হাজীগঞ্জে বিএনপির দু'গ্রম্নপের সংঘর্ষ

রক্তভেজা নিথর শরীরে মায়ের কোলে ফিরল সাইমন

প্রকাশ | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

চাঁদপুর প্রতিনিধি
'প্রতিদিনই এশার নামাজ আদায় করতে মসজিদে যাওয়ার সময় বলে যায়। এদিনও মসজিদে গিয়েছে। কিন্তু আমার কাছে বলে যায়নি। তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি এলাকায়। রাত ৮টার পরে লোকজন বাসার সামনে তাকে নিয়ে আসে। কিন্তু রুক্তভেজা নিথর শরীরে। আমার একমাত্র ছেলের এ অবস্থা দেখে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। কেন আমার ছেলেকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। এভাবে ১৬ বছর বয়সি কিশোর ছেলে সাইমনের হত্যার বর্ণনা দিলেন মা বিউটি আক্তার। গত ২০ সেপ্টেম্বর রাতে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ পৌর এলাকার মকিমাবাদ বিএনপির দুই গ্রম্নপের সংঘর্ষে নিহত হয় কিশোর সাইমন। গত রোববার পৌর এলাকার মিঠানিয়া ব্রিজ সংলগ্ন একটি ৫ তলা ভবনে সাইমনদের ভাড়া বাসায় কথা হয় তার মা-বাবার সঙ্গে। এদিন সন্ধ্যায় সাইমনের গ্রামের বাড়ি ফরিদগঞ্জ উপজেলার সুবিদপুর ইউনিয়নের দিকদাই গ্রামে তাকে দাফন করা হয়। বিউটি আক্তার বলেন, 'স্বপ্ন ছিল ছেলে কোরআনের হাফেজ হবে। যে কারণে গত দুই বছর আগে এলাকার সাউদুল কুরআন হিফজ মাদ্রাসায় ভর্তি করাই। সেখানে হিফজ বিভাগে পড়াশোনা করত সাইমন। ঘটনার দিন শুক্রবার দুপুরে আমার ছেলে খুব আনন্দ উলস্নাস করছিল। প্রতিবেশীরা বলছিল সাইমন খুব দুষ্টামি করে, তার কোনো বিপদ হতে পারে। কিন্তু এসব আমি কিছুই মনে করিনি। পরক্ষণে সত্যি আমি ছেলেকে হারিয়ে ফেললাম। আর কোনোদিন সাইমন আমাকে মা বলে ডাকবে না।' সাইমনের বর্তমান বাবা ইউনুছ বলেন, 'সাইমুন হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক জামে মসজিদে এশার নামাজ পড়তে আসে। আমিও সেখানে নামাজ আদায় করতে যাই। ৪ রাকাত নামাজ শেষে একজন পরিচিত ব্যক্তি ফোন দিয়ে জানায় সংঘর্ষে সাইমন আহত হয়েছে। তখন দুই গ্রম্নপের সংঘর্ষের মধ্যে অনেক কষ্টে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে গিয়ে তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় পাই। সেখান থেকে কুমিলস্না রেফার করে। রাতেই কুমিলস্না থেকে পাঠায় রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় শনিবার সন্ধ্যায় সাইমন মারা যায়।' ইউনুছ হত্যার ঘটনা সম্পর্কে বলেন, 'তখন বিএনপির দুই গ্রম্নপের সংঘর্ষ চলছিল। নামাজ শেষে বাসায় আসার জন্য সাইমন বড় মসজিদের গেটের সামনে রাস্তার পাশে দাঁড়ায়। এ সময় সন্ত্রাসীরা তাকে পেছন থেকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে গলা ও পিঠে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। ওই অবস্থায় লোকজন আমাকে ফোন দিয়ে জানায়।' এদিকে সাইমন হত্যার ঘটনায় জনৈক সাইফুল ইসলাম নামে মামা পরিচয়ের একজন ব্যক্তি হাজীগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেছেন। থানার ওসি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুক বলেন, মামলায় ৩০০ থেকে ৪০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।