হত্যা-আত্মহত্যা ও অগ্নিদগ্ধে ছয় জেলায় ৬ জনের মৃতু্য
প্রকাশ | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
স্বদেশ ডেস্ক
হত্যা-আত্মহত্যা ও অগ্নিদগ্ধে ছয় জেলায় ৬ জনের মৃতু্য হয়েছে। টাঙ্গাইলের ঘাটাইল, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ, মাদারীপুরের কালকিনি, মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া, শেরপুরের শ্রীবরদী ও কক্সবাজারের টেকনাফে এসব মৃতু্যর ঘটনা ঘটে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত-
ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি জানান, টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার সাগরদিঘী ইউনিয়নের কামালপুর গ্রামের লক্ষ্ণণের বাঁধ এলাকার গজারি বন থেকে এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তার পরিচয় জানা যায়নি। অজ্ঞাত বৃদ্ধ পুরুষের বয়স আনুমানিক ৫০ বছর। গত বুধবার রাতে লাশটি উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ জানায়, রাতে রাস্তার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় লাশ নিয়ে শিয়ালের টানাটানি দেখেন এক ব্যক্তি। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে পুলিশে খবর দেন তারা। রাত ৯টায় সাগরদিঘী ইউনিয়নের কামালপুর গ্রামের গজারি বনের একটি জঙ্গল থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুল ইসলাম জানান, লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদন আসলে মৃতু্যর কারণ জানা যাবে।
গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি জানান, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে পুকুরের পানিতে ডুবিয়ে সাত বছরের শিশুকন্যা রাফিয়া খাতুনকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে সৎমা ইশাত বেগমের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় পুলিশ তাকে আটক করেছে।
গত বুধবার সন্ধ্যায় পুলিশ ইশাত বেগমকে আটক করে। হত্যার শিকার শিশু রাফিয়া দরবস্ত ইউনিয়নের দরবস্ত কানিপাড়া গ্রামের রানার কন্যা।
স্থানীয়রা জানায়, বিকালে গোসল করার কথা বলে রাফিয়াকে সৎমা ইশাত বাড়ির পাশের পুকুরে নিয়ে যান। গোসল করানোর সময় হঠাৎ ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি রাফিয়াকে নিজের দুই পায়ের মাঝে রেখে পুকুরের পানিতে ডুবিয়ে ধরে থাকেন। এ সময় পুকুর পাড়ে থাকা লোকজন বিষয়টি দেখে ফেলায় শিশুটিকে উদ্ধার করে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যায়। চিকিৎসক তাকে দেখে মৃত ঘোষণা করেন। এদিকে শিশুটি হত্যার অভিযোগে বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী সৎমাসহ বাড়িটি ঘেরাও করে রাখে। পুলিশ খবর পেয়ে সৎমা ইশাত বেগমকে আটক করে নিয়ে যায়।
গোবিন্দগঞ্জ থানার ওসি আ ফ ম আছাদুজ্জামান আসাদ জানান, গ্রামবাসী ও পরিবারে অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইশাত বেগমকে আটক করা হয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছেন।
কালকিনি (মাদারীপুর) প্রতিনিধি জানান, মাদারীপুরের কালকিনিতে একটি পরিত্যক্ত ডোবার মধ্যে থেকে এক অজ্ঞাত যুবকের ভাসমান লাশ পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। তবে নিহতের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
জানা গেছে, কালকিনি পৌর এলাকার পুয়ালী-মাদারীপুর গ্রামের ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পাশে একটি ডোবার মধ্যে লুঙ্গি পরিহিত এক যুবকের লাশ দেখতে পায় স্থানীয়রা। তার বয়স অনুমান ২৫ বছর। পরে পুলিশ খবর পেয়ে লাশ ডোবা থেকে উদ্ধার করে। স্থানীয়দের ধারণা, কে বা কারা ওই অজ্ঞাত যুবককে দুই-তিন দিন আগে হত্যা করে ডোবার মধ্যে ফেলে রেখে গেছে।
