দূর-দূরান্ত থেকে যারা চাঁদপুরের তাজা ইলিশ খেতে চান, তাদের কাছে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে অনলাইনে ইলিশ ক্রয়। এতে করে এক দিকে তাজা ইলিশের স্বাদ নিতে পারছেন দেশের সব অঞ্চলের মানুষ, পাশাপাশি সৃষ্টি হচ্ছে অসংখ্য বেকার যুবক-যুবতীর কর্মসংস্থান।
তবে উদ্যোক্তারা বলছেন, অনলাইনে সক্রিয় প্রতারক চক্রের অপতৎপরতায় ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে সম্ভাবনাময় এই খাত। অনলাইনে কেনাকাটায় ক্রেতাদের আরও সচেতন হওয়ার আহবান আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর।
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার মুকিমাবাদ এলাকার কুয়েত প্রবাসীর স্ত্রী রেশমা আক্তার। মায়ের কাছে বাচ্চাদের বায়না ইলিশ খাওয়ার। সন্তানদের আবদার পূরণে বাজারবিমুখ রেশমার ভরসা অনলাইনে কেনাকাটা। হাতের মুঠোফোন ব্যবহার করে দরদাম নিশ্চিত করে অনলাইনে অর্ডার করেন ইলিশ মাছ। বাজারে না গিয়েও তাজা ইলিশ বাসায় পৌঁছে যাওয়ায় পরিবারের সদস্যদের আবদার পূরণ করতে পেরে খুশি তিনি।
রেশমা আক্তার বলেন, অনলাইনে কেনাকাটায় অনেক সুবিধা যদি বিশ্বস্ত মাধ্যম হয়। এতে করে ভোগান্তি ছাড়াই ঘরে চলে আসে পছন্দের পণ্য।
চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনার তাজা ইলিশ খেয়ে মাতোয়ারা হয় বাংলার মানুষ। ইলিশ কিনতে প্রতি মৌসুমে চাঁদপুরে আসেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ। আর যাদের আসার সুযোগ নেই, তাদের ভরসা হয়ে উঠেছে একদল তরুণ উদ্যোক্তা। তাদেরই একজন চাঁদপুর শহরের বাসিন্দা সজীব চন্দ্র দাস। ২০১৪ সালে চাঁদপুর মৎস্য ডিপেস্নামা ইনস্টিটিউট থেকে পড়াশুনো শেষ করে স্থায়ী কোন চাকরি না পেয়ে ২০২০ সালে যুক্ত হন অনলাইনে ইলিশ বিক্রি কার্যক্রমে। নিজের ফেসবুক একাউন্টে পেইজ খুলে শুরু করেন ইলিশ বিক্রি। এতে অল্প সময়ে ধরা দেয় সাফল্য। বর্তমানে মৌসুমে প্রায় কোটি টাকার ইলিশ বিক্রি করেন তিনি।
সজীব চন্দ্র দাস বলেন, স্থায়ী চাকরি না পেলেও দমে যাননি। অনলাইনে এখন অনেক ক্রেতা রয়েছে। তাদের প্রত্যাশিত তাজা ইলিশ দিয়ে থাকেন। কিন্তু অনেক প্রতারক রয়েছে, তারা কম দামে মাছ দেওয়ার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে, কিন্তু কোন মাছ দেয় না। এদের জন্য অনলাইনের আসল বিক্রেতারা বিপাকে পড়েন।
সজীব দাসের মত অনকে তরুণ তরুণী অনলাইনে ইলিশ বিক্রির মাধ্যমে নিজেদের সফল উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছেন। এই উদ্যোগে পিছিয়ে নেই বিভিন্ন কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও। তবে অনলাইনে ইলিশ কিনতে গিয়ে চটকদার বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পড়ে প্রতারণার শিকার হচ্ছে অনেক ক্রেতা। লোভনীয় অফারের টোপ গিয়ে সর্বশান্ত হচ্ছেন অনেকেই।
চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুল বারী মানিক জমাদার বলেন, গত বেশ কয়েক বছর ধরে অনলাইনে ইলিশ বিক্রি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছে উঠেছে। এতে করে বেকার মানুষের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি ভালো মার্কেটিং হচ্ছে ইলিশের। তবে একই সঙ্গে ইলিশ বিক্রির নামে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি সঙ্ঘবদ্ধ চক্র। সম্ভাবনাময় এই মাধ্যমের উদ্যোক্তাদের টিকিয়ে রাখতে প্রতারক চক্রকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই আমরা।
চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (রিভার) শ্রীমা চাকমা বলেন, 'প্রতারক চক্রের সদস্যদের আইনের আওতায় আনতে কাজ করছে পুলিশ। আমরা মৌখিকভাবে অভিযোগ পেলেও কেউ লিখিত অভিযোগ করতে আগ্রহী হয় না। তবুও আমরা প্রতারনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি। পাশাপাশি অনলাইনে কেনাকাটায় ক্রেতাদের আরও সচেতন হওয়ার আহবান জানাই।'
বাজারে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে কেনাকাটার পাশাপাশি ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে অনলাইনে ইলিশ বিক্রি। নতুন এই মাধ্যমে ইলিশ বিক্রির জন্য চাঁদপুরে নিবন্ধিত রয়েছে উদ্যোক্তাদের ৪১টি ফেইসবুক পেইজ। যেখান থেকে বছরে বিক্রি হয় ৪-৫ কোটি টাকার ইলিশ মাছ। প্রতারণারোধ করা গেলে অনলাইন মাধ্যম আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন উদ্যোক্তারা।