শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছেলেকে সতর্ক করে মৃতু্যর শিকার বাবা

পূর্বধলা (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি
  ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছেলেকে সতর্ক করে মৃতু্যর শিকার বাবা

'বাইরে আন্দোলন চলছে। আন্দোলনে গোলাগুলিতে মানুষ মরছে। তাই ঘর থেকে বের হয়ো না।' বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন ৫ আগস্ট সকালে একমাত্র ছেলে সন্তানকে এভাবেই সতর্ক করেছিলেন বাবা রমজান আলী (৪০)। এরপর ওইদিন মধ্যরাতেই একটি ফোনকলের মাধ্যমে ছেলে জানতে পারেন তার বাবা গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আছেন। এমন খবরে পরিবারের লোকজন হত বিহ্বল হয়ে পড়েন। বাইরে থমথমে পরিস্থিতির মুখে বের হতে পারছিলেন না। অনেক কষ্ট করে হাসপাতালে গিয়ে তাকে মুমুর্ষূ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। মুখে অক্সিজেন লাগানো। চিকিৎসক জানালেন তিনি বুকে ও হাতে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাকে বাঁচানোর জন্য রক্তের প্রয়োজন। পরে রক্ত পাওয়া গেলেও তাকে আর বাঁচানো গেল না। ৬ তারিখ ভোর ৬টার দিকে তিনি মৃতু্যর কোলে ঢলে পড়েন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে একজন শ্রমজীবী বাবার মৃতু্যর কথা এভাবেই বর্ণনা করছিলেন একমাত্র পুত্র কামাল হোসেন। তার গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের দুধী গ্রামে। পরে ওইদিনই বিকালে নিজ গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

গত মঙ্গলবার তার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির পাশে বাবার কবরের পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন রমজান আলী। বাড়িতে সুন্দর হাফবিল্ডিং ঘরটি জনশূন্য হয়ে তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে। স্থানীয় বাসিন্দা রতন মিয়া জানান, প্রায় ২০-২৫ বছর ধরে বউ নিয়ে ঢাকায় কাজ করে অনেক কষ্ট করে গত বছর নিজের হাতে এই ঘরটি নির্মাণ করেন। এ জন্য অনেক টাকা ঋণও করেছেন। এত কষ্ট করে ঘর নির্মাণ করার পর সেই ঘরে বেশিদিন থেকে যেতে পারলেন না।

রমজান আলীর স্ত্রী গৃহকর্মী নূরুননাহার জানান, 'প্রতিদিনের মতো ৫ তারিখ সকালে তিনি কাজের উদ্দেশে বের হন। রাতে হঠাৎ তার গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর আসে। পরে হাসপাতালে গিয়ে গুলিবিদ্ধ মুমুর্ষূ অবস্থায় পেলেও তাকে আর বাঁচানো যায়নি। তার মৃতু্যতে আমার সব শেষ হয়ে গেছে। বাড়িতে ঘর করতে গিয়ে অনেক টাকা ঋণ করে ফেলেছিলাম। এখন জানি না সেই ঋণ কীভাবে শোধ করব।'

কারও কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঢাকায় জামায়াতের নেতারা এক লাখ টাকা ও ব্যক্তি উদ্যোগে কিছু সহযোগিতা পেলেও সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা বা খোঁজখবর কেউ নেয়নি।

ইউএনও খবিরুল আহসান বলেন, তার মারা যাওয়ার বিষয়টি দুইদিন আগে একজনের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন। তবে কীভাবে মারা গেছেন এর বিস্তারিত তথ্য কেউ জানায়নি। বিষয়টি নিয়ে বর্তমানে পুলিশ তদন্ত করছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে