আজমিরীগঞ্জে দুই শিশুর লাশ সমাধি থেকে তুলে নদীতে ভাসিয়ে দিতে বাধ্য করা ৭ প্রভাবশালীকে রক্ষায় সাধারণ মানুষ থেকে নেওয়া চাঁদায় মোটা অংকের তহবিল গঠন করেছেন গ্রাম্য মাতব্বররা। ফলে আদালত থেকে জামিন পাওয়া আসামিদের রোষানলে পড়েছে শিশুদের অসহায় পরিবারের সদস্যরা।
এ ঘটনায় মামলার আসামি গ্রেপ্তারের ব্যাপারে থানা পুলিশের বিরুদ্ধে টালবাহানা এবং শিশুদের পরিবারকে অসহযোগিতার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শিশুদের লাশ নদীতে ভাসিয়ে দিতে বাধ্য করা মামলার আসামিরা হলেন- আজমিরীগঞ্জ উপজেলার পাহাড়পুর গ্রামের দীপেশ সরকার, নিরঞ্জন তালুকদার, নিরঞ্জন সরকার, দীন মনি সরকার, অসিত দাস, শ্রীমলাল দাস ও নিখিল দাস। অজ্ঞাত আরও ১০-১২ জনকে মামলার আসামি করা হয়। তারা গত ৩০ জুলাই উচ্চ আদালত থেকে ছয় সপ্তাহের জামিন নেন এবং পরবর্তীতে ৮ সেপ্টেম্বর হবিগঞ্জ আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন।
মারা যাওয়া শিশুরা হলো- পাহাড়পুরে রুবেল দাসের ছেলে সূর্য দাস (৬) ও গোবিন্দ দাসের ছেলে প্রলয় দাস (৭)।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিশুদের কয়েকজন স্বজন জানান, গ্রামবাসীদের দেওয়া চাঁদা ও পঞ্চায়েতের মালিকানাধীন সম্পত্তির আয় থেকে সমাজপতিরা আট লাখ টাকার তহবিল গঠন করেছেন। সেই টাকা খরচ করে আসামিদের পক্ষে মামলা চালানো হচ্ছে।
তারা আরও জানান, জামিন পাওয়ার পর থেকে মামলা তুলে নিতে বাদীকে চাপ দেওয়া হচ্ছে। রাস্তাঘাটে শিশুদের পরিবারের সদস্যদের পেলে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ফলে দুই শিশুর পরিবার এখন বিপর্যস্ত।
মারা যাওয়া প্রলয় দাসের বাবা গোবিন্দ দাস বলেন, 'আমার ছেলের লাশ প্রভাবশালীদের ভয়ে নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছি। পরে সারাদেশের মানুষ এর প্রতিবাদ জানালে পুলিশ মামলা নিতে বাধ্য হয়। এখন প্রভাবশালীদের টাকার কাছে আমরা এ ঘটনার বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।'
লাশ ভাসিয়ে দেওয়ায় বাধ্য করায় অভিযুক্তদের রক্ষায় গ্রামবাসীর টাকা খরচ করা হচ্ছে কি না তার সত্যতা জানতে গত রোববার রাতে এক গ্রাম্য মাতববরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, 'লাশ ভাসিয়ে দেওয়ার ঘটনাটি যেহেতু গ্রাম পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে ছিল, তাই তাদের পক্ষে মামলা পরিচালনার জন্য গ্রামের তহবিল থেকে টাকা ব্যয় করা হচ্ছে।'
গ্রামবাসীর দেওয়া চাঁদা ও পঞ্চায়েতের সম্পত্তি থেকে প্রতি বছর ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা আয় হয় জানিয়ে তিনি বলেন, 'এক বছরের আয়ের টাকা এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে।'
প্রসঙ্গত, গত ২৯ জুন সূর্য দাস ও প্রলয় দাস ফুটবল খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয়। পরে শিশু প্রলয়ের মা প্রতিভা দাস পাহাড়পুরে সোমেশ্বরী মন্দিরের পুকুরে তার ছেলের ফুটবলটি ভাসতে দেখেন। এরপর পুকুরের তলদেশ থেকে দুটি শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়। সনাতন ধর্মের রীতি অনুযায়ী অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশুর লাশ দাহ না করে শ্মশানের পাশে মাটিতে পুঁতে সৎকার করা হয়। কিন্তু এলাকার প্রভাবশালীরা লাশগুলো তুলে কুশিয়ারা নদীতে ভাসিয়ে দিতে শিশুদের পরিবারকে বাধ্য করে। ঘটনার কয়েকদিন পেরিয়ে গেলেও থানায় কোনো মামলা না হলে আদালত সপ্রণোদিত হয়ে পুলিশকে তদন্তের আদেশ দেন। এক পর্যায়ে ৫ জুলাই প্রলয় দাসের বাবা গোবিন্দ দাস আজমিরীগঞ্জ থানায় মামলা করেন।