একই কায়দায় ঘায়েল করে সুইট-সুজার সন্ত্রাসী বাহিনী
প্রকাশ | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
ইমরান হোসাইন লিখন, গাইবান্ধা থেকে ফিরে
নিজের গন্ডির মধ্যে কয়েকটি কেন্দ্র দখলের মাধ্যমেই বারবার নির্বাচিত হয় ইউপি চেয়ারম্যান। গোবিন্দি, দক্ষিণ শাথালিয়া, উত্তর শাথালিয়া, হাসিল কান্দিসহ আরও কয়েকটি কেন্দ্র থাকে তার দখলে। এর মধ্যে গোবিন্দি কেন্দ্র সম্পূর্ণই তার নিয়ন্ত্রণে। ভোটের আগের দিন সকাল থেকে কেন্দ্রগুলোয় তার নিজস্ব পেটোয়া বাহিনী ও সুবিধাভোগীরা অবস্থান নেন। পরে ভোটের দিন একচেটিয়া ভোটগ্রহণ করা হয়। এ ছাড়া এই কয় গ্রামের মানুষের মধ্যে দেওয়া হয় নিজের ও একটি বৃহৎ এনজিওর সব সুযোগ-সুবিধা। এসবের পরও যদি কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বলে কিংবা অবস্থান নেয় তাহলেই নেমে আসবে অমানুষিক অত্যাচার। তাই ভয়ে কেউ মুখ খোলে না।
সরেজমিন উঠে আসে এসব তথ্য। কচুয়া এলাকায় দেখা হয় শাহীন আকবর দোলন নামে এক ভুক্তভোগীর সঙ্গে। দোলন বলেন, '২০১৬ সালের ১০ ডিসেম্বর ভরতখালী বাজারের নতুন কুঁড়ি বিদ্যালয়ের সামনে মোশাররফ হোসেন সুইট চেয়ারম্যানের লোকজন অতর্কিতভাবে হামলা চালিয়ে আমার দুই পা ভেঙে দেয়। ওই সময় মামলা নেয়নি পুলিশ। যৌথবাহিনীর অভিযানে সুইট চেয়ারম্যানসহ গ্রেপ্তারদের মধ্যে যে দুজনের মৃতু্য হয়েছে তারাই আমার পা ভেঙেছিল।'
হামলার কারণ উলেস্নখ করে তিনি বলেন, '২০০৬ সালের ১৩ মে ভরতখালী চৌরাস্তায় দুদু চেয়ারম্যানের ছোটভাই জাদু মিয়া হত্যার রাজসাক্ষী ছিলাম আমি। পরে নিকোসিয়েট করার জন্য আমাকে মিথ্যা সাক্ষী দিতে চাপ দিয়ে ব্যর্থ হওয়ায় তারা হামলা চালিয়েছিল।'
তাদের হামলা চালানোর কৌশল একই রকম ও একই স্থানে। জাতীয় নির্বাচনের দিন বিকালে ওই একই স্থানেই একই কায়দায় হামলা চালিয়ে পঙ্গু করে দেওয়া হয় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবিরকে।
জাহাঙ্গীর কবির বলেন, '৭ জানুয়ারি ভোট শেষে ভরতখালীর গটিয়া থেকে মাকে নিয়ে সাঘাটা যাচ্ছিলাম। ভরতখালী নতুনকুঁড়ি বিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছালে সুইট চেয়ারম্যানের লোকজন হামলা চালায়। আমাকে বাঁচাতে গিয়ে মাকে আঘাত সহ্য করতে হয়েছে। আমার দুই পায়ের হাড় চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেছে।
উলেস্নখ্য, জিরো থেকে হিরো বনে যাওয়া মোশাররফ হোসেন সুইট চেয়ারম্যানের পেছনের ইতিহাসটা ভিন্ন রকমের। স্থানীয়রা বলেন, গাইবান্ধা অঞ্চলের বৃহৎ একটি এনজিও অসহায় মানুষকে সহযোগিতা করার নামে বিদেশ থেকে বিভিন্ন ফান্ড এনে অন্য কোনো অঞ্চল কিংবা ইউনিয়নে নামমাত্র বিতরণ করে। আর ৯০ শতাংশই সুইট চেয়ারম্যানের এলাকায় বিতরণ করে থাকে। এ ছাড়া এ এলাকায় রয়েছে এনজিওটির অসংখ্য কর্মী। স্থানীয়দের দাবি এই জিম্মিদশা থেকে মুক্তি নিয়ে সাধারণ জীবনযাপন করতে চায় এ অঞ্চলের মানুষ।