মায়েদের কোলে শিশুরা, তাদের বেশির ভাগের মুখেই নেবুলাইজারের মাস্ক; একরত্তিদের অনেকের হাতে বিদ্ধ করা ইঞ্জেকশনের ক্যানোলাও। অসুস্থ এসব শিশুর অভিভাবকরা ছোটাছুটি করছিলেন মুখে অস্থিরতার ছাপ নিয়ে। সোমবার হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে গেলে এ দৃশ্য চোখে পড়ে। হাসপাতালে নবজাতকদের বিশেষায়িত সেবা কেন্দ্র (স্ক্যানুতে) শয্যার বিপরীতে রোগীর সংখ্যা দশগুণ ছিল।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, টানা কয়েকদিন তাপদাহের ফলে ঘাম থেকে সৃষ্ট ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত এসব শিশু রোগীর সেবা দিতে হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা হিমশিম খাচ্ছেন। এ কারণে এক সপ্তাহে হাসপাতালটিতে ২০ নবজাতক (২৮ দিন বয়সের মধ্যে) ও ৫ জন শিশুর মৃতু্য হয়েছে বলে দায়িত্বরতরা জানান।
সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড, স্ক্যানু এবং বহির্বিভাগে শিশু ও নবজাতক কোলে তাদের স্বজনদের দীর্ঘ লাইন। স্ক্যানুতে ১১টি শয্যার বিপরীতে সোমবার ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ১০০ জন। এর লাগোয়া কক্ষটিও শিশু রোগী ও তাদের স্বজনদের উপস্থিতিতে কানায় কানায় পূর্ণ। দায়িত্বরতরা জানান, স্ক্যানুতে রোজ একাধিক নবজাতকের মৃতু্য হচ্ছে। তাদের স্বজনদের কান্নায় দিনভর ওয়ার্ডের আশপাশে শোকের ছায়া লেগে থাকে। গত রোববার সেখানে ৩ নবজাতকের মৃতু্য হয়েছে। আর গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে ২০ সেপ্টেম্বর শুক্রবার পর্যন্ত স্ক্যানুতে মারা গেছে ১৯ নবজাতক।
দায়িত্বরত নার্সদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্ক্যানুতে ১১টি ওয়ার্মার সিট রয়েছে। ১০ গুণ রোগী থাকায় সিট ভাগ করে ও শিফট করে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বাগুনিপাড়া গ্রামের জনাব আলী বলেন, চিকিৎসক বলেছেন- তার শিশুকে ৭২ ঘণ্টা থেরাপি দিতে। কিন্তু স্ক্যানুতে লম্বা লাইন থাকায় ৫ মিনিট পরপর থেরাপি দেওয়া হচ্ছে। এর ভেতরে নবজাতক ছটফট করতে থাকে। অনেক শিশুকে হবিগঞ্জ থেকে সিলেটে রেফার করে দেওয়া হচ্ছে।
বহির্বিভাগে যোগাযোগ করলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মাসুদ রানা জানান, প্রতিদিন সেখানে ৩০০ জনের অধিক রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। আবহাওয়া পরিবর্তনের জন্যই রোগীর আধিক্য।
২৫০ শয্যা ভবনের পঞ্চম তলায় শিশু ওয়ার্ডে দেখা যায়, রোগী ও তাদের স্বজনদের উপস্থিতিতে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। সেখানে শয্যা আছে ৫০টি। কিন্তু গতকাল ভর্তি ছিল ২৫৯ শিশু।
দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. দেবাশীষ দাশ রোগী দেখছিলেন। বিপুলসংখ্যক রোগীকে চিকিৎসা দিতে তাকে হিমশিম খেতে হচ্ছিল। ওয়ার্ডটিতে গত এক সপ্তাহে ২ শিশুর মৃতু্য ঘটে।
ডা. দেবাশীষ দাশ যায়যায়দিনকে জানান, প্রচন্ড গরমে শিশুদের শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এ কারণে শিশু ওয়ার্ডে রোগী বেড়েছে। স্ক্যানুতে রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণ- এখানে যে নবজাতকরা আসে তাদের অবস্থা সাধারণত অত্যন্ত খারাপ থাকে। অদক্ষ হাতে প্রসবের কারণেও নবজাতকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তিনি আরও বলেন, শিশুরা যাতে না ঘামে তার জন্য যত্ন নিতে হবে। যদি ঘেমে যায় তাহলে দ্রম্নত তা মুছে দিতে হবে। তাদের পাতলা সুতি কাপড় পরাতে হবে। কোনোভাবেই শিশুদের কক্ষে কয়েল ও অ্যারোসল ব্যবহার করা যাবে না।
যোগাযোগ করা হলে ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আমিনুল হক সরকার যায়যায়দিনকে বলেন, 'হাসপাতালে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের দুটি পদ থাকলেও চিকিৎসক রয়েছেন একজন। তারপরও আমরা শিশু ওয়ার্ডে সবসময় চিকিৎসা নিশ্চিত করে যাচ্ছি।'