পাবনা শহরের শালগাড়িয়াস্থ সিদ্দিক মেমোরিয়াল স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র ও সদর উপজেলার ব্রজনাথপুর গ্রামের আবুল কালাম আজাদ-দিল আফরোজ দম্পতির চার সন্তানের মাহবুব হাসান নিলয় (১৩) তৃতীয়। ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্যই শহরের ছাত্রদের বিক্ষোভে যোগ দেয় নিলয়। এদিন বাড়ি থেকে যাওয়ার আগে মায়ের হাতে ভাত খেয়ে বের হয়েছিল। কর্মসূচি চলাকালেই আওয়ামী লীগ নেতাদের গুলিতে নিহত হয় শিক্ষার্থী নিলয়। নিলয়কে হারিয়ে মনের মধ্যে গভীর শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে। মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে তার পরিবার। এরপরও ছেলের জীবনের বিনিময় দেশ স্বৈরাচার মুক্ত হয়েছে- এটাই তাদের কাছে বড় পাওয়া বলে মনে করেন নিলয়ের বাবা-মা।
বাবা জেলা আনসার কমান্ডারের গাড়িচালক আর মা গৃহিণী। নিলয়ের জমজ বোন মাহবুবা নাজনীন। নিলয়ের বড় ভাই মেহেদি হাসান মিলন সৌদিপ্রবাসী। ঘটনার এক সপ্তাহ আগে দেশে এসেছেন। একসঙ্গে তিন ভাই বোন সেদিন আন্দোলনে গিয়েছিলেন।
নিলয়ের মা দিল আফরোজ বলেন, 'গত ৪ আগস্ট সকালে আমি নিজ হাতে তিন সন্তানকে খাইয়ে দেই। নিলয় কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে আবারও আমার কাছে খাবার চায়। আমি খাইয়ে দেই। দুই গাল ভাত মুখে নিয়েছিল। খাওয়া শেষে বাসার সিঁড়ি থেকে তিন ধাপ নামার সময় আমার সঙ্গে শেষ কথা হয়। বলেছিলাম, তোমার খবর পাব কীভাবে, তোমার কাছে তো ফোন নেই। বলেছিল খবর নিতে হবে না। সেই যাওয়াই ছিল অন্তিম যাত্রা।'
তিনি বলেন, 'আমরা পরিবার থেকেই ছেলেমেয়েদের এই আন্দোলনে যেতে উৎসাহ জুগিয়েছি। কারণ, দেশে এত অত্যাচার হচ্ছে, বৈষম্য হচ্ছে। মানুষ অধিকার হারাচ্ছে। এ জন্য তাদের আন্দোলনে পাঠিয়েছি। এর মধ্যে ছোট ছেলেটা আমার কাছে ফিরেছিল লাশ হয়ে। তবে মনের কাছে আনন্দ, আমার সন্তান যা বলেছিল, তাই করেছিল। আমার প্রতিশোধ নেওয়ার ইচ্ছা নেই।'
নিলয়ের বাবা আবুল কালাম আজাদ বলেন, 'আমি আমার ছেলেকে নিয়ে গর্বিত। কারণ, তার রক্ত বৃথা যায়নি। আমি বিচার চাই না। কার কাছে চাইব। তবে যেহেতু ছেলেটা এ দেশের জন্য মারা গেছে, তাই যদি দেশ ও দেশের মানুষ মনে করে তাকে কোনোভাবে সম্মান দেবে, তাহলে দেবে। না দিলে নাই। কিন্তু এ দেশটা যেন আর স্বৈরাচারের হাতে না যায়।'
পাবনা সদর থানার ওসি রওশন আলী বলেন, নিহতের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের ধরতে পুলিশের বিশেষ অভিযান চলছে।