৪ জেলায় আত্মহত্যা ও পানিতে ডুবে আরও চার অপমৃতু্য
অভয়নগরে বাবার বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধী ছেলেকে হত্যার অভিযোগ
প্রকাশ | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
স্বদেশ ডেস্ক
যশোরের অভয়নগরে প্রতিবন্ধী ছেলেকে হত্যা করে লাশ বালি চাপা দিয়ে রাখার অভিযোগ উঠেছে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। অন্যদিকে আত্মহত্যা ও পানিতে ডুবে বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ, নওগাঁর আত্রাই, কিশোরগঞ্জের ভৈরব ও নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় আরও চারজনের অপমৃতু্য হয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত-
অভয়নগর (যশোর) প্রতিনিধি জানান, যশোরের অভয়নগরে বালি চাপা দেওয়া অবস্থায় শরিফুল ইসলাম ওরফে সাকিব (২১) নামে এক মানসিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী যুবকের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার রাতে উপজেলার একতারপুর গ্রামের পূর্বপাড়া এলাকায় একটি নির্মাণাধীন ভবনের ভেতর থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
হত্যা করে বালির নিচে সাকিবের লাশ লুকিয়ে রেখে বাবা পালিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন নিহতের বোন মৌসুমী বেগম। নিহত শরিফুল ইসলাম সাকিব একতারপুর গ্রামের পূর্বপাড়া এলাকার রঙমিস্ত্রী মজিবর রহমানের ছেলে ছিলেন।
স্থানীয়রা জানান, জন্ম থেকে সাকিব মানসিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী। তার বিবাহিত পাঁচ বোন শ্বশুরবাড়ি থাকেন। ১২ বছর আগে সাকিবের মা মারা যান। এরপর থেকে ছেলের প্রস্রাব, পায়খানাসহ যাবতীয় কাজ করতেন তার বাবা। গত মঙ্গলবার থেকে সাকিব ও তার বাবাকে এলাকায় বা তাদের নির্মাণাধীন বাড়িতে দেখা যায়নি।
প্রতিবেশী মোমেনা বেগম বলেন, শুক্রবার বিকালে সাকিবদের বাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় পচা দুর্গন্ধ পান। খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে তাদের নির্মাণাধীন বাড়ির একটি রুমের ভেতরে স্তূপকরা বালির মধ্যে হাত, পা ও পরনের কাপড়ের কিছু অংশ দেখা যায়। খবর পেয়ে রাতে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে।
নিহতের বোন মৌসুমী বেগম বলেন, 'মায়ের মৃতু্যর পর বাবা সাকিবের দেখাশোনা করতেন। কয়েকদিন পূর্বে বাবার সঙ্গে যোগাযোগ হলে জানতে পারি চিকিৎসার জন্য সাকিবকে নিয়ে পাবনা জেলায় রয়েছেন। কি কারণে বাবা সাকিবের সঙ্গে এমন করলেন, নাকি অন্য কোনো ঘটনায় মৃতু্য হয়েছে তা আলস্নাহ ভালো জানেন।'
অভয়নগর থানার ওসি এসএম আকিকুল ইসলাম বলেন, ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ যশোর মর্গে পাঠানো হয়েছে। তবে নিহতের পিতা মজিবর রহমান পলাতক রয়েছেন।
বাগেরহাট প্রতিনিধি জানান, বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ উপজেলার বারুইখালীতে ভাইয়ের উপর অভিমান করে বোন জেসমিন আক্তার (১১) গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার সকালে। মেয়েটি তার বসতঘরের আড়ার সঙ্গে ফাঁস লাগায়। জেসমিন উপজেলার বারুইখালী গ্রামের আবুল কাশেমের মেয়ে। স্থানীয়রা জানান, জেসমিন সকালে ভাইয়ের সঙ্গে নাস্তা করতে গিয়ে ভাইবোনের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। এতে অভিমান করে ঘরে গিয়ে আড়ার সঙ্গে গলায় রশি বেঁধে আত্মহত্যা করে।
আত্রাই (নওগাঁ) প্রতিনিধি জানান, নওগাঁর আত্রাইয়ে সৎ মায়ের অত্যাচারের বলি হলো হাতেম (১৮) নামের এক যুবক। পুলিশ ওই যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে। এটি হত্যা না আত্মহত্যা এ নিয়ে চলছে এলাকায় ব্যাপক গুঞ্জন। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার জগদাস গ্রামে।
জানা যায়, ওই গ্রামের মনিরুল ইসলাম দ্বিতীয় বিয়ে করলে সৎমা ছেলে হাতেম আলীকে (১৮) প্রতিনিয়ত অত্যাচার ও নির্যাতন করতেন। অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যান তিনি। এ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গ্রাম্য সালিশ হয়। ওই সালিশে সৎমা হাজির না হওয়ায় বিষয়টি অমিমাংসিত থেকে যায়। এদিকে সালিশের পর হাতেমের পিতা মনিরুল কৌশলে হাতেমকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে যান। পরে রাতে মনিরুল চিৎকার করতে থাকেন তার ছেলে হাতেম গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। পরদিন শুক্রবার নিহতের ভাই আব্দুল হাকিম তিনজনকে আসামি করে আত্রাই থানায় মামলা করেন। পুলিশ নিহত হাতেমের পিতা মনিরুল (৪৫) ও সৎ মা রোজিনা বিবিকে (৩৫) গ্রেপ্তার করে নওগাঁ জেল হাজতে পাঠিয়েছে।
আত্রাই থানার ওসি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, 'আমরা লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নওগাঁ মর্গে পাঠিয়েছি। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে জানা যাবে এটি হত্যা না আত্মহত্যা।'
ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, কিশোরগঞ্জের ভৈরবে নাসিমা বেগম (৪২) নামের এক গৃহবধূ ঋণের চাপ সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গত শুক্রবার রাতে নিজ বাড়িতে বিষপান করে তিনি মারা যান। তিনি উপজেলার শ্রীনগর গ্রামের পশ্চিমপাড়া এলাকার মোস্তাক আহমেদের স্ত্রী। শনিবার সকালে খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।
প্রতিবেশীরা জানায়, গৃহবধূ নাসিমার স্বামী অসুস্থ এবং ছেলে নেশা করে। সংসার চালাতে গিয়ে গৃহবধূ অনেক টাকা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। গত কয়েকদিন ধরে পাওনাদাররা তাকে টাকা পরিশোধের জন্য চাপ দিচ্ছিল। ঋণের চাপ সহ্য করতে না পেরে শুক্রবার মধ্যরাতে বিষপানে তিনি আত্মহত্যা করেন।
ভৈরব থানার ওসি হাসমত উলস্নাহ জানান, লাশ ময়না তদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ পাঠানো হয়েছে। পরিবার ও প্রতিবেশী সূত্র জানায় ঋণের চাপে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কেন্দুয়া (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি জানান, নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় পানিতে ডুবে ১ শিশুর মৃতু্য হয়েছে। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়নের শ্রীধরপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, একই ইউনিয়নের পাঁচহার গ্রামের শেখারুল মিয়ার ৩ বছরের শিশু ছেলে কাদির নানুর বাড়ি বেড়াতে গিয়ে এই দুর্ঘটনার শিকার হয়। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।