হাইওয়ে রাস্তার মধ্যে বিভিন্ন স্থানে ব্যক্তি মালিকানা ঘর

চরম বিড়ম্বনায় জায়গার মালিক, যানবাহন ও কর্তৃপক্ষ

প্রকাশ | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

ইমরান হোসাইন লিখন, বগুড়া
বগুড়ার মহাস্থান এলাকায় মহাসড়কের মাঝ বরাবর ব্যক্তিমালিকানার ভবন থাকায় যানবাহন চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের -যাযাদি
বগুড়ার মহাস্থান এলাকা থেকে শেরপুর উপজেলা পর্যন্ত প্রায় ৮টি স্থানে ব্যক্তিমালিকানা ও সরকারি দপ্তরের জায়গা ও স্থাপনা রয়েছে। বগুড়া-রংপুর মহাসড়ক ও এর বিভিন্ন স্থানের আন্ডারপাসের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। কিন্তু উলিস্নখিত স্থানগুলো অধিগ্রহণ না হওয়ায় এসব জায়গায় মহাসড়কের কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে প্রতিনিয়তই চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষ ও যাত্রীদের। বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যানুযায়ী- কিছু জায়গা অধিগ্রহণের কাজ এগিয়ে চললেও সরকারি দুটি দপ্তরের জায়গা অধিগ্রহণ হতে কত সময় লাগবে তার কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা জানা নেই তাদের। প্রায় দেড় বছর আগে অধিগ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আবেদন করা হয়েছে বলে জানান সাসেক প্রকল্প-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী। তবে কি কারণে এসব সমস্যার সমাধান হচ্ছে না সে বিষয়ে জানেন না এই কর্মকর্তা। অধিগ্রহণের কাজগুলো সম্পন্ন না হওয়ায় ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের বগুড়া অংশে প্রায় ৮টি জায়গায় শুরু হয়েছে চরম ভোগান্তি। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় এই স্থানগুলোয় হচ্ছে নানা ধরনের দুর্ঘটনা। এসব পথে চলতে গিয়ে দূরদূরান্তের অচেনা অজানা চালকরা পড়ছেন নানা ধরনের বিড়ম্বনায়। বগুড়ার মহাস্থান একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ও যানজটযুক্ত এলাকা। এখানে নির্মিত আন্ডারপাসটির ওপর দিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে গাড়ি চলাচল করলেও চরম ভোগান্তিতে নিচে দিয়ে চলাচলকারী যানবাহনগুলো। কারণ একেবারেই রাস্তার মাঝবরাবর রয়েছে দোতলা বিশিষ্ট একটি ভবন। এ ছাড়া বাজারের কার্যক্রম বর্তমানে চলে এই আন্ডারপাসের নিচেই। শুধু তাই নয়, ইতোমধ্যে স্থায়ী দোকান ও গাড়ি পার্কিয়ের জন্যও নিজেদের মতো করে ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এতে নানামুখী যানজট ও ভোগান্তি সবসময় লেগেই থাকে। তবে এখানকার বর্তমান অবস্থার কিছুই জানা নেই জেলা প্রশাসনের। এই জায়গার মালিক আব্দুল জলিলের ছেলে তাজুল ইসলাম বলেন, 'এটি আমাদের দোতলা বিশিষ্ট স্থাপনা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এই স্থাপনার জন্য প্রতিনিয়তই এখানে জটলা বাধে এবং ভোগান্তিতে পড়া মানুষগুলো আমাদের অহেতুক গালমন্দ করেন। আসলে তারা জানেন না, এখানে কি ধরনের জটিলতা হয়ে আছে। তাই আমরাও চাই শিগগরিই এর সমাধান হোক।' তিনি আরও বলেন, এখানে মোট ৮ থেকে ১০ শতক জায়গা নিয়েই জটিলতা। বর্তামেন ৭ ধারা হয়ে গেছে। আমরা আশা করি শিগগিরই বিষয়টি সমাধান হবে। টিএমএস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে একটি মসজিদ ও কাছেই রয়েছে ৫তলা ভবন। এ ছাড়া দোকানও রয়েছে বেশকিছু। এখানেও প্রতিনিয়ত যানজট লেগেই থাকে, দুর্ঘটনাও ঘটে। এখানকার বিষয়গুলোও জানা নেই জেলা প্রশাসনের। নওদাপাড়া এলাকার স্কাউটস প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এখানেও রয়েছে জটিলতা, তবে জেলা প্রশাসনের রাজস্ব্ব বিভাগ বলছে ইতোমধ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয় থেকে একটি আদেশ এসেছে দ্রম্নতই এর সমাধান হবে। বনানী রেশম বোর্ড এলাকায় রয়েছে চরম জটিলতা। এখানকার বিষয়টি সমাধান হতে কতদিন লাগবে তার কোনো সময়সীমা জানা নেই। কারণ জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্যানুযায়ী একই জায়গা দুবার অধিগ্রহণের বিষয়টি খুবই জটিল। রেশম বোর্ডের এখানে ঘটেছে এমন ঘটনা। জেলা প্রশাসন বলছে রেশম বোর্ডের এসবের কোনো কাগজপত্র নেই। মৌখিকভাবে একে-অপরকে বোঝাতে চেষ্টা চালালেও কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না। রেশম বোর্ডের কর্মকর্তা জানান, তারা প্রায় ১৯০৫ সাল থেকে ওই ৭ শতক জায়গার খাজনা দেন। কিন্তু এখন এসে নানা ধরনের জটিলতা শুরু হয়েছে। এই সমস্যার সমাধান হতে কতদিন সময় লাগবে তা বলা মুশকিল। কলোনি এলাকায় টিঅ্যান্ডটি অফিস। এখানকার বিষয়টিও খুবই জটিল বলে জানান বিটিসিএল ট্রান্সমিশন বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক দেবল কুমার রায়। তিনি বলেন, এখানে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা অনেকবার এসে দেখেছেন এবং কথা বলেছেন কিন্তু এখনো সমাধান হয়নি। শেরপুর এলাকার গাড়িদহ বাজারের আন্ডারপাসের নিচে রয়েছে বেশকিছু স্থাপনা। এখানেও প্রতিনিয়ত জানযট লেগেই থাকে। অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হয়নি। কতদিন লাগবে তাও জানে না কর্তৃপক্ষ। সাসেক প্রকল্প-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবিব বলেন, 'আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি দ্রম্নত সময়ের মধ্যে এসব সমাধানের জন্য। তবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অধিগ্রহণ জটিলতার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আমরা কাজ করতে পাড়ছি না।' বগুড়া জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আফসানা ইয়াসমিন বলেন, 'ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের চলমান কাজের বিভিন্ন স্থানে অধিগ্রহণ জটিলতা রয়েছে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি এসব সমাধানের জন্য। তবে দুটি জায়গা নিয়ে বেশি জটিলতা আছে। এগুলো হলো শহরের বনানী এলকার রেশম বোর্ড ও ফুলদীঘি এলাকায় বিএডিসি দপ্তরের কিছু জায়গা। আমাদের কাছে তথ্য আছে যে ইতোপূর্বে এ জায়গা দুটি অধিগ্রহণ হয়েছে। এর কোনো তথ্য কিংবা নথি কারও কাছে নেই। এ কারণে চরম অধিগ্রহণ জটিলতায় রয়েছে। আন্তঃমন্ত্রণালয়ে একটি মিটিংয়ের মাধ্যমে এর সমাধান করতে হবে। আমরা চেষ্টা করছি। অন্য স্থানের জটিলতাযুক্ত বেশকিছু জায়গার অধিগ্রহণের কাজ এগিয়ে চলছে। শিগগিরই সব সমস্যার সমাধান হবে।'