গত কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে রূপসার বিভিন্ন এলাকা পস্নাবিত হয়েছে। এতে অন্তত এই উপজেলার ৫ ইউনিয়নের ফসলি জমি, চিংড়ি ঘের, মাছের ঘেরসহ পানের বরজ মালিকদের প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এদিকে পানি নেমে গেলেও ফুটে উঠেছে ক্ষতির চিহ্ন। আর এসব মালিকের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ পুষিয়ে কাটিয়ে উঠতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সব কিছু নতুন করে ঠিকঠাক করতে দুর্ভোগ বেড়েছে তাদের।
তারা জানিয়েছেন, এখনো এ ব্যাপারে সরকারি কোনো সহযোগিতা পায়নি ক্ষতিগ্রস্তরা। এদিকে বেশিরভাগ এলাকা থেকে নেমে গেছে জমে থাকা পানি। তবে উপজেলার ঘাটভোগে বেশ কিছু এলাকা এখনো পস্নাবিত আছে বলে জানা গেছে। গত টানা তিন দিনের অতি বর্ষণে রূপসা উপজেলার সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ঘাটভোগ ইউনিয়নে। ভুক্তভোগীরা জানান, ঘাটভোগ ইউনিয়নের পিঠাভোগ, ধোপাখোলা, গোয়ালবাড়ির চর গ্রামের প্রায় দেড় শতাধিক পানের বরজ পানির নিচে তলিয়ে যায়। তিনটি গ্রামে ফসলি জমি ও মৎস্য ঘেরের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বিপুল পরিমাণ। নরনিয়া, বিল মৌভোগ, বড়জ্বালা, পুটিমারি বিলে এমন কোনো ঘের নেই, যা পানির নিচে নিমজ্জিত হয়নি।
পিঠাভোগ গ্রামে জিলস্নাল পাইক জানান, তার দশ শতাংশ জমির ওপর অবস্থিত পানের বরজ সম্পূর্ণ তলিয়ে গিয়ে প্রায় দুই লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে। তেমনি একই গ্রামের মাধব রায়, জগদীশ রায়, আসাদ শেখ, গোয়ালবাড়িচর গ্রামের হাফিজুর ভূঁইয়ার পানের বরজের একই পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
পিঠাভোগ গ্রামের কৃষক শক্তিপদ বসু জানান, ৫ বিঘা জমির ওপর মিশ্র মৎস্য চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন তিনি। প্রবল বর্ষণে তার দুটি ঘেরই পানিতে নিমজ্জিত হয়ে গলদা এবং সাদা মাছ ভেসে গেছে। এতে করে তার ৫ লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
কৃষক তেমনি একই গ্রামের শিবপদ মজুমদারের ১২ বিঘা, বিশ্বজিত পালের ১৫ বিঘা, তাপস পালের ৩ বিঘা, নজরুল শেখের ৩ বিঘা, ধোপাখোলা গ্রামের সঞ্জয় বিশ্বাসের ৩ বিঘা, সনজিত বিশ্বাসের ২ বিঘা, গোয়ালবাড়িচর গ্রামের নাদের আলী ভূঁইয়ার ৩ বিঘা এবং বাবুল শেখের ২ বিঘা জমিতে অবস্থিত মৎস্য ঘের পানিতে নিমজ্জিত হয়ে মৎস্য ঘেরের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, পিঠাভোগ, ধোপাখোলা এবং গোয়ালবাড়ির চর এলাকায় অবস্থিত দেড় শতাধিক ঘেরে প্রায় ৯০ লাখ টাকা এবং পানের বরজে ৫০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
গোয়ালবাথান এলাকায় মৎস্যচাষি, সবজিচাষি এবং পানচাষিদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া নৈহাটী ইউনিয়নের জাবুসা, শ্রীরামপুর বিল, বাগমারা বিল, পদ্মবিল সকল মৎস্যঘের পানিতে নিমজ্জিত হয়ে কয়েক লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
এ ছাড়া বেড়িবাঁধগুলো নিয়ে রয়েছে আতঙ্কের মুখে। যে কোনো সময় ভেঙে পস্নাবিত হতে পারে ফসলি কৃষি জমি। যদিও এ ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো জানানো হয়নি।
