বেহাল কুয়াকাটা মহাসড়কে ভোগান্তিতে পর্যটক-স্থানীয়রা

প্রকাশ | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

এসএম আলমাস, কুয়াকাটা (পটুয়াখালী)
দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় খানাখন্দে বেহাল পর্যটনকেন্দ্র পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের কলাপাড়া-কুয়াকাটা মহাসড়ক -যাযাদি
বিগত ৯ বছরে স্থানীয় সাবেক দুই সংসদ সদস্য, প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা পেলেও ঢাকা কুয়াকাটা মহাসড়কের ১১ কিলোমিটার রাস্তার ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পারেননি তারাও। মেরুদন্ডহীন রাস্তার ভোগান্তি এ জনপদের মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী। দেশের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের কলাপাড়া-কুয়াকাটা মহাসড়কের ১১ কিলোমিটার অংশের চিত্র, খানাখন্দে ভরা সড়ক। পর্যটকদের একমাত্র যাতায়াতের পথ বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এই সড়ক দিয়ে পর্যটক দর্শনার্থীরা সাগরকন্যা কুয়াকাটা বেড়াতে আসেন। উন্নত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে ওঠায় পর্যটকরা এখন কুয়াকাটামুখী হচ্ছেন। তবে আগত এসব পর্যটক দর্শনার্থীরা কুয়াকাটা প্রবেশমুখে এসে খানাখন্দে ভরা প্রায় ১১ কিলোমিটারের ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক দেখে অবাক হন। এতে করে পর্যটক ও স্থানীয় সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত চরম দুর্ভোগ আর ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, পাখিমারা থেকে মহিপুর পর্যন্ত সড়কের বেশির ভাগ স্থানের পিচ ওঠে গেছে। বের হয়ে আছে ইট-বালু-খোয়া। কোথাও বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। মহাসড়কের ১১ কিলোমিটারে এ রকম অসংখ্য গর্ত রয়েছে। কোথাও আবার রাস্তার মধ্যে তৈরি হয়েছে পুকুর এবং প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা। বর্ষায় এসব গর্তে পানি জমে সড়কের অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। সড়ক বিভাগ পাখিমারা বাজার এলাকা এবং আলীপুর থ্রি পয়েন্ট এলাকার গর্তে ইট ফেলে ভরাট করে সড়কটি সচল রাখার চেষ্টা করছে। জানা গেছে, মামলা জটিলতায় দীর্ঘ এক যুগেও হয়নি পটুয়াখালীর কুয়াকাটা-ঢাকা মহাসড়কের ১১ কিলোমিটার অংশের সংস্কারকাজ। ২০০৯-২০১৪ অর্থবছরে কলাপাড়া উপজেলার পাখিমারা বাজার থেকে আলীপুর মৎস্যবন্দরের শেখ রাসেল সেতু পর্যন্ত সাড়ে ১১ কি.মি. অংশের উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করে খুলনার দি রূপসা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তখন এর নির্মাণ ব্যয় ছিল ২০ কোটি টাকা। কাজটি মানসম্মত না হওয়ায় তখন ঠিকাদারের বিল আটকে দেয় পটুয়াখালী সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে সওজ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে দু'টি দল সরেজমিন তদন্তও করে। তদন্তকারী দলের পক্ষ থেকেও কাজের গুণগত মান ভালো হয়নি বলে প্রতিবেদন দেওয়া হয়। নিম্নমানের কাজের কারণে তখন সওজ বিভাগ ৮ কোটি টাকার বিল আটকে দেয়। তবে এ কাজ বাবদ ১২ কোটি টাকার বিল পরিশোধ করা হয়। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দি রূপসা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের প্রতিনিধি রাশেদুল ইসলাম চূড়ান্ত বিল দাবি করে ২০১৪ সালে আদালতে মামলা করেন। আদালত মামলার কারণে ১১ কি.মি. সড়কের ওপর সংস্কার কাজে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেন। যার ফলে গত ৯ বছর ধরে সংস্কারবিহীন অবস্থায় পড়ে থাকে পাখিমারা বাজার থেকে শেখ রাসেল সেতু পর্যন্ত এ অংশের সড়কটি। তবে কুয়াকাটা পর্যটন এলাকায় যাতায়াতের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক হওয়ার কারণে সওজ কর্তৃপক্ষ এ অংশে জরুরি মেরামতের কাজ করে সচল রাখার চেষ্টা করে। ভুক্তভোগীরা বলেন, সংস্কার না করায় সড়কের বেশিরভাগ স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। অনেক স্থান দেবে গেছে। সামান্য বৃষ্টিতেই কাদা-পানিতে একাকার হয়ে যাচ্ছে সড়কটি। এই সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। বিকল হচ্ছে যানবাহন। দ্রম্নত সড়কটি সংস্কারের দাবি জানিয়েছে পর্যটকসহ স্থানীয়রা। কুয়াকাটা মৎস্য আড়ৎদার ব্যবসায়ী আ. রহিম খান বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম মাছের মোকাম মহিপুর, আলীপুর ও কুয়াকাটা। মৌসুমের সময় প্রতিদিন এখান থেকে লাখ লাখ টাকার ইলিশসহ নানা ধরনের মাছ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত করা হয়। কোনো কোনো সময় মাছবোঝাই ট্রাক, পিকআপ বা লরির চাকা গর্তে পড়ে আটকে যায়। সময় বেশি ব্যয়ের সঙ্গে খরচ বাড়ছে। এখন এই রাস্তা স্থায়ী সংস্কার করা খুবই জরুরি। পটুয়াখালী সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জামিল আক্তার লিমন বলেন, আদালতের আদেশে ওই রাস্তায় বড় ধরনের সংস্কারকাজ করা যায়নি। তবে উচ্চ আদালত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছেন। সড়কের নির্মাণকাজের জন্য আর কোনো বাধা নেই। এরই মধ্যে সাড়ে ১১ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের জন্য ১৭ কোটি টাকার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। পরিবেশ-পরিস্থিতির কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি কাজ বন্ধ রেখেছিল। তবে বর্তমানে রাস্তার কাজের মালামাল ইতিমধ্যে নিয়ে আসা হয়েছে। বৃষ্টি কমলেই রাস্তার কাজ শুরু হবে।