কুমিলস্না মডার্ন হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালনে বাধা ও তার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দেওয়াসহ অবৈধভাবে একজনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক করার ঘটনায় অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, সরকার পতনের পর সাবেক এমপি বাহার চক্র প্রধান শিক্ষক একেএম আক্তার হোসেনকে দায়িত্ব থেকে অপসারণ করতে শিক্ষার্থীদের রাস্তায় নামিয়েছে। অধিকাংশ শিক্ষকের অভিযোগ আন্দোলনের নেপথ্যে আছেন বাহারপন্থি কয়েকজন এমপিওভুক্ত সিনিয়র শিক্ষক ও খন্ডকালীন কিছু শিক্ষক।
এ অবস্থায় প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রমে স্থবিরতা নিরসন করে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে রোববার জেলা প্রশাসন ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে। এদিকে প্রায় ৮ বছর আগে সাবেক এমপি বাহারের নির্দেশে বিদ্যালয়টির ১৯ জন শিক্ষক-কর্মচারী চাকরিচু্যত হলেও তারা আজও কর্মস্থলে ফিরতে পারেননি। চাকরিচু্যত শিক্ষকদের অভিযোগ, বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ আফজল খানপন্থি হওয়ার অপরাধে সাবেক এমপি বাহার অন্যায়ভাবে তাদের চাকরিচু্যত করেছিলেন।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৩ সালে এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠাতা করেন প্রয়াত প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ আফজল খান। ২০১৬ সালে তৎকালীন সদর আসনের এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন নিজের পছন্দ মতো বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটি দিয়ে আফজল খানপন্থি ১৯ জন এমপিওভুক্ত ও খন্ডকালীন শিক্ষক-কর্মচারীকে চাকরিচু্যত করেন। দীর্ঘদিন তারা আইনি মোকাবিলা করে চাকরি ফিরে পাওয়ার প্রক্রিয়া করলেও বাহারের নির্দেশের কারণে যোগদান করতে পারেননি। এদিকে সরকার পতনের পর বিদ্যালয়ের বর্তমান বাহারপন্থি শিক্ষকদের একটি অংশ প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষককে চাকরিচু্যত করতে তাদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে রাস্তায় নামান।
এদিকে চাকরিচু্যতরা দায়িত্ব ফিরতে এরই মধ্যে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। তারা হচ্ছেন- সহকারী শিক্ষক শহীদুল ইসলাম, কামাল হোসেন, প্রিয়লাল মজুমদার, আসমা খানম, মানিক চন্দ্র ভৌমিক, তাহমিনা স্মৃতি, আয়েশা ইয়াসমিন, বোরহান উদ্দিন, দিদার ই ইলাহী, সাইফুল ইসলাম, তাসনিম আহমেদ, আবদুল বাছির, আল আমিনসহ আরও পাঁচজন অফিস স্টাফ।
চাকরিচু্যতদের মধ্যে সিনিয়র সহকারী শিক্ষক শহীদুল ইসলাম বলেন, 'এমপি বাহারের নির্দেশে তার গঠিত কমিটি আমাদের অন্যায়ভাবে চাকরিচু্যত করার প্রায় আট বছর কেটে গেছে। চাকরি ফিরে পেতে আদালত, বোর্ড, শিক্ষা অফিসসহ স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছি, বাহারের ভয়ে কেউ সহায়তা করেনি। আদালতের চিঠির কিংবা নির্দেশনারও তারা বাস্তবায়ন করেনি। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এই সময় আশা করি, ন্যায় বিচার পাব।' প্রধান শিক্ষক একেএম আক্তার হোসেন বলেন, 'সরকার পতনের পর থেকেই সাবেক এমপি বাহারপিন্থ কিছু শিক্ষকের ইন্ধনে আমাকেসহ কয়েকজন শিক্ষককে পদত্যাগে বাধ্য করতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে নামানো হয়। আমি কোনো অনিয়ম ও দুর্নীতি করে থাকলে তা জেলা প্রশাসন কিংবা বোর্ড কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে পারে। কিন্তু তদন্তের আগেই জোরপূর্বক পদত্যাগে স্বাক্ষর করিনি, কর্মস্থলেও যেতে পারছি না, ছুটিতে আছি।'
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা বলেন, 'আন্দোলনের সময় বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটি ছিল না। প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক অনুপস্থিত ছিলেন। তাই গত ১৮ আগস্ট শিক্ষকরা গোপন ভোটে আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে। ছাত্রদের ইন্ধন দিয়ে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামানোর বিষয়টি সঠিক নয়।'
কুমিলস্না জেলা প্রশাসক ও বিদ্যালয়টির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি আমিরুল কায়ছার বলেন, বিভিন্ন বিষয়ে কিছু অভিযোগ এসেছে। তদন্তের জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদা আক্তার জ্যোতিকে আহ্বায়ক করে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অপর দুই সদস্য হচ্ছেন- জেলা শিক্ষা অফিসার ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার। কমিটির প্রতিবেদন পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।