শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১

'আমি মা জীবন দেব, তবুও সন্তানের লাশ তুলতে দেব না

লালমনিরহাট প্রতিনিধি
  ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
'আমি মা জীবন দেব, তবুও সন্তানের লাশ তুলতে দেব না

'আমার সন্তানের খুনিদের বিচার চাই। তাই বলে কবর থেকে তার লাশ তুলে বিচার পেতে হবে এমনটা চাই না। প্রয়োজনে আমি মা জীবন দেব, তবুও সন্তানের লাশ তুলতে দেব না।' অশ্রম্নসিক্ত চোখে গণমাধ্যমের কাছে এমন আকুতি জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত মিরাজুল ইসলাম মিরাজের মা মোহসেনা বেগম।

নিহত মিরাজুল ইসলাম মিরাজ লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের বারঘড়িয়া আনছার খার পুকুরপাড় এলাকার আব্দুস ছালামের ছেলে। নিজ গ্রামে পারিবারিক করবস্থানে তাকে গত ৮ আগস্ট দাফন করা হয়। ইতোমধ্যে ঢাকা সিএমএম আদালত লালমনিরহাট জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে নিহত মিরাজের মরদেহ উত্তোলন করে মর্গে পাঠাতে ব্যবস্থা নিতে আদেশ দিয়েছেন।

জানা যায়, স্থানীয় মহিষখোচা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০২১ সালে এসএসসি পাস করে বাবার সঙ্গে ঢাকার যাত্রাবাড়ি এলাকায় পাড়ি জমান মিরাজুল ইসলাম মিরাজ। সেখানে ঢাকা দনিয়া মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে ভর্তি হন। পড়ালেখার পাশাপাশি একটি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের দোকানে কর্মচারী ছিলেন মিরাজ। অসুস্থ বাবার চিকিৎসা, ছোট দুই ভাইয়ের লেখাপড়াসহ পুরো সংসার চলত মিরাজের আয়ে।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগের এক দফা আন্দোলনে যাত্রাবাড়ি থানার সামনে মাছের আড়ত এলাকায় যোগ দেন মিরাজ ও তার খালাত ভাই কারখানা শ্রমিক মাজেদুল ইসলাম। সেখানে পুলিশের গুলিতে দুইজনই গুলিবিদ্ধ হন। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। ৮ আগস্ট মারা যান মিরাজ। পরে এ ঘটনায় ২৪ আগস্ট যাত্রাবাড়ি থানায় নিহত মিরাজের বাবা আব্দুস ছালাম বাদী হয়ে লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহার হোসেন এমপিকে প্রধান করে সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদসহ ৩৬ জনের নাম উলেস্নখসহ অজ্ঞাত ২-৩শ' জনের নামে হত্যা মামলা (নং-১৭(৮) ২৪) করেন।

মামলাটির তদন্তের স্বার্থে মৃত মিরাজের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের জন্য মরদেহ উত্তোলনের অনুমতি চেয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। যার পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিনা হক মরদেহ উত্তোলনে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে লালমনিরহাট জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে আদেশ দেন। তবে কোনোভাবেই মরদেহ তুলতে দিতে রাজি নন মিরাজের মা মোহসেনা বেগম। সার্বক্ষণিক পাহারা দিচ্ছেন সন্তানের কবর। কারও আসার কথা শুনলেই দৌড়ে যান ছেলের কবরের পাশে। যাতে কেউ লাশ তুলতে না পারে, সেজন্য প্রায় নির্ঘুম রাতও কাটছে তার।

নিহত মিরাজের বাবা মামলার বাদী আব্দুস ছালাম বলেন, 'শুনেছি মামলার তদন্তের স্বার্থে ছেলের মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করা হবে। তবুও আইনজীবীদের সঙ্গে বসে যদি মরদেহ উত্তোলন ছাড়াও বিচারের পথ থাকে তবে মরদেহ উত্তোলন না করার আবেদন করা হবে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে