কুমিলস্নায় রোহিঙ্গাদের ভুয়া জন্ম নিবন্ধন

কারাগারে থাকা নিবন্ধন সহকারীকে মুক্ত করতে 'সক্রিয়' সংঘবদ্ধ চক্র

প্রকাশ | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

স্টাফ রিপোর্টার, কুমিলস্না
কুমিলস্নায় পাসপোর্ট অফিস ঘিরে রোহিঙ্গাদের ভুয়া জন্ম নিবন্ধন তৈরির চক্র আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ওই চক্রের একজন জেলার মুরাদনগর উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদের নিবন্ধন সহকারী (সচিব) ইসমাইল হোসেন। জালিয়াতি করে অন্যের নামের স্থলে রোহিঙ্গার নাম যুক্ত করে গত ২০ জুন জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার হন। ইসমাইল জেলার আদর্শ উপজেলার ২নং উত্তর দুর্গাপুর ইউনিয়নের গুনানন্দি গ্রামের বাচ্চু মিয়ার ছেলে। এদিকে এ মামলায় গ্রেপ্তার অন্য আসামিদের স্বীকারোক্তির পরও চক্রটি তাকে কারাগার থেকে মুক্ত করতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে জানা গেছে। আজ বুধবার আদালতে এ মামলার শুনানির দিন ধার্য করা আছে। মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ১৫ ফেব্রম্নয়ারি কুমিলস্না আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে মুরাদনগর উপজেলার সদর ইউনিয়নের ঘোড়াশাল গ্রামের ভুয়া পরিচয়ে জন্ম নিবন্ধন বানিয়ে পাসপোর্ট করতে এসে ইয়াছির (১৯) নামের এক রোহিঙ্গা যুবক কর্মকর্তাদের হাতে আটক হন। তিনি পাসপোর্ট অফিস সংলগ্ন মদিনা ট্রাভেলসের হাসান মাহমুদ ও মোশাররফ নামে ২ দালালের কাছে পাসপোর্ট করার চুক্তি করেন। পরে হাসান ও মোশাররফ কুমিলস্নার মুরাদনগর উপজেলার পশ্চিম ঘোড়াশাল গ্রামের ভুয়া ঠিকানায় রোহিঙ্গা যুবক ইয়াছিরের কাগজপত্র তৈরি করে দেন। ওই ঘটনায় কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেন পাসপোর্ট অফিসের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর বেলায়েত হোসেন। পরে জালিয়াতিতে জড়িত ফয়সাল, মোশারফ, নাসির উলস্নাহ ও শরীফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। আসামিদের স্বীকারোক্তির পর গত ২০ জুন গ্রেপ্তার হন মুরাদনগর সদর ইউনিয়নের নিবন্ধন সহকারী ইসমাইল হোসেন। অভিযোগ রয়েছে রোহিঙ্গা যুবক ইয়াছিরের ভুয়া জন্ম নিবন্ধন মুরানগরের সদর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে দেওয়া হয়। কিন্তু ঢাকার রেজিস্টার কার্যালয় থেকে নিবন্ধনের কারিগরি প্রতিবেদন মুরাদনগর সদর ইউনিয়নে না এনে পাশের পাহাড়পুর ইউনিয়নের প্রতিবেদন আনা হয়। এতে দায় চাপিয়ে পাহাড়পুর ইউনিয়নের নিবন্ধন সহকারী আনিছুর রহমানকে গত ২১ আগস্ট সাময়িক বরখাস্ত করে জেলা প্রশাসন। গত ১২ সেপ্টেম্বর তিনি কুমিলস্না জেলা প্রশাসক বরাবরে বিষয়টির পুনরায় সুষ্ঠু তদন্তের দাবি করে লিখিত অভিযোগ করেন। আনিছুর বলেন, আদালতে জবানবন্দিতে আসামিরা সদর ইউনিয়ন থেকে জালিয়াতির করে জন্ম সনদের কথা বললেও এখন দায় চাপানো হচ্ছে তার ওপর। কারণ আসল জন্ম নিবন্ধনটি ছিল পাহাড়পুর ইউনিয়নের, যা জালিয়াতি করেছে সদর ইউনিয়ন পরিষদ। গত ৬ ফেব্রম্নয়ারি ইসু্যকৃত জন্ম নিবন্ধনের প্রিন্ট কপিতে স্বাক্ষর করেছেন সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাজী তুফরিজ এটন ও নিবন্ধন সহকারী (সচিব) ইসমাইল হোসেন। এর আগে গ্রেপ্তার ইয়াছিরও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ভুয়া জন্ম নিবন্ধন ইসমাইলের কাছে নিয়েছেন বলে জানান। মুরাদনগর সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাজী তুফরিজ এটন বলেন, পুরো বিষয়টি ডিবি পুলিশ তদন্ত করছে। জালিয়াতি কোথায় থেকে হয়েছে তা লোকানোর সুযোগ নেই। জন্ম নিবন্ধনের প্রিন্ট কপিতে তার স্বাক্ষরটি স্ক্যান করা বলে তিনি দাবি করেন। মঙ্গলবার কুমিলস্না জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রিপন দাস বলেন, স্থানীয়ভাবে তদন্ত ও গ্রেপ্তার আসামিদের জবানবন্দির পর ইসমাইল হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ভুয়া জন্ম নিবন্ধনের বিষয়ে বেশ কিছু তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ হয়েছে। তদন্ত শেষে শিগগিরই আদালতে চার্জশিট দেওয়া হবে।