কালকিনি থানার ওসি হুমায়ুন কবির বলেন, ময়নাতদন্তের জন্য মাদারীপুর মর্গে লাশ পাঠানো হয়েছে এবং পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, স্বামীর দেওয়া আগুনে দগ্ধ মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার শারমিন আক্তার ও তার চাচাতো ভাই রুবেল মিয়া মারা যান। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জাতীয় বার্ন ইউনিটে বুধবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃতু্য হয়। একই ঘটনায় দগ্ধ শারমিনের চাচি (শাশুড়ি) বৃহস্পতিবার দুপুরে মারা গেলেন। গত ১৩ সেপ্টেম্বর সকালে উপজেলার পশ্চিম গওলা গ্রামে শারমিনের শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন স্বামী হাসান আলী। তাকে বাঁচাতে গিয়ে দগ্ধ হন রুবেল ও শারমিনের চাচি শিরীন আক্তার।
জানা যায়, ১০ বছর আগে পশ্চিম গওলা গ্রামের আতাউর রহমানের মেয়ে শারমিন আক্তারের সঙ্গে ঢাকার ধামরাই উপজেলার রাজাপুর গ্রামের হাসান আলীর বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই তাদের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকত। শারমিনকে তার স্বামী প্রায়ই অমানবিক নির্যাতন করতেন বলে স্বজনরা জানান।
সাটুরিয়া ইউপি চেয়াররম্যান আনোয়ার হোসেন পিন্টু বলেন, গত ১২ সেপ্টেম্বর শারমিন বাবার বাড়ি এসে স্বামী হাসান আলীকে তালাক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এ খবর শুনে হাসান শুক্রবার শ্বশুরবাড়ি আসেন। স্বামী আসার খবর শুনে শারমিন তার চাচার বাড়িতে আশ্রয় নেন। হাসান চাচা শ্বশুরবাড়ির বাথরুমের উপর দিয়ে রুমের ফলস সিলিং ভেঙে রুমে প্রবেশ করেন। পরে তিনি পেট্র্রোল দিয়ে শারমিনের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেন। শারমিনকে বাঁচাতে এসে চাচি শিরীন ও চাচাতো ভাই রুবেলের শরীরেও আগুন লেগে যায়। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢামেকের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়।
সাটুরিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মানবেন্দ্র বালো বলেন, স্বামীর নামে মামলা হলে ঘটনার রাতেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শ্রীবরদী (শেরপুর) প্রতিনিধি জানান, শেরপুরের শ্রীবরদীতে ফেরদৌস মিয়া (৪০) নামে এক কৃষক বসত ঘরের ধরনার সঙ্গে গলায় রশি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। নিহত ফেরদৌস উপজেলার খোশালপুর উত্তর পুটল গ্রামের সুরুজ মিয়ার ছেলে। ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার দিবাগত রাতে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করেছে।
জানা গেছে, বুধবার সকালে ফেরদৌসের স্ত্রী সেলিনা বেগম লাকড়ি আনার কথা বলে বাবার বাড়ি যান। বৃহস্পতিবার সকালে এসে দেখেন ঘরের দরজা বন্ধ। পরে জানালা খুলে ঘরের ভেতরে গিয়ে দেখেন ফেরদৌস মিয়া গলায় রশি পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
থানার ওসি কাইম খান সিদ্দিকী জানান, লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে এবং একটি ইউডি মামলা হয়েছে।
টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি জানান, কক্সবাজার টেকনাফের গহীন পাহাড়ে গাছের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় রফিক নামের এক যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড স্থলবন্দর সংলগ্ন কেরুনতলী এলাকা থেকে মৃতদেহটি উদ্ধার করা হয় বলে জানান, টেকনাফ থানার নবাগত ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন। নিহিত যুবক রফিক ওই এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে।
স্থানীয়দের বরাতে ওসি গিয়াস উদ্দিন পুলিশ জানান- ধারণা করা হচ্ছে দাম্পত্য কলহের জেরে ওই যুবক আত্মহত্যা করছেন। তবে ময়নাতদন্তের পর ঘটনার আসল রহস্য জানা যাবে।