ উপজেলা মনপুরার মূল ভূমি থেকে বিচ্ছিন্ন বিভিন্ন চরাঞ্চলে বেড়িবাঁধ না থাকায় প্রায় ৫০ হাজার মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন। মেঘনায় সামান্য জোয়ার হলেই পস্নাবিত হচ্ছে চরগুলো। জলোচ্ছ্বাস বা ঘূর্ণিঝড় হলে যে কোনো সময় ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। জোয়ারের পানিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। এছাড়া মনপুরা দ্বীপ রক্ষায় চারদিকে ৭৭.৫৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ কাগজপত্রে থাকলেও মেঘনা নদীর প্রবল গ্রাসে এখন অর্ধেকেরও বেশি বিলীন হয়ে গেছে। বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় সামান্য জোয়ারেও নিম্নাঞ্চল পস্নাবিত হয়ে মানুষ জলাবদ্ধ হয়ে পড়ছে। সরেজমিন দেখা গেছে, মনপুরার উত্তরে বিচ্ছিন্ন কলাতলির চরে বেড়িবাঁধ না থাকায় প্রায় ৩০ হাজার মানুষ ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন। মেঘনার জোয়ার সামান্য বৃদ্ধি পেলেই পুরো চর পস্নাবিত হয়ে মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ছে। এ ছাড়াও কাজীরচর, ঢালচরে নেই কোনো বেড়িবাঁধ। এই দুই চরে বসবাস করছেন অন্তত ১০ হাজার মানুষ। এদিকে পশ্চিমে বিচ্ছিন্ন শহীদ সামছুদ্দিন চর, চর নজরুল, পূর্বে বদনার চর, লালচরে নেই কোনো বেড়িবাঁধ। তাছাড়া দক্ষিণে সাগর মোহনায় চর নিজামে প্রায় ২০ হাজার মানুষ বসবাস করছে। এসব চরে বেড়িবাঁধ না থাকায় প্রায় ৫০ হাজার মানুষ অরক্ষিত অবস্থায় ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন। সামান্য জোয়ারেই পানিবন্দি হয়ে পড়ছেন বাসিন্দারা। উপজেলার কলাতলি চরের বাসিন্দা মিজান, সালাম, আল আমীন, সাদ্দাম জানান- এ চরটি নবগঠিত ইউনিয়ন পরিষদে রুপান্তরিত হলেও এখন পর্যন্ত উন্নয়নের কোনো ছোঁয়া লাগেনি। চারদিকে কোনোপ্রকার বেড়িবাঁধ না থাকায় চরটি সামান্য জোয়ার হলেই ডুবে যায়। ফলে বাসিন্দারা বেশিরভাগ সময়ই পানিবন্দি থাকেন। বঙ্গোপসাগরের মোহনায় অবস্থিত চর নিজাম দ্বীপের বাসিন্দা কালাম মাঝি, সুমন, ফয়সাল, কাদের জানান- চরটি সাগরের মোহনায় হওয়ায় কোনো বেড়িবাঁধ না থাকায় প্রায় ২০ হাজার মানুষ মৃতু্যঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন। এছাড়াও মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন শহীদ সামছুদ্দিন চর, চর নজরুল ও বদনারচরে কোনো বেড়িবাঁধ ও সাইক্লোন সেন্টার না থাকায় কয়েক হাজার মানুষও ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করেন। এসব চরাঞ্চলে দ্রম্নত বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন বাসিন্দারা। উলেস্নখ্য, ১৯৭০ সালে ১২ নভেম্বর গোর্কি নামের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে আঘাত হেনেছিল। এতে বেড়িবাঁধ বা সাইক্লোন সেন্টার না থাকায় মনপুরা উপকূলের মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এবং সবচেয়ে বেশি প্রাণ হারিয়েছিল। তারা দুঃসহ সেই রাতের স্মৃতি আজও ভুলতে পারেনি। সেই থেকে সাগরে কোনো লঘুচাপ বা নিম্নচাপের খবর শুনলেই তারা ভয়ে আঁতকে ওঠেন। ১৯৭০ সালের মহাদুর্যোগের পরও উপকূলীয় অঞ্চলের লোকজনের নিরাপত্তার বিষয়টি এখনো উপেক্ষিত রয়ে গেছে। মনপুরার দায়িত্বে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ড ভোলা-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসফাউদদৌলা জানান, মনপুরার মূল ভূখন্ডে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধগুলো সংস্কারে প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধগুলো সংস্কার হলেই বিচ্ছিন্ন চরে সঠিক সমীক্ষার মাধ্যমে বেড়িবাঁধের পরিকল্পনা করা হবে।