জনগণের নজর কাড়ছে খুলনার ভ্রাম্যমাণ 'নিরাপদ কৃষি বাজার'। কৃষকদের উৎপাদিত নিরাপদ সবজি, ফলমূল ও কৃষিপণ্য সরাসরি ক্রেতাদের হাতে পৌঁছে দিতে এমন উদ্যোগ। সপ্তাহে একদিন শহরের প্রাণ কেন্দ্র শিববাড়ি মোড়ে বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত ট্রাকে করে বিক্রি করা হচ্ছে এই নিরাপদ কৃষিপণ্য। এতে ক্রেতাদের সাড়াও পাচ্ছেন তারা।
খুলনা মহানগরীতে ভ্রাম্যমাণ এই নিরাপদ কৃষি বাজার বসানো হয়। বটিয়াঘাটা উপজেলার কৃষকদের কৃষিপণ্য একত্রিত করে মৈত্রী কৃষক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে এই ভ্রাম্যমাণ বাজারে সরাসরি ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করা হয়। এতে সহযোগিতা করছে লোকজ।
কৃষকরা জানান, নিরাপদ কৃষি বাজারে মিলছে উচ্ছে, কাঁচা মরিচ, ঝিঙা, ধুন্দল, কাঁচা পেঁপে, ডিম, পাকা কলা, কাঁচা কলা, ঢেঁরস, কচু, কচুর লতি, কলার মোচা, পুঁইশাক, কুষি, লাউ, কুমড়া, আমড়া, শশা, ওল কপি, চাল কুমড়া, বাতাবী লেবু, করলাসহ ৩০ পদের ফলমূল ও সবজি।
বটিয়াঘাটা সুকতারা গ্রামের কৃষক শ্যামল সরকার বলেন, 'সব ধরনের পণ্য এনেছি আমরা। প্রথম দিন হিসেবে যে বেচাকেনা হয়েছে তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। আশা করছি সামনে আরও বেশি বেচাকেনা হবে। অনেক ক্রেতা আসছে বেচাকেনা ভালো হয়েছে।'
ক্রেতা শরিফুল ইসলাম বলেন, আমি স্থানীয় একটি বাজার থেকে সবজি কিনে বাসায় যাওয়ার সময় এখানে ট্রাকে নিরাপদ সবজি দেখে এসেছি। বাজার থেকে যে সবজি কিনেছি, সে তুলনায় এখানে দাম অনেক কম। বাজারে ৬৫ টাকা করে ঝিঙা, এখানে ৩০ টাকা করে। সবজিগুলোও ভালো।'
মৈত্রী কৃষক ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক বিভাষ মন্ডল বলেন, গ্রামের সাধারণ কৃষকরা সবজি উৎপাদন করেন। কিন্তু বাজারে তারা ন্যায্য দাম পান না। কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য মধ্যস্বত্বভোগীদের মাধ্যমে ভোক্তাদের কাছে পৌঁছানো দাম এবং আমাদের বিক্রীত দামের ব্যাপক পার্থক্য থাকে। এই বৈষম্য দূর করতে এই আয়োজন।
তিনি আরও বলেন, গ্রামের কৃষকদের নিরেট জৈব পদ্ধতিতে উৎপাদিত বিষমুক্ত সবজি বাজারে সেই রকম নেই। বাজারের যেটা পাওয়া যায় সেটি চাষিদের বড় বড় ফার্মে তৈরি করে বিক্রি করা হয়। ওইসব সবজিতে প্রচুর কীটনাশক ও বিষ ব্যবহার হয়। যেটা খেয়ে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই কথা চিন্তা করে আমাদের ফেডারেশনের অনেক কৃষক রয়েছে যারা জৈব কৃষি পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদন করে, সেটি আমরা শহরের মানুষের কাছে উপস্থাপন করছি। নিরাপদ সবজি খেলে ওষুধ খরচ কমে যাবে। পাশাপাশি কৃষক ন্যায্য দাম পাবে।
ফাউন্ডেশনের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ মন্ডল বলেন, ৩০টি কৃষক সংগঠনের কৃষকরা আমাদের ফাউন্ডেশনের সঙ্গে জড়িত। তারা এই নিরাপদ সবজি উৎপাদন এবং বাজারে বিক্রি করে। এখানে দামের একটু তফাৎ আছে, আমরা ৩৫ টাকা কেজিতে পাইকারি উচ্ছে বিক্রি করি, এখানে ৪৫-৫০ টাকায়ও বিক্রি করছি। এই টাকা আমাদের কৃষকরা পাচ্ছেন। এই সবজির স্বাদও আলাদা এবং মানুষের স্বাস্থ্য সম্মত খাবার। ভোক্তা সরাসরি কৃষকের হাত থেকে কিনতে পারছে। এ জন্য আমরা এই উদ্যোগটি গ্রহণ করেছি।