নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার বিশকাকুনী ইউনিয়নের সরিস্তলা বাজারে প্রায় ২০০ বছরের পুরনো ৬টি রেইন্ট্রি গাছ মরাণাপন্ন অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। বিভিন্ন সময় পথচারীসহ গাছের নিচে থাকা দোকানের ওপর এসব গাছের মরা ডালপালা ভেঙে পড়ে। এতে আহত হন অনেকে। দোকান ভেঙে যাওয়ায় অনেকেই আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন। তবু এসব গাছ অপসারণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল গফুর বাচ্চু বলেন, 'গাছগুলো প্রায় ২০০ বছরের পুরনো। গাছের ডালপালায় মরণ ধরছে। আর গাছের ডাল মইরা মইরা পড়ে। মানুষ দুঃখ পায়। ভাঙে গাছের নিচের দোকান ঘর। আর এজন্য মানুষকে সারাক্ষণ ভয়ে থাকতে হয়।'
সরেজমিন দেখা গেছে, সরিস্তলা বাজার পুরোটাই ছেয়ে রেখেছে ৬টি রেন্ট্রি গাছ। আকার আকৃতিই সাক্ষী দিচ্ছে গাছগুলো বেশ পুরনো। বিশাল আকারের গাছের প্রতিটি ডালপালা ঘিরে রেখেছে পরগাছা জাতীয় গাছ। আর ডালের বেশিরভাগ অংশেই মরণ ধরেছে। আর এসব মরে যাওয়া ডাল বিভিন্ন সময় ভেঙে নিচে পড়ে। এজন্য মানুষকে আতঙ্কে থাকতে হয়।
সরিস্তলা বাজারে প্রায় ৪০ বছর ধরে ব্যবসা করে আসছেন ব্যবসায়ী আব্দুস সাত্তার। তিনি জানান, সরিস্তলা বাজারটি প্রায় ৩ একর ৭৩ শতাংশ জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত। এখানে ছোট-বড় প্রায় ৭০ থেকে ৮০টি দোকান রয়েছে। সপ্তাহের শনি ও মঙ্গলবার এখানে হাট বসে। গাছগুলো সম্পর্কে বলেন, লোকমুখে শুনেছেন গাছগুলোর বয়স প্রায় ২০০ বছরের কাছাকাছি হবে। বয়স বেশি হওয়ায় ডালগুলো মরে যাচ্ছে। আর এসব মরে যাওয়া ডাল ঝড়-বাদলে ভেঙে পড়ে। এতে নিচের দোকানপাট ভেঙে মানুষ আহতের ঘটনাও ঘটে। এজন্য আতঙ্কে থাকতে হয়। তাই তিনি গাছগুলো কেটে ফেলার দাবি জানান।
আর এক ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম বলেন, ছোটবেলা থেকেই গাছগুলোকে এমন বিশাল আকৃতির দেখে আসছেন। বর্তমানে এগুলো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এই গাছগুলোর বতর্মান বাজার মূল্য প্রায় ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকার মতো। গাছগুলো কাটা হলে এখানকার ব্যবসায়ী ও বাজারে কেনাকাটা করতে আসা লোকজন ঝুঁকিমুক্ত হবে।
জানা গেছে, উপজেলা পরিষদ চত্বরে ৫টি, জালশুকা বাজারে একটি ও ভিকুনিয়া বাজারে একটি, হোগলা বাজারে একটিসহ এমন বেশ কয়েকটি পুরনো গাছ রয়েছে। যেগুলো প্রত্যেকটি ঝুঁকিপূর্ণ গাছে পরিণত হয়েছে।
পূর্বধলা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাকির আহমেদ খান কামাল জানান, যে কোনো জাতীয় দিবস পালনের জন্য শিক্ষার্থীদের নিয়ে উপজেলা পরিষদ চত্বরে যেতে হয়। কিন্তু উপজেলা পরিষদ চত্বরের পুরনো গাছগুলোর ডালপালা মরে যাওয়ায় এগুলো ভেঙে শিক্ষার্থীদের ওপর পড়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কায় থাকতে হয়। তাছাড়া গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর হিসেবে প্রতিদিনই এখানে লোক সমাগম থাকে। তাই দুর্ঘটনা এড়াতে মরে যাওয়া গাছগুলো কেটে ফেলা জরুরি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার খবিরুল আহসান জানান, সরকারি গাছ কর্তনের বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। বর্তমান পরিপত্র অনুযায়ী ঝড়ে পড়ে যাওয়া, মরে যাওয়া গাছ কাটার বিধান রয়েছে। তবে বয়স পূর্ণ হওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ গাছ কাটার স্পষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই। উপজেলা পরিষদের গাছগুলো মৃতপ্রায় থাকায় পরিষদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক কর্তন করে নিলামে বিক্রয়ের অনুমতির জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর পাঠানো হয়েছে।