ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেটে তিন পুত্রের চাকরি

শুধু নামের মিল থাকায় মুক্তিযোদ্ধা সেজেছেন সোনাতলার কুদ্দুস

প্রকাশ | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

ইমরান হোসাইন লিখন, বগুড়া
ভোলায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে পরিচ্ছন্নতা অভিযান উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক আজাদ জাহান -যাযাদি
শুধু নামের মিল রয়েছে। বিভাগ, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন এমনকি গ্রামের নামটাও মিল নেই। শুধু ব্যক্তির নামে মিল থাকাতেই মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি হয়েছে কুদ্দুসের তিন পুত্রের। এদের দুইজন পুলিশে ও একজন কর্মরত রয়েছে কারারক্ষীতে। এমন জালিয়াতি করে চাকরিতে কর্মরত থাকলেও এই পরিবারের দাপটে অতিষ্ঠ গ্রামবাসী। বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার তেকানী চুকাইনগর ইউনিয়নের ছাতিয়ানতলা গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস। তিনি গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার জুমারবাড়ি ইউনিয়নের মেছট গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের সার্টিফিকেট চুরি করে তা নকলভাবে তৈরি করেন। পরে পর্যায়ক্রমে তার তিন পুত্রকে সরকারি চাকরিতে যোগদান করান। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সেজে পুত্রদের এমন সুযোগ-সুবিধা করে দিলেও নিজের জন্য মুক্তিযোদ্ধার কোনো সুযোগ-সুবিধা নেননি, অর্থাৎ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হননি তিনি। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেটে চাকরি হয়েছে- এমন সংবাদের ভিত্তিতে অনুসন্ধানে নামে যায়যায়দিনের এই প্রতিবেদক। এক পর্যায়ে গাইবান্ধার প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কুদ্দুসের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। বের করেন তার মুক্তিযোদ্ধা সংক্রান্ত নথিপত্র। সেখানে দেখা যায় আব্দুল কুদ্দুসের বেসামরিক গেজেট ১১২৭ ও লাল মুক্তিবার্তা নম্বর- ০৩১৭০৫০৪২১। তিনি বলেন, 'অনেক বছর আগের কথা তখন হঠাৎ আমার বাড়িতে যাতায়াত শুরু করেন সোনাতলার কুদ্দুস। নামের মিল থাকায় একপর্যায়ে আমাকে দোস্ত বলে ডাকতে শুরু করেন। শুনতে চান মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার নানা গল্প। কাগজপত্রও দেখতে চান। আমিও দেখাই। তাদের বাড়িতেও গেছি অনেকবার। ওই সময় আমার মনে এসব নিয়ে কোনো ধারণা ও সন্দেহ ছিল না। কারণ আমার সার্টিফিকেট নিয়ে অন্য কেউ কাজে লাগাতে পাড়বে এমন চিন্তা আমি কখনোই ভাবিনি। পরে বিভিন্ন মাধ্যামে শুনতে পাই, আমার সার্টিফিকেট চুরি করে ওইটা আবার নকল তৈরি করে তার তিন পুত্রকে চাকরি দিয়েছেন। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হলেও আমার পুত্রদের চাকরি দিতে পারলাম না। আর অন্য কেউ সার্টিফিকেট চুরি করে তিন পুত্রের চাকরি দিল এটা কেমন দেশ। এজন্যই কি আমরা দেশ স্বাধীন করেছিলাম।' এসময় তিনি নানা আক্ষেপ ও আবেগের কথা বলেন। ওইসময় তার তিন পুত্রও উপস্থিত ছিলেন। তারা বলেন, 'আমরা দুই ভাই জিয়াউল হক ও উজ্জল জমিতে কাজ করি। আর জাহাঙ্গীর নৌবাহিনীতে সিভিলে চাকরি করে। আমরা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার ছেলে হয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পাই না। আর অন্যরা সার্টিফিকেট চুরি করলেও চাকরি হয়।' কথা হয় মেছট গ্রামের বেশকিছু মানুষের সঙ্গে। তারা বলেন, 'আমরাও শুনেছি যে, সার্টিফিকেট চুরি করে সোনাতলার কুদ্দুসের তিন ছেলেকে চাকরি দিয়েছে। ওদিকে ওনারা লাখ লাখ টাকা বেতন তুলে রাজকীয় জীবনযাপন করছে। আর এদিকে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা আমাদের কুদ্দুস, মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এরই নাম বাংলাদেশ।' অনুসন্ধানে জানা গেছে- কুদ্দুসের তিন পুত্রের মধ্যে মিনার কারারক্ষী হিসেবে কর্মরত আছেন কাসিমপুর কারাগারে। শফিকুল ও মাসুদ পুলিশ সদস্য হিসেবে রাজারবাগে। তবে দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কারণে তারা বিষয়গুলো এরিয়ে যাচ্ছেন। কুদ্দুসের বাড়িতে গিয়ে এসব তথ্য জানতে চাইলে বলেন, 'এসব তথ্য নিতে হলে মন্ত্রণালয়ের অনুমতি লাগবে, আপনাদের কাছে আছে কি' অন্যদিকে কুদ্দুসের স্ত্রী বলেন, 'আমার স্বামী হার্টের রোগী। আপনারা এ বিষয় নিয়ে বেশি চাপাচাপি করলে আমার স্বামীর যদি কিছু হয় তাহলে আপনাদের ছাড়ব না।' উলেস্নখ্য, সোনাতলা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় দেখা যায়- ছাতিয়ানতলা নামের ওই গ্রামে কোনো মুক্তিযোদ্ধাই নেই। অর্থাৎ একটি গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা না থাকলেও কুদ্দুসসহ আরও কয়েকটি পরিবারের সদস্য ভুয়া সার্টিফিকেটে চাকরি করছে। নিয়োগের ক্ষেত্রে বিভিন্নভাবে যাচাই-বাছাইয়ের পরেই কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাই কেনো সঠিকভাবে হলো না কিংবা তদন্ত ছাড়াই কিভাবে নিয়োগ পেল তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। জানতে চাইলে সোনাতলা ইউএনও স্বীকৃতি প্রামাণিক বলেন, 'আমরা এখনো কোনো নির্দেশনা পাইনি। নির্দেশনা পেলে এসবের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'