হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় দখল দূষণ ও অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে কুশিয়ারা ও শাখা বরাক নদী। নবীগঞ্জ উপজেলার অংশে বালু উত্তোলনে সরকারি কোনো অনুমতি না থাকলেও টানা অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে হুমকির মুখে রয়েছে কুশিয়ারা নদীর উভয় তীরে অবস্থিত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। অন্যদিকে শাখা বরাকের মায়াবি বুকে প্রতিদিন ফেলা হচ্ছে শহরের সব ময়লা-আর্বজনা। একদিকে নদীতে তৈরি হচ্ছে ভাগাড় অন্যদিকে এই ভাগাড়ে আগুন দেওয়ায় ধোঁয়ায় আশপাশের মানুষ শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছেন শহরবাসী।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, উপজেলার আউশকান্দি ও দীঘলবাক ইউনিয়নে কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী কসবা, দুর্গাপুর, পাহাড়পুর, পারকুল, শেরপুর বাজারের নিকটবর্তী স্থানসহ কয়েকটি জায়গা থেকে দীর্ঘদিন ধরে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে তোলা হচ্ছে বালু। এসব বালু চড়াদামে ট্রাকপ্রতি বিক্রি করা হচ্ছে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে। প্রতি ট্রাক বালু বিক্রি হচ্ছে ৬৫০০-৮৫০০ হাজার টাকা দরে।
সম্প্রতি জানা গেছে, নতুন করে বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বালু উত্তোলনের জন্য ড্রেজার মেশিন ও পাইপ প্রস্তুত করেছে। দীর্ঘদিন ধরে ভিন্ন নামে ৪-৫টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সরকারি অনুমতি ছাড়াই স্থানীয় প্রভাবশালীদের তত্ত্বাবধানে কুশিয়ারা নদীর নবীগঞ্জ উপজেলার অংশ থেকে দিন-দুপুরে অবৈধ বালু উত্তোলন করছে। প্রশাসন কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরিবেশবিদরা। অন্য দিকে এক সময়ের উত্তাল স্রোতের বরাক নদী কালেরগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। নদীপথ ফিরে পেতে বিভিন্ন সময় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করেও যেন সুফল মিলছে না এলাকাবাসীর। রাঘব বোয়ালদের দখলে রয়েছে বরাক নদীর চরাঞ্চল। দখল ও দূষণের ফলে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কপথগুলো বর্ষা মৌসুমে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। সামান্য বৃষ্টিতেই শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কপথগুলো বর্ষা মৌসুমে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। সামান্য বৃষ্টিতেই শহরের সড়কগুলো পানির নিচে তলিয়ে যায়। এতে সড়কগুলো অকালেই ভেঙে পড়ে। এ নিয়ে পৌর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে উদাসীনতার অভিযোগও রয়েছে। যদিও চলতি বছরে পৌর কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে ড্রেন নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নবীগঞ্জ শেরপুর সড়কের এক নম্বর ব্রিজের নিচ দিয়ে যে খালটি শিবপাশা ঠাকুর পাড়ার ভেতর প্রবাহিত হয়ে নোয়াপাড়া-শাখা বরাক নদীতে মিলিত হয়েছে। এই স্থানের অনেকটাই এখন দখলদারদের কবলে বিলীন হয়ে গেছে। প্রায় শত কোটি টাকার ডিসির খতিয়ানভুক্ত খাস ভূমি দখল নিয়ে প্রশাসনের ভূমিকায় তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। ঐতিহ্যবাহী শাখা বরাক নদীটি কালের আবর্তে দখলদারদের কবলে পড়ে একটি নালায় পরিণত হয়েছে। এসব যেন দেখার কেউই নেই।
২০২০ সালের ২ মার্চ নবীগঞ্জের শাখা বরাক নদী সচল ও প্রবাহমান রাখতে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসন আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা দেয়। তৎকালিন জেলা প্রশাসক কামরুল হাসানের নির্দেশে উপজেলার শাখা বরাক নদী থেকে উচ্ছেদ অভিযান চলানো হয়। বরাক নদীর ১০১টি স্থাপনা উচ্ছেদ করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু করোনা সংক্রমণ বাড়ায় অভিযান শুরুর কিছুদিন পরই বন্ধ হয়ে যায়। এখন পর্যন্ত নদী সচল ও প্রবাহমান রাখতে আর কোনো কার্যক্রম লক্ষ্য করা যায়নি। বর্তমানে শাখা বরাক নদীতে ফেলা হচ্ছে শহরের সব ময়লা-আবর্জনা। এতে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ, বাড়ছে দূষণ ছড়িয়ে পড়ছে রোগব্যাধি।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য তোফাজ্জল সোহেল বলেন, 'কুশিয়ারা নদী থেকে তোলা হচ্ছে অবৈধ বালু। অন্যদিকে শাখা বরাক নদী করা হয়েছে দখল, বরাকে প্রতিনিয়ত ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। দীর্ঘদিন ধরে এর প্রতিবাদ করলেও প্রশাসন কার্যত কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। অতিদ্রম্নত বালু উত্তোলন বন্ধে ও দখলদারদের উচ্ছেদপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জোরদাবি জানাচ্ছি।'
আউশকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দিলাওয়ার হোসেন বলেন, কুশিয়ারা নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করার জন্য দাবি জানাচ্ছি। আর না হয় এলাকায় নদীভাঙন তীব্র আকার ধারণ করবে।
ইউএনও অনুপম দাশ জানান, কুশিয়ারা নদী থেকে বালু উত্তোলনের জন্য নবীগঞ্জের কোথাও অনুমতি নেই। বালু উত্তোলন করলে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।