টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারে যুবকের বিরুদ্ধে ক্ষুধার জ্বালায় বাবাকে গলাটিপে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ঘাতক ছেলেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদিকে, হবিগঞ্জের বাহুবলে জমি বিরোধের জেরে সংঘর্ষে যুবক নিহত ও চট্টগ্রামের আনোয়ারায় হাতির আক্রমণে দুইজনের মৃতু্য হয়। এছাড়াও গাজীপুর, দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ ও কুমিলস্নার নাঙ্গলকোট থেকে আরও তিন লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আঞ্চলিক স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত ডেস্ক রিপোর্ট-
স্টাফ রিপোর্টার, টাঙ্গাইল ও দেলদুয়ার প্রতিনিধি জানান, টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল ইউনিয়নের মঙ্গলহোড় গ্রামে ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে না পেরে বৃদ্ধ বাবাকে হত্যার পর মরদেহ টয়লেটের কূপে ফেলে দিয়েছে ছেলে। মঙ্গলবার সকালে নিজ বাড়ির টয়লেটের কূপ থেকে বৃদ্ধের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত শামসুল আলম (৭৫) পেশায় দলিল লেখক ছিলেন।
জানা যায়, গত শুক্রবার রাত থেকে শামসুল আলম নিখোঁজ হন। এদিন থেকে তার একমাত্র ছেলে সাত্তার মিয়ারও (৪০) সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে স্থানীয়রা মঙ্গলবার ভোরে সাত্তারকে আটক করলে তার দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তার বাবার মরদেহের সন্ধান পাওয়া যায়।
অভিযুক্ত ছেলে সাত্তার মিয়া জানান, তার বাবা শামসুল আলম টাকা পয়সা না দিয়ে তার পরিবারকে আলাদা করে দেন। তিনি ঠিকমতো সংসার চালাতে পারছিলেন না। ক্ষুধায় কাতর হয়ে গত শুক্রবার দিনগত রাত ২টায় বাবার ঘরে যান। কথা প্রসঙ্গে তর্কাতর্কি হলে তিনি বাবার ওপরে উঠে বসে গলা চেপে ধরেন। এরপর একটি ওড়না দিয়ে গলা বেঁধে ফেললে শামসুল আলম মারা যান। মরদেহ বাড়ির টয়লেটের কূপে ফেলে তিনি পালিয়ে যান।
দেলদুয়ার থানার ওসি সোহেব খান জানান, মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের ছেলে সাত্তারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বাবাকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন।
বাহুবল (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, বাহুবলে জমি নিয়ে দুই সহোদরের বিরোধের জের ধরে সংঘর্ষে ওয়াহিদ মিয়া (২৭) নামে এক যুবক নিহত ও অন্ততঃ অর্ধশত লোক আহত হয়েছেন। আহতদের বাহুবল, হবিগঞ্জ ও সিলেটের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মঙ্গলবার উপজেলার সদর ইউনিয়নের চক হাবিজপুর প্রকাশিত বাবনাকান্দি গ্রামে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। নিহত ওয়াহিদ মিয়া ওই গ্রামের ইছাক উলস্নার ছেলে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, উপজেলার সদর ইউনিয়নের চক হাবিজপুর প্রকাশিত বাবনাকান্দি গ্রামের আরজু মিয়া ও তার সহোদর আব্দুল হাইর মধ্যে জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। বিরোধকে ঘিরে এলাকায় লোকজন দুইগ্রম্নপে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে এ বিরোধকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার উভয় গ্রম্নপ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। ঘন্টাখানেক সংঘর্ষে ওয়াহিদ মিয়া (২৭) নিহত ও আরও অন্ততঃ অর্ধশত লোক আহত হন। বাহুবল মডেল থানার ওসি মশিউর রহমান বলেন, এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। নিহতের লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে।
আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, চট্টগ্রামের আনোয়ারায় হাতির আক্রমণে একই রাতে দুইজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নিহতরা হলেন- বৈরাগ ইউনিয়নের উত্তর গুয়াপঞ্চক ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত মুজিবুল হকের ছেলে মো. কাশেম (৬০) ও পূর্ব বৈরাগ ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মো. আক্তারের স্ত্রী রেহেনা আক্তার (৩৮)। গত সোমবার রাতে উপজেলার বৈরাগ ইউনিয়নের গুয়াপঞ্চক আশ্রয়ণ প্রকল্প ও পূর্ব বৈরাগ খোশাল তালুকদারের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, দিনমজুর দুলাল বৈরাগ ইউনিয়নের গুয়াপঞ্চক ৪ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর গুয়াপঞ্চক শাহ আহমদ বাড়ির বাসিন্দা। খাবারের সন্ধানে আসা একপাল হাতি আশ্রয়ণ প্রকল্পে আক্রমণ করে। এতে তিনি নিহত হন। এরপর হাতিগুলো বৈরাগ খোশাল তালুকদারবাড়ি এলাকায় যায়। এ সময় বিশেষ কাজে ওই নারী ঘর থেকে বের হলে হাতির পালের আক্রমণের শিকার হয়ে সেখানেই মারা যান।
গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, গাজীপুর সদর উপজেলার বাঘের বাজার এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভাজক থেকে আবু বক্কর (২৫) নামে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে জয়দেবপুর থানা পুলিশ। মঙ্গলবার মহাসড়কের উপর লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেয়। নিহত আবু বক্কর ময়মনসিংহ জেলার তারাকান্দা থানার গরজা গ্রামের আব্দুল জলিলের ছেলে।
নিহতের ভাই আ. হালিম জানান, তারা দুই ভাই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বাঘের বাজার এলাকার ফুটওভার ব্রিজে থেকে আশপাশের এলাকায় বোতল সংগ্রহ করতেন। সোমবার রাতে তারা একসঙ্গে রাতের খাবার খেয়ে ছোট ভাই আবু বক্কর বোতল টোকানোর কথা বলে বেরিয়ে যান। রাতে ফিরে না আসায় খোঁজাখুঁজি করেন। মঙ্গলবার ভোরে মহাসড়কের ফুটওভার ব্রিজের সড়ক বিভাজকের লোহার ভেতর থেকে ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার হয়।
জয়দেবপুর থানার ওসি আব্দুল হালিম জানান, নিহতের শরীরে আঘাত চিহ্ন আছে। ভিকটিমের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বোচাগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি জানান, দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলার ৫নং-ছাতইল ইউনিয়নের বগুলাখারি থেকে মঙ্গলবার অরুন চন্দ্র নামে ৫০ বছর বয়সী মৎস্য শিকারির মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এর আগে গত সোমবার সকালে মাছ ধরার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন বিরল উপজেলার সেনগ্রামের বসবাসকারী দীনেশ চন্দ্র রায়ের ছেলে অরুন চন্দ্র। পরদিন সকালে বগুলাখারি পানিতে তার লাশ ভাসমান অবস্থায় দেখতে পেয়ে এলাকাবাসী থানায় খবর দেয়। পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে।
নাঙ্গলকোট (কুমিলস্না) প্রতিনিধি জানান, নাঙ্গলকোট উপজেলার সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের তপোবন গ্রামের দক্ষিণ পাড়ায় পানিতে ডুবে ইমাম হোসেন (৬) নামের এক শিশুর মৃতু্য হয়েছে। মঙ্গলবার উপজেলার তপোধন গ্রামের এ ঘটনা ঘটে। নিহত ইমাম হোসেন ওই গ্রামের মো. এয়াসিনের ছেলে।
জানা যায়, দুপুরে বাড়ির আঙিনায় খেলা করছিল ইমাম। এ সময় বাড়ির পাশে বন্যা পস্নাবিত একটি ক্ষেতে পড়ে পানিতে ডুবে মারা যায় সে।