অভয়নগরে টানা বৃষ্টিতে হাসপাতাল চত্বর জলাবদ্ধ

ডুমুরিয়ায় ভারীবর্ষণে মৎস্য-সবজির ক্ষতি

প্রকাশ | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

ডুমুরিয়া (খুলনা) প্রতিনিধি
খুলনার ডুমুরিয়ায় শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া চার দিনের ভারীবর্ষণে চারদিকে পস্নাবিত হয়েছে। এতে রাস্তাঘাট, মৎস্যঘেরসহ শাকসবজি ও বসতবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। দেয়াল চাপায় সাড়ে চার বছরের এক শিশুর মৃতু্যর খবর পাওয়া গেছে। জানা যায়, চার দিনের একনাগাড়ে বৃষ্টির সাথে বয়ে চলা ঝড়োহাওয়ায় ডুমুরিয়া এলাকায় প্রায় অধিকাংশ মাছের ঘের ও ফসলি জমি তলিয়ে একাকার হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনেক কাঁচা বসতবাড়ির। শনিবার ধামালিয়া ইউনিয়নে টোলনা গ্রামে বসতঘরের দেয়াল চাপা পড়ে আমিরুল বিশ্বাসের সাড়ে চার বছরের ছেলে ইছানুর বিশ্বাস মারা গেছে। এদিকে পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা না থাকার কারণে ক্রমান্বয়ে পস্নাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। ঘেরের বাঁধ তলিয়ে যাওয়ার কারণে সবজি ক্ষেতের অপূরনীয় ক্ষতি হয়েছে বলে কৃষকরা জানিয়েছেন। গুটুদিয়ার কৃষক শেখ আব্দুর রশিদ জানান, তার দুই বিঘা জমির মাছের ঘেরের বেড়ির উপর হাতখানেক পানি। মাছ তো ভেসে গেছে, এখন সবজি ক্ষেতও নষ্ট হচ্ছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইনসাদ ইবনে আমিন জানান, টানা বৃষ্টিতে গত রোববার পর্যন্ত ডুমুরিয়া এলাকায় দুই কোটি টাকার বেশি সবজি ও রোপা ধানের ক্ষতি হয়েছে। আট হেক্টর জমির রোপা আমন ধান এবং ১৫ হেক্টর জমির তরমুজসহ শাকসবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়। তবে ক্ষতির পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি জানিয়েছেন। সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক জানান, ১২ হাজার ৫৩০টি পুকুর ও ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, তিন হাজার ৫৬০ মে. টন সাদা মাছ, চার হাজার ৬৭০ মে. টন চিংড়ি এবং কাঁকড়া ভেসে গেছে ৭.৫ মে. টন। এসবের আনুমানিক মূল্য ধরা হয়েছে ১০০ কোটি টাকার বেশি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আল-আমিন জানান, ভারী বৃষ্টিতে উপজেলা ক্যাম্পসসহ অধিকাংশ এলাকা পস্নাবিত হয়ে পড়েছে। আমরা দ্রম্নত পানি নিষ্কাশনের লক্ষ্যে কাজ করছি। অভয়নগর (যশোর) প্রতিনিধি জানান, তিন দিনের টানা বৃষ্টির কারণে যশোরের অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স চত্বরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। জমে থাকা পানি থেকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। হাঁটু পানির মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে জরুরি বিভাগসহ সব ভবনে। চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন হাসপাতালের চিকিৎসক-কর্মচারী, রোগীসহ সাধারণ জনগণ। জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান করতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান এলাকাবাসীর। হাসপাতালের প্রবেশ পথ নিচু হওয়ার কারণে এবং পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা সঠিক না থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. আলীমুর রাজিব। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালের প্রবেশ পথসহ সর্বত্র হাঁটু পানি। এছাড়া জরুরি বিভাগসহ অন্যান্য ভবনের সামনে একই অবস্থা। চারদিকে পানি আর পানি। চরম ভোগান্তির মধ্যে যাতায়াত করছেন চিকিৎসক, রোগীসহ তাদের স্বজনরা। এ সময় উপজেলার বুইকারা গ্রামের আলি হোসেনের স্ত্রী রোকেয়া বেগমের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, '২ বছরের মেয়েকে নিয়ে জরুরি বিভাগে গিয়েছিলাম। অসুস্থ মেয়েকে কোলে নিয়ে হাঁটু পানির মধ্যদিয়ে আসা-যাওয়া করতে হয়েছে। হাসপাতালের ভেতরে জলাবদ্ধতার বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক।' স্থানীয় ওষুধ ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীর অভিযোগ, টানা বৃষ্টিপাত হলেই সরকারি হাসপাতালজুড়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। অথচ কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোনো প্রকার পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে নওয়াপাড়া পৌরসভা ও উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. আলীমুর রাজিব বলেন, হাসপাতাল সংলগ্ন আবাসিক এলাকা ও বিভিন্ন মার্কেট উঁচু জমিতে হওয়ায় বৃষ্টির পানি সরাসরি হাসপাতাল চত্বরে ঢুকে পড়ে। দীর্ঘদিন ধরে জলাবদ্ধতার সমস্যা সমাধানে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। হাসপাতালের প্রবেশ পথ সংস্কার করে কিছুটা উঁচু করাও হয়েছে। তারপরও টানা বৃষ্টিপাত হলে একই অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে। স্থায়ী সমাধানের বিষয়ে তিনি বলেন, ভেতরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভালো থাকলেও পানি নিষ্কাশনের জন্য পৌরসভার ড্রেন প্রয়োজন হয়। সে ক্ষেত্রে পৌরসভার ড্রেনের গভীরতা থেকে হাসপাতালের ড্রেনের গভীরতা উঁচু করতে হবে। তা হলে পানি দ্রম্নত নিষ্কাশন হবে। জলাবদ্ধতার ভোগান্তি থেকে সবার পরিত্রাণ মিলবে।