তবে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, টানা বর্ষণে শসা, তরমুজ, পানবরজসহ বিভিন্ন সবজি ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
মনোহরগঞ্জ (কুমিলস্না) প্রতিনিধি জানান, কুমিলস্নার মনোহরগঞ্জে স্বেচ্ছাশ্রমে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন সড়ক মেরামত করছেন এলাকার যুবকরা। উপজেলা সদর থেকে মনোহরগঞ্জ-লাকসাম সড়ক, খিলা-মনোহরগঞ্জ সড়ক, লালচাঁদপুর-বেরনাইয়া সড়ক, শাহশরীফ ডিগ্রি কলেজ সংলগ্ন সড়কসহ বিভিন্ন সড়কে বন্যার ক্ষতচিহ্ন ভরাট করে যানচলাচল উপযোগী করতে স্থানীয় যুবকদের উদ্যোগে চলছে মেরামতের কাজ। যুবকদের শ্রম ঘামে একদিকে ভরাট হচ্ছে সড়কের ক্ষতচিহ্ন অন্যদিকে কমছে জনদুর্ভোগ। এসব সড়কে যান চলাচলে কিছুটা স্বস্থির কথা জানিয়েছেন যাত্রী ও পথচারীরা।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার প্রধান সড়ক মনোহরগঞ্জ-লাকসাম সড়কের আশিরপাড় পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে বন্যার পানিতে তৈরি হওয়া গর্ত ভরাটের কাজ করছেন এলাকার স্থানীয় যুবকরা। স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করা স্থানীয় হাসান পাটোয়ারীসহ সড়ক মেরামতের কাজে নিয়োজিত যুবকদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, কুমিলস্না (দ.) জেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদুল আলম বাচ্চুর নির্দেশনায় সড়কটির মনোহরগঞ্জ থেকে আশিরপাড় পর্যন্ত প্রায় আড়াই কি. মি. জায়গায় অন্তত অর্ধশতাধিক স্পটে তৈরি হওয়া বড় বড় গর্ত ইটের খোয়া দিয়ে ভরাট করে যান চলাচল উপযোগী করে তোলা হয়। এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা।
কুমিলস্না (দ.) জেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাসুদুল আলম বাচ্চু বলেন, বন্যার পানি নামার সঙ্গে সড়কের বিভিন্ন স্থানে ভেসে উঠেছে ক্ষতচিহ্ন। সড়কটির মনোহরগঞ্জ থেকে আশিরপাড় পর্যন্ত বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে যান চলাচলে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। যাত্রী ও পথচারী চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে জেনে সড়কটি মেরামতের উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানান তিনি। জনদুর্ভোগ লাগবে স্বেচ্ছাশ্রমে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে সড়কটি মেরামতের কাজ করছেন।
উপজেলা প্রকৌশলী মো. শাহ আলম স্বেচ্ছাশ্রমে সড়ক মেরামতে কাজ করা যুবকদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, বন্যার পানিতে উপজেলার প্রায় ২০৪ কি. মি. সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব সড়কের তালিকা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। অধিক ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো যান চলাচল উপযোগী করতে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উজালা রানী চাকমা বলেন, মনোহরগঞ্জে এমন কোন সড়ক নেই যেটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। বন্যার পানি মাত্র সড়ক থেকে নেমেছে, এতেই ভেসে উঠছে ক্ষতচিহ্ন। অধিকাংশ গ্রামীণ সড়ক এখনো পানির নিচে। সরকারি বরাদ্দের পাশাপাশি সড়ক মেরামতে যুবকদের এমন উদ্যোগ প্রশংসনীয়।