শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১

জনবল সংকটে ধুঁকছে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স

এস.এম. দেলোয়ার হোসাইন, শিবচর (মাদারীপুর)
  ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
জনবল সংকটে ধুঁকছে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স

দেশের অন্যতম আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত ডিজিটাল উপজেলার দাবিদার মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক ও জনবল সংকটের কারণে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে।

দীর্ঘদিন ধরে গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসকের পদ, নার্সসহ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির জনবল সংকট থাকায় ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। ফলে ভোগান্তিতে পড়ছেন দায়িত্বরত চিকিৎসক এবং রোগীরা।

এতে উপজেলার দূর-দূরান্ত থেকে চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। সরকারি খরচে চিকিৎসাসেবা না পেয়ে বেসরকারি ক্লিনিকমুখী হচ্ছেন সাররণ মানুষ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা কমপক্ষে ৩ লাখ মানুষের একটি বড় অংশ চিকিৎসাসেবা প্রত্যাশা করেন শিবচর সদর এই হাসপাতালে। কিন্তু দীর্ঘদিন যাবত উপজেলার স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সর এই গুরত্বপূর্ণ হাসপাতালটিতে চলছে তীব্র তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির জনবল ও চিকিৎসক সংকট।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের চিকিৎসক শূন্য পদ হচ্ছে জুনিয়র কনসালটেন্ট কার্ডিওলজি, জুনিয়র কনসালটেন্ট সার্জারি, জুনিয়র কনসালটেন্ট ইএনটি (নাক-কান-গলা), জুনিয়র কনসালটেন্ট চক্ষু, মেডিকেল অফিসার (এনেসথেসিওলজি), মেডিকেল অফিসার (ইউনানী), প্যাথলজিস্ট, আবাসিক মেডিকেল অফিসার। এছাড়া ২ জন সিনিয়র নাসের্র পদও শূন্য রয়েছে।

চিকিৎসক সংকটের সঙ্গে রয়েছে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সংকট। পরিচ্ছন্নতাকর্মীর মঞ্জুরীকৃত পদ রয়েছে ৫টি, যার সবকটি শূন্য রয়েছে। নিরাপত্তা প্রহরীর ২টি পদই শূন্য, অফিস সহায়কের ৫টি পদের ৩টি পদই শূন্য। মালীর ২টি পদই শূন্য, ওয়ার্ড বয় পদের ৩টির মধ্যে ২টি পদই শূন্য, আয়া ২ পদের ২টিই শূন্য রয়েছে।

অন্যদিকে তৃতীয় শ্রেণির ৭টি পদে কোনো জনবলই নেই। ফিজিওথেরাপি, রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং, প্রধান সহকারী, ক্যাশিয়ার, প্রধান সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, গার্ডেনার এবং টিকিট ক্লার্ক পদ দীর্ঘদিন ধরেই শূন্য রয়েছে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে।

এতে চিকিৎসাসেবা না পেয়ে অনেকেই চলে যাচ্ছেন আশপাশের প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা। সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জরুরি বিভাগের জন্য ডেডিকেটেড বিল্ডিং না থাকায় সেবা প্রদান ব্যাহত হচ্ছে অনেকদিন ধরেই। এছাড়া কক্ষ সংকটে চিকিৎসকদের জন্য সঠিক কক্ষের কোনো বরাদ্দ না থাকায় এক কক্ষেই গাদাগাদি করে বসতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। ফলে বিভ্রান্তিতে পড়তে হচ্ছে রোগীদের।

চরজানাজাত এলাকার দবির হাওলাদার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে এসেছিলেন চোখের চিকিৎসা নিতে। তিনি যায়যায়দিনকে জানান, পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে ও গাড়িতে করে ৮-১০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে শিবচর সদর হাসপাতালে এসেই জানতে পারেন এখানে কোনো চক্ষু চিকিৎসক নেই।

তিনি আরও জানান, বেসরকারি পর্যায়ে কোনো ক্লিনিক বা হাসপাতালে চক্ষু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার মতো আর্থিক সামর্থ্য তার নেই। তাই চিকিৎসা না করেই বাধ্য হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।

স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. মো. ইব্রাহিম হোসেন বলেন, 'জনবল সংকটের কারণে আমরা খুবই বিপাকে আছি। যারা কর্মরত আছি, ব্যক্তিগতভাবে টাকা দিয়ে পরিচ্ছন্নতাকর্মী রাখতে হচ্ছে। এতগুলো পদ শূন্য থাকায় রোগীর সঠিক সেবা দেওয়াও ব্যাহত হয়। তারপরও আমরা চিকিৎসাসেবা দিতে সর্বাত্মক কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু কিছু কিছু পদে লোক না থাকায় চাইলেও সঠিক সেবা দেওয়া যায় না।'

এ বিষয়ে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফাতিমা মাহজাবিন যায়যায়দিনকে বলেন, হাসপাতালে চতুর্থ শ্রেণির শূন্য পদ রয়েছে ১৬টি। চতুর্থ শ্রেণির মোট ১৯টি পদে জনবল আছে মাত্র ৩টি পদে। অন্যদিকে তৃতীয় শ্রেণির মঞ্জুরীকৃত ৭টি পদই শূন্য। এছাড়া নতুন ১০০ শয্যার ভবনটির নির্মাণ কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ না হওয়ায় নানা রকম সমস্যা রয়েছে। জনবলের সংকট না থাকলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সেই সর্বোচ্চ মানের চিকিৎসাসেবা দেওয়া সম্ভব।

তিনি আরও বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার পত্র পাঠানো হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত শূন্য পদের অনুকূলে কোনো জনবল পাওয়া যায়নি। ডাক্তার ও জনবল সংকট নিয়োগের জন্য বারবার চিঠি দিয়ে যাচ্ছি। নিরসন হলে সাধারণ রোগীদের সেবার মান বাড়বে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে