একমাত্র ভরসা নৌকা

বিকল্প সেতু ভেসে যাওয়ায় দুর্ভোগে হাজারও মানুষ

প্রকাশ | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় সুয়ালক খালের ওপর কাঠের সেতু ভেঙে চলাচল বন্ধ -যাযাদি
চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার পুরানগড় ইউনিয়নের বাজালিয়া-শীলঘাটা সড়কের সুয়ালক খালের ওপর নির্মিত সেতুটির একাংশের সংস্কার কাজ চলমান থাকায় বিকল্প চলাচলের মাধ্যম হিসেবে প্রায় ৯ মাস আগে একটি কাঠের সেতু তৈরি করা হয়। চলতি বছরের মে মাসে কাঠের সেতুটি ভেঙে একটি ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক খালে পড়ে যায়। পরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঢিলেঢালাভাবে মেরামত করে কোনোরকম দায় সারেন। মেরামতের কিছুদিন যেতে-না যেতেই সেতুটি পাহাড়ি ঢলে ভেসে যায়। সে থেকে প্রায় ৩ মাস পার হয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত ওই কাঠের সেতুটি মেরামত করা হয়নি। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাতকানিয়া উপজেলার পুরানগড় ও চন্দনাইশ উপজেলার ধোপাছড়ি ইউনিয়নের প্রায় ৩০ হাজার বাসিন্দা। বর্তমানে দুই ইউনিয়নের মানুষের পারাপারের একমাত্র ভরসা নৌকা। এই পথে যাতায়াতকারীরা বলছেন, দুই ইউনিয়নের প্রায় ৩০ হাজার মানুষের চলাচলের জন্য নির্মিত বিকল্প কাঠের সেতুটি ৩ মাস আগে পাহাড়ি ঢলে ভেসে গেছে। মূল সেতুটি সংস্কারের কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট বিভাগ এখনো পর্যন্ত সেটি মেরামতের উদ্যোগ নেয়নি। তবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) বলছে ভিন্ন কথা। তারা বলছেন, বিকল্প কাঠের সেতুটির স্থলে টেকসই স্টিলের বেইলি ব্রিজ নির্মাণের জন্য বরাদ্দ পেতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করা হয়েছে। তবে এখনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের আগস্টে সাতকানিয়ায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে সেতুটির দক্ষিণ পাশের পিলারটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। একই বছরের নভেম্বর মাসে সেতুটির সংস্কার কাজ শুরু হয়। ১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা বরাদ্দে কাজটি পায় চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স নূর সিন্ডিকেট। এক বছরের মধ্যে কাজটি শেষ করে বুঝিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। চলতি বছরের নভেম্বরে কাজের মেয়াদ এক বছর পূর্ণ হবে। তবে সেপ্টেম্বর শেষ হতে চললেও কাজের তেমন কোনো অগ্রগতি নেই বললেই চলে। মূল সেতুটির সংস্কার কাজ শুরু করার আগে বিকল্প চলাচলের মাধ্যম হিসেবে একটি কাঠের সেতু তৈরি করা হয়। সেতুটি পাহাড়ি ঢলে ভেসে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয়রা। সেতুটি দিয়ে চন্দনাইশ উপজেলার ধোপাছড়ি ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার ও সাতকানিয়া উপজেলার পুরানগড় ইউনিয়নের ১০ হাজার মানুষ চট্টগ্রাম শহরে যাতায়াত করেন। এখনো পর্যন্ত কাঠের সেতুটি মেরামত না করায় সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। এ সড়ক দিয়ে চলাচলকারী চন্দনাইশ উপজেলার ধোপাছড়ি ইউনিয়নের বাসিন্দা মোজাম্মেল হক বলেন, 'আমি প্রায় সময় এই সেতুর ওপর দিয়ে যাতায়াত করি। বিগত ৩ মাস আগে পাহাড়ি ঢলে কাঠের সেতুটি ভেসে যায়। এখন পারাপারের একমাত্র ভরসা নৌকা। জরুরি প্রয়োজনে মানুষ ঝুঁকি নিয়ে নৌকাযোগে পারাপার হচ্ছেন।' পুরানগড় ইউনিয়নের শীলঘাটা গ্রামের বাসিন্দা সনজিৎ বড়ুয়া বলেন, কাঠের সেতুটি ভেঙে যাওয়ায় আমাদের গ্রামের মানুষের যাতায়াতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। আলী আকবর নামে অপর এক বাসিন্দা বলেন, 'আমাদের এলাকায় কোনো হাসপাতালও নেই। মুমূর্ষু রোগী ও গর্ভবতী মহিলাদের যাতায়াতে দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে।' এ বিষয়ে জানতে ঠিকাদার মো. দিদারুল ইসলামের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ভারী বর্ষণের ফলে সৃষ্ট পাহাড়িঢলে খালটিতে অনেক বেশি পানি হয়েছে। এতে সেতুর দক্ষিণ পাশের পিলারটি পানিতে ডুবে গেছে। তাই আপাতত কাজ বন্ধ রয়েছে। বৃষ্টিপাত ও খালের পানি কমে গেলে সেতুর সংস্কার কাজ শুরু করা হবে। উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কর্মকর্তা সবুজ কুমার দে বলেন, 'বিকল্প সেতুটি প্রথমে একবার মাঝখানে ভেঙে গিয়েছিল। পরে সেটি মেরামতের কিছুদিন যেতে-না যেতেই পাহাড়ি ঢলে ভেসে যায়। বিকল্প সেতুটি বারবার যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য আমরা স্টিলের বেইলি ব্রিজ নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। তবে এখনো বরাদ্দ পাইনি। বরাদ্দ পেলে কাজ শুরু করা হবে।'