রংপুরে তাপ ও লোডশেডিংয়ে জনজীবন হাঁসফাঁস হয়ে উঠেছে। কেউ নেই শান্তিতে। বিরূপ আবহাওয়ায় বেড়ে চলেছে হিটস্ট্রোক, জ্বর, সর্দি, কাশি ও ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। প্রাণিকূলও এ থেকে রেহাই পাচ্ছে না।
সোমবার রংপুরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আবহাওয়ার বিরূপ আচরণে রংপুরে বেড়ে চলেছে হিটস্ট্রোক, জ্বর, সর্দি, কাশি ও ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। বিশেষ করে এসব রোগে শিশু ও বয়স্করা আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি। এ অবস্থায় চিকিৎসকরা তাপপ্রবাহে প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বের না হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। তবে নিম্নআয়ের মানুষ পড়েছেন বিপাকে। সংসার চালাতে বাধ্য হয়েই কাজে যাচ্ছেন তারা। অনেকেই আবার গরম সইতে না পেরে অসুস্থও হয়ে পড়ছেন।
বিভাগের সর্ববৃহৎ চিকিৎসাকেন্দ্র রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালসহ জেলার বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত দুই সপ্তাহে প্রায় তিন শতাধিক নারী-পুরুষ ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দিসহ মৌসুমি রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন।
তা ছাড়া প্রতিদিনই কম-বেশি রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। তীব্র গরমের কারণে নিম্নআয়ের দিনমজুর, শ্রমিক, ক্ষেত মজুররা হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তিন দিন আগে রমেক হাসপাতালে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত একজনের মৃতু্য হয়েছে।
রমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে কথা হয় এক যুবকের সঙ্গে। প্রচন্ড জ্বরে আক্রান্ত দেড় বছর বয়সি শিশু সন্তানকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন তিনি। ওই যুবক বলেন, 'কয়েকদিন আগে আমার জ্বর হয়েছিল। এখন মোটামুটি সুস্থ। কিন্তু ছেলেটার জ্বর কমছে না। বাসায় প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছি। সুস্থ হয়ে না ওঠায় হাসপাতালে নিয়ে এসেছি।'
হাসপাতালে নবজাতক, শিশু ও কিশোর রোগ অভিজ্ঞ ডা. মাহফুজার রহমান বলেন, প্রচন্ড রোদের কারণে এমনটি হয়েছে। প্রায় প্রতি ঘরে জ্বর। তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এজন্য ডাবসহ তরল জাতীয় ফলমূল খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
রংপুর চিড়িয়াখানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আম্বার হোসেন তালুকদার জানান, সোমবার দুপুরে চিড়িয়াখানায় গিয়ে দেখা গেছে প্রাণীগুলো শীতল পরশের জন্য ছটফট করছে। তবে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ বলছে, গরমের কারণে চিড়িখানার প্রাণীদের বিশেষ যত্ন নেওয়া হচ্ছে। খাঁচাবন্দি পশু-পাখির শরীর ঠিক রাখতে ভিটামিন সি ও স্যালাইন খাওয়ানো হচ্ছে। বাঘ এবং সিংহের খাঁচায় দেওয়া হয়েছে বৈদু্যতিক ফ্যান।
নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ভ্যাপসা গরমে অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন কর্মজীবী মানুষজন। ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। তাপপ্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় চাহিদা বেড়েছে ডাবসহ তরল জাতীয় খাবারের। চলতি পথে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে লেবু ও ফলের শরবত খেয়ে শরীর জুড়িয়ে নিচ্ছেন অনেকে। তরল খাবারের পাশাপাশি কদর বেড়েছে হাত পাখার।
রংপুরের সিভিল সার্জন ডা. মোস্তফা জামান চৌধুরী বলেন, গত কয়েকদিন ধরে তাপমাত্রা ৩৪-৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে। আবহাওয়া স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হওয়াই ভালো। বর্তমান পরিস্থিতিতে বেশি করে তরল জাতীয় শরবত, ডাবের পানি পান করা উচিত।
একদিকে বাইরে কড়া রোদের ঝলকানি, বাতাসে গরমের ঝাঁঝ এমন আবহাওয়ার মধ্যে রংপুরে আবারও শুরু হয়েছে তীব্র লোডশেডিং। বিদু্যৎ গ্রাহকদের অভিযোগ, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এক ঘণ্টা পর পর লোডশেডিং চলছে। সঙ্গে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকছে। এতে জনজীবনে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।