অতিবৃষ্টি ও প্রবল জোয়ারে বেতনা নদীর ভেঙে যাওয়া বেঁড়িবাধ গত ৪ দিনেও মেরামত করতে পারেনি স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। ফলে এখনো লোকালয়ে পানি প্রবেশ করায় সাতক্ষীরার অর্ধশত গ্রাম পস্নাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ। ভেসে গেছে ৫ হাজারের অধিক মৎস্য ঘের। পানিতে তলিয়ে আছে হাজার হাজার একর ফসলের ক্ষেত ও ছোট বড় পুকুর। রাস্তা-ঘাট তলিয়ে থাকায় জনদূর্ভোগ বৃদ্বি পেয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে মৎস্য চাষিদের।
জেলা মৎস বিভাগের তথ্য মতে ৬০০ কোটি টাকার অধিক মাছ ভেসে গেছে। ঘের ও হ্যাসারির অবকাঠামো ক্ষতি হয়েছে আরও ৩ থেকে ৪ কোটি টাকা।
এদিকে বুধবার সকালে সাতক্ষীরা সদর ইউএনও শোয়াইব হাসান ও সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম বিনেরপোতা এলাকার বেতনা নদীর ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় কাঠের বলি পুঁতে ও বালির বস্তা ফেলে বাঁধ সংস্কারের কাজ শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে কাজে ধীর গতি থাকায় এখনও বাঁধটি পুরোপুরি বেঁধে ফেলা সম্ভব হয়নি।
অন্যদিকে পানি নিস্কাশনের জন্য পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সাতক্ষীরা পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডের অনন্ত ১০ গ্রামে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এছাড়া বেতনা নদীর বিনেরপোতার ভাঙন কবলিত এলাকা দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করায় তালা উপজেলা ও সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চাল পস্নাবিত হয়ে এলাকাবাসী পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। রাস্তা-ঘাট, আঙ্গিনাসহ ঘর-বাড়িতে পানি উঠে যাওয়ায় চরম দূর্ভোগে পড়েছেন ভুক্তভোগীরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গত শুক্রবার থেকে টানা চার দিনের ভারি বর্ষন ও গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে সাতক্ষীরা পৌরসভার মধুমলস্নারডাঙ্গী, কামাননগর, পুরাতন সাতক্ষীরা, রাজারবাগান, বদ্দিপুর কলোনি, ঘুড্ডিরডাঙি, রসুলপুর, পলাশপোল, ইটাগাছা,কুখরালিসহ শহরের অধিকাংশ এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। কলারোয় উপজেলার বিভিন্ন বিল পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া বেতনা নদীর পানি বিনোরপোতা এলাকার প্রায় ৫০ ফুট বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে প্রবেশ করে। এতে নিম্নাঞ্চল পস্নাবিত হয়ে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। অনেকেই বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। ফসলের মাঠ ও পুকুর পানিতে একাকার হয়ে গেছে।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আনিসুর রহমান জানান, জেলা মৎস্য বিভাগের তথ্য মতে সাতক্ষীরায় ৬৫ হাজার মৎস্য ঘের ও ৫৬ হাজার পুকুর রয়েছে। অতিবৃষ্টিতে ও বেতনা নদীর বাঁধ ভেঙে ৫ হাজারের অধিক মাছের ঘের ভেসে গেছে। ক্ষতি হয়েছে ৬০০ কোটি টাকার উপরে। এছাড়া ঘেরের অবকাঠামো ও হ্যাচারির ক্ষতি হয়েছে আরও তিন থেকে ৪ কোটি টাকা। এ মূহুর্তে সরকার যদি ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য চাষিদের সুদমুক্ত ঋণ ও প্রনোদনা দেওয়ার ব্যবস্থা করে তাহলে সাতক্ষীরার মৎস্যখাত আবারও ঘুরে দাঁড়াবে।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম জানান, ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। ভেঙে যাওয়া বাঁধ মেরামতের কাজ চলছে। আগামি দুই এক দিনের মধ্যে সংস্কার হয়ে যাবে।