বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতার আন্দোলনে যোগ দিয়ে পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হয়ে মৃতু্যর দুয়ার থেকে ফিরে আসা আমতলীর হাসিব এখন পঙ্গু। ডান হাত অচল হয়ে যাওয়ায় মেধাবী হাসিবসহ তার পুরো পরিবার এখন লেখাপড়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। হাসিব বরগুনার আমতলী উপজেলার আরপাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের পূর্ব চরকগাছিয়া গ্রামের আবুল বাশারের ছেলে। তিনি এ বছর ঢাকার তামিরুল মিলস্নাত কামিল মাদ্রাসা থেকে আলিম পরীক্ষা দিয়েছেন।
জানা গেছে, উপজেলার আরপাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের পূর্ব চরকগাছিয়া গ্রামের আবুল বাশার ও মাহমুদা দম্পতির বড় ছেলে মো. হাসিব। ছোট বোন হিরামনির বিয়ে হয়ে গেছে বছর দুয়েক আগে। হাসিব ঢাকার তামিরুল মিলস্নাত কামিল মাদ্রাসার ছাত্র। এবছর কামিল পরীক্ষা দিয়েছেন। এর আগে আমতলী বন্দর হোসাইনিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসা থেকে বিজ্ঞান শাখায় জিপিএ ৫ পেয়ে ২০২২ এ পাস করেন। কামিল পরীক্ষায়ও পিপিএ ৫ পাবেন বলে আশা করছেন হাসিব। হাসিবের স্বপ্ন ডাক্তার হওয়া। কিন্তু পুলিশের গুলিতে আহত হওয়ার পর ডান হাত অচল হয়ে যাওয়ায় তার স্বপ্ন আদৌ পুরণ হবে কিনা জানেন না হাসিব।
দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে হাসিব যোগ দেন আন্দোলনে। ১৮ জুলাই বিকেলে কয়েক হাজার ছাত্র উত্তরা বিএনএস সেন্টার থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। পুলিশ মারমুখী হয়ে সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে বৃষ্টির মতো গুলি ছুরতে থাকে। এসময় পুলিশের ছোড়া একটি গুলি এসে হাসিবের গলার শ্বাসনালীর ডানপাশে লাগে। গুলিটি গলা ভেদ করে ডান ঘাড়ের পেছনের মাংশপেশি ছিড়ে বের হয়ে যায়। মিছিলে অংশগ্রহণকারী ছাত্ররা এবং তার ক্লাসের বন্ধু হোসাইন আলম তাকে উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে নেওয়া হয় পঙ্গু হাসপাতালে। একদিন পর তার জ্ঞান ফেরে। ৪ দিন পর ছাড়পত্র পেয়ে বাড়ি ফেরেন। চিকিৎসায় গলার সামনের অংশ শুকালেও পিছনের ঘা এখনো রয়েছে। ঘাড়ের রগ ছিড়ে যাওয়ায় ডান হাতটি অচল হয়ে গেছে।
কান্না জড়িত কন্ঠে হাসিব বলেন, সে দিন আমরা আমাদের দাবি আদায়ের জন্য রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেছি। পুলিশ মিছিলে আমাদের উপর গুলি চালায়। পুলিশের ছোড়া একটি গুলি আমার গলার ডান পাশে লাগে। এরপর আমি আর কিছুই বলতে পারি না। গুলির আঘাতে আমার ডান ঘরের রগ ছিড়ে যাওয়ায় ডান হাত অচল হয়ে গেছে। রাতে ঘুমাতে পারি না, যন্ত্রণায় শুধু ছটফট করি। জানি না আমার হাত আদৌ ভালো হবে কিনা। যদি ভালো না হয় তাহলে স্বপ্ন ধুলিসাৎ হয়ে যাবে।
হাসিবের বাবা আবুল বাশার বলেন, চিকিৎসকরা বলেছেন হাসিবকে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা করাতে পারলে তার হাত ভালো হবে। তাই বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে অনুরোধ যাতে তